ফেনীতে আ’লীগ নেতাদের গলায় সাংবাদিক কার্ড!

কেন্দ্র দখলে নতুন কৌশল

শাহ জালাল রতনশাহ জালাল রতন
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ০৭:৫২ এএম, ৩১ জানুয়ারি ২০২১

পৌরসভা নির্বাচনে সাধারণ মানুষের আশঙ্কাই সত্যি হয়েছে। ভোটের প্রথম প্রহর থেকে বিভিন্ন কেন্দ্রে হামলা, ভাঙচুর, কেন্দ্র দখল ও বিক্ষিপ্ত বোমা বর্ষণের ঘটনা শুরু হয়। দিনভর সাধারণ ভোটাররা কেন্দ্রে উপস্থিত হওয়ার সুযোগই পাননি। এ অবস্থায় বিএনপি নির্বাচন বাতিল করে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে।
ভোট শুরুর ১৫ মিনিট আগে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ ফরিদ বাহার তার মাইক্রোবাসে ফেনী সরকারি বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে আসেন। তিনি ধানের শীষ প্রতীকের এজেন্ট জয়নাল, ফারুকসহ সাতজনকে কেন্দ্রের বুথে বসিয়ে আসেন। বাহার অভিযোগ করেছেন, ভোট শুরু হওয়া মাত্র শুরু হয় তাদের ওপর হামলা, কিল-ঘুষি। মুহূর্তেই এই কেন্দ্রের পরিবেশ পাল্টে যায়। বিএনপি দলীয় ভোটাররা কেন্দ্র ত্যাগ করতে থাকেন। তিনি আরও অভিযোগ করেন, ফাজিলপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মজিবুল হক রিপন বুকে সাংবাদিকের কার্ড লাগিয়ে এই কেন্দ্র নিয়ন্ত্রণ করতে থাকেন। এরপর আর কোনো ভোটার কেন্দ্রে দেখা যায়নি। ফাজিলপুর ইউনিয়নের একদল যুবক কেন্দ্রের আধিপত্য নিয়ে জাল ভোট দিতে শুরু করে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।
সকাল ৯টার দিকে সাইদী মেহেদি স্কুল কেন্দ্রে পৌঁছলে দেখা যায়, বিএনপি-আওয়ামী লীগ কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। এ সময় কেন্দ্রের আশপাশে ব্যাপক বোমা বিস্ম্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিএনপি সমর্থিত ১৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূরুল ইসলামকে সরকার সমর্থক একদল যুবক বেদম প্রহার করে বাসায় চলে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। একই সময় এই কেন্দ্রের স্বতন্ত্র কাউন্সিলর প্রার্থী পাবেলকে পিটিয়ে পাশের পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়। পরে সাংবাদিকদের সামনেই প্রকাশ্যে একদল যুবক ব্যালট পেপার টেবিলে রেখে নৌকা মার্কায় সিল মারতে থাকে। সকাল ১০টার দিকে জিএ একাডেমি স্কুল কেন্দ্রে ৭নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক তপন করকে মারধর করে কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়। স্বতন্ত্র কাউন্সিলর প্রার্থী টিপু অভিযোগ করেছেন, ভোটের আগের রাত ৯টার দিকে একদল যুবক তাকে তার মহিপালের দোকান থেকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। উত্তর চাড়িপুর কেন্দ্রে উপস্থিত থাকবেন না এই শর্তে ভোরে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।
দুপুরে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ ফরিদ বাহার সাংবাদিকদের জানান, প্রশাসনের ছত্রছায়ায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থকরা প্রায় সব ভোটকেন্দ্র ১২টার মধ্যে দখল করে নেয়। তিনি অভিযোগ করেছেন, বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের নির্বাচন অফিস থেকে সাংবাদিক কার্ড সংগ্রহ করে দেওয়া হয়েছে। তারা এসব কার্ড গলায় ঝুলিয়ে সারাদিন কেন্দ্রে অবস্থান করেছে। এ ছাড়া ইউনিয়ন পর্যায়ের আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সম্পাদকদের অনেকের গলায় সাংবাদিক কার্ড দেখা যায়। শেখ ফরিদ বাহার বলেন, ফেনীর নির্বাচন অফিসের সামনে আলিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্র অবস্থিত। এই অফিসের সামনে দুই-তিনশ আওয়ামী লীগ কর্মী অবস্থান নিয়ে কেন্দ্র দখল করেছে। রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেও কোনো ফল পাওয়া যায়নি।

এসব হামলা-পাল্টা হামলার বিপরীতে ফেনীর রামপুর লাতু মিয়া প্রাইমারি স্কুলে ভোট গ্রহণ হয়েছে মোটামুটি শান্তিপূর্ণ। এই কেন্দ্রের বাইরে সকাল ৯টার দিকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। প্রায় ৩০ মিনিট সংঘর্ষ চলার পর পরিস্থিতি শান্ত হয়। এ সময় বিএনপি কর্মীরাও কেন্দ্রের পাশে শক্ত অবস্থান গ্রহণ করে, অন্য পাশে আওয়ামী লীগ কর্মীরা। পুলিশ মধ্যবর্তী অবস্থান গ্রহণ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এ অবস্থায় এলাকার ভোটাররা পুলিশের সহায়তায় ভোট দিতে শুরু করেন। এই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ফয়েজ আহাম্মদ জানান, এই কেন্দ্রের ৫০ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছেন।
বিএনপি মেয়র প্রার্থী আলাল উদ্দিন আলাল জানান, দুপুর ১২টার দিকে বিভিন্ন কেন্দ্র দখল ও তার এজেন্টদের বের করে দেওয়ার ঘটনা জানাতে তিনি নির্বাচন কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন পাটোয়ারীর কাছে অভিযোগ করেন। কিন্তু এরপরও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। তিনি জানান, নির্বাচন অফিস থেকে ১৮ জন ম্যাজিস্ট্রেট ও একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের নাম ও টেলিফোন নম্বর তাদের সরবরাহ করা হয় তাৎক্ষণিক ঘটনা জানানোর জন্য। কোনো ম্যাজিস্ট্রেটকে মোবাইল ফোনে পাওয়া যায়নি এবং তার মোবাইল রিসিভ করেননি বলে অভিযোগ করেন আলাল উদ্দিন। জাল ভোট ও কেন্দ্র দখল করে তার নিশ্চিত জয়কে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। তিনি নির্বাচন বাতিল করে পুনঃভোট গ্রহণের দাবি জানান। আওয়ামী লীগ প্রার্থী নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী বলেন, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে। পরাজিতদের অভিযোগ থাকতেই পারে।

এ ব্যাপারে রিটার্নিং কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন জানান, নির্বাচনে সাংবাদিকের নামে প্রায় ১৭০টি কার্ড এই অফিস থেকে বিতরণ করা হয়েছে। তারা সবাই সাংবাদিক কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, বিভিন্ন পত্রিকার নামে আবেদন করে এসব কার্ড নেওয়া হয়েছে। তারা ইউপি চেয়ারম্যান কিংবা রাজনৈতিক নেতা কিনা, তা তার জানা নেই।

আপনার মতামত লিখুন :