সফল ফ্রিল্যান্সার হওয়ার উপায়!
জিএস নিউজ ডেস্ক:>>>
উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য ফ্রিল্যান্সিং এখন বহুল আলোচিত একটি বিষয়। এরকম মানুষের সংখ্যা দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে যারা ফ্রিল্যান্সিংকে তাদের জীবিকা হিসেবে নিচ্ছেন। প্রতিযোগিতাও বেড়েই চলেছে আপওয়ার্ক, ফ্রিল্যান্সার ডটকম, ফাইভার প্রভৃতি মার্কেটপ্লেসগুলোতে। বাংলাদেশেও গড়ে উঠেছে স্থানীয় মার্কেটপ্লেস বিল্যান্সার। এ পর্যায়ে এখানে সফলতা লাভ করতে আপনাকে অবশ্যই অন্যদের থেকে নিজেকে আলাদাভাবে উপস্থাপন করতে হবে। কিন্তু কীভাবে? আজ আমরা সফল ফ্রিল্যান্সার হওয়ার পাঁচটি মুল পয়েন্ট আলোচনা করব।
১। নিজের সম্পর্কে জানা
আউটসোর্সিং ইন্ডাস্ট্রি বা ফ্রিল্যান্সিংয়ে মূলত তিন ধরণের মানুষ দেখা যায়। প্রথম প্রকারের মানুষ ফুল টাইম ফ্রিল্যান্সিং করে। এরা মূলত পেশাদার যারা কিনা ডেস্ক জব পছন্দ করেন না। দ্বিতীয় প্রকারের মানুষ পার্টটাইম ফ্রিল্যান্সিং করে থাকেন। এরা নির্দিষ্ট পরিমাণ কিন্তু নিয়মিত কাজ করে থাকেন। আর তৃতীয় প্রকারের মানুষ সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগেন। এনারা চিন্তা করেন কোন ধরনের কাজ করা ঠিক হবে, ফুলটাইম নাকি পার্টটাইম কাজ করবেন, এমনকি আদৌ ফ্রিল্যান্সিং করবেন কিনা এরকম দ্বিধায়ও ভুগে থাকেন। এধরণের মানুষ আসলেই বিপদজনক অবস্থায় আছেন।
আপনাকে এই তৃতীয় প্রকার দল থেকে বের হয়ে আসতে হলে প্রথমে নিজের যোগ্যতা, যে বিষয় আপনার আগ্রহ আছে তা, আপনার দুর্বলতা, আপনার নিজের পারদর্শিতা সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখতে হবে। আত্মবিশ্বাসী হতে হবে এবং লক্ষ্য ঠিক করতে হবে। মূলত দৃঢ় সংকল্প নিয়ে শুরু করলে বৈধ কোনো পেশাই মানুষের পক্ষে অসম্ভব নয়।
২। অপশন হাতে রাখা
আপনি হয়তো এমন অনেককেই পাবেন যারা একটি মাত্র লক্ষ্যের পিছনে আছেন এবং সেটিকে তারা অর্জন করবেনই বলে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। ফ্রিল্যান্সিংয়ে এসে আপনি যদি এমন ভেবে থাকেন তবে আপনারও আরও বেশ কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে। ক্যারিয়ার কোন ‘মিশন’ না বরং এটি ‘ভিশন’এর থেকেও বড়। আশা করি ‘মিশন’ ও ‘ভিশন’ এর পার্থক্য আপনি বোঝেন। মিশন হল স্বল্পমেয়াদি আর ভিশন হল মিশন এর থেকে দীর্ঘমেয়াদি। যাইহোক, সবসময়ই ব্যাকআপ অপশন রাখা উচিৎ কেননা যেকোন একটি মার্কেটপ্লেস অথবা একজনমাত্র ক্লায়েন্টের উপর নির্ভর করা উচিৎ নয়। হয়তোবা আপনার বর্তমান ক্লাইন্ট খুব ভাল কিন্তু মনে রাখবেন তিনি চিরদিন থাকবেন না।
আমার অভিজ্ঞতায় এমন লোকও দেখেছি যিনি কিনা শুধুমাত্র কাজের পারিশ্রমিক বারানোর কারণে তার ক্লাইন্ট হারিয়েছেন। আসলে প্রতিযোগিতাপূর্ণ স্থানে রিস্ক ফ্যাক্টর খুব বেশি। এখানে অনেক কিছুই হতে পারে যেমন আপনার প্রজেক্টের মেয়াদ শেষ, মার্কেটপ্লেস বন্ধ হতে পারে, আপনার একাউন্টে সমস্যা হতে পারে প্রভৃতি। আর এ কারণেই একের অধিক মার্কেটপ্লেস এর সাথে সংযুক্ত থাকুন, ক্লাইন্ট বাড়ান, নেটওয়ার্ক তৈরি করুন, নিজের পোর্টফলিও প্রোফাইল তৈরি করুন।
৩। সময়ের সঠিক ব্যবহার
ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রে সময় অতি মূল্যবান একটি সম্পদ। আপনার সময়কে সাজিয়ে নিন যাতে করে এর সঠিক ব্যবহার সম্ভব হয়। টাইম ট্র্যাকার অ্যাপ ব্যবহার করুন। নোট নেয়ার জন্য এভারনোট, গুগল কিপ এর মত টুলস গুলোর সাহায্য নিন। সময় মত ক্লাইন্ট এর কাজ শেষ করুন। সময়ানুবর্তিতা এবং দায়িত্বশীলতা ফ্রিল্যান্সিং এর ক্ষেত্রে খুবই জরুরি।
৪। ঠিক কাজটি নির্বাচন করা
ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে অনেক অসৎ লোকও রয়েছে। এজন্য কাজ নেয়ার আগে ক্লাইন্ট নির্ভরযোগ্য কিনা তা ভালভাবে যাচাই করে নিন। পেমেন্ট মেথড ভেরিফাইড কিনা, ক্লাইন্ট এর রেটিং কিরকম আছে, ক্লাইন্ট এর ব্যাপারে অন্যদের রিভিউ কী বলে ইত্যাদি খেয়াল করুন। কাজ শেষ হয়ে গেলে ক্ল্যায়েন্ট পেমেন্ট নিয়ে লুকোচুরি খেললে সরাসরি সাপোর্টে যোগাযোগ করুন।
৫। নতুন জিনিস শেখা
মৃত্যু পর্যন্ত নিজের দক্ষতাকে সামনের দিকে বাড়ানোর ক্ষেত্রে থাকে। বিশ্বের সাথে আপডেট থাকা, স্কিল টেস্ট দেয়া, নতুন কম্যুনিটির সাথে যুক্ত হওয়া, আপনার জব ফিল্ড এর সাথে সম্পর্কিত নতুন বিষয়গুলো শেখা, কমিউনিকেশন এর দক্ষতা বাড়ানো ইত্যাদি বিষয়গুলোর দিকে নজর দিন।
উপরের পাঁচটি ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারলে আপনি ফ্রিল্যান্সিং জগতে সফল হতে পারবেন। শুরুতেই যেমন বলেছি, ক্যারিয়ার অনেক বড় একটা বিষয়। নগদ ডলারের লোভে পড়ে পড়াশোনা বাদ দিয়ে ফ্রিল্যান্সিংয়ে ঝুঁকে পড়লে ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা অনেক। তাই নিরাপদ অবস্থানে থেকে পরিশ্রম করলে আপনি সফল হওয়ার আশা করতে পারেন।