স্বামীর কাছে যেতে পারবেন নারী শিক্ষকরা || প্রাথমিক বিদ্যালয়

জিএস নিউজ ডেস্কজিএস নিউজ ডেস্ক
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ১০:৫৯ এএম, ০৫ নভেম্বর ২০১৮

অনলাইন ডেক্স:>>>

মৌসুম শুরুর দু’মাস আগে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলি নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। অনেকটা নারীবান্ধব করে তৈরি এ নীতিমালায় ছয় শ্রেণীতে বদলির সুযোগ রাখা হয়েছে।

 

স্বামী বা স্ত্রী সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত যে কোনো ধরনের প্রতিষ্ঠানে চাকরিজীবী হলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক বদলির সুযোগ পাবেন। বেসরকারি চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে এ সুযোগ রাখা হয়নি।

 

নির্দেশিকা অনুযায়ী, সাধারণভাবে সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভার বাইরে থেকে কেউ বদলি হয়ে আসতে পারবেন না। কেবল স্বামী বা স্ত্রীর চাকরির সুবাদে এবং স্থায়ী ঠিকানা হলেই সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভার মধ্যে বদলি হওয়া যাবে। চাকরির মেয়াদ ২ বছর পূর্ণ না হলে কেউ বদলি হতে পারবেন না।

 

৫ বছরের মধ্যে দু’বার বদলির সুযোগ মিলবে না। কোনো উপজেলাতেই মোট পদের ১০ শতাংশের বেশি অন্য এলাকার শিক্ষককে পদায়ন করা যাবে না।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজার রহমান ফিজার যুগান্তরকে বলেন, আগে প্রেষণ বা সংযুক্তিসংক্রান্ত পদায়ন করত মন্ত্রণালয়। নীতিমালার ইতিবাচক দিক হচ্ছে মন্ত্রণালয় কোনো ধরনের বদলি করবে না। সব কিছু অধিদফতরের কাছে ন্যস্ত করা হয়েছে।

 

তিনি বলেন, আগে বদলির ক্ষেত্রে অনেক কড়াকড়ি ছিল। আমরা যতটা সম্ভব শিথিল করেছি। বেসরকারি চাকরিজীবীদের বিষয়টি নীতিমালায় আনা হয়নি। তবে বিশেষ বিবেচনায় বদলি নিশ্চয়ই থেমে থাকবে না। তাছাড়া এটি ভবিষ্যতে অন্তর্ভুক্ত হতেও পারে।

 

‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক বদলি নির্দেশিকা ২০১৮’-তে ৮টি ধারা ও ৪২টি উপধারা আছে। ৩০ অক্টোবরে জারি করা এ নীতিমালায় বলা হয়েছে- সাধারণ, বৈবাহিক, প্রশাসনিক, সমন্বয়ের প্রয়োজন, সংযুক্ত ও বিবিধ কারণে বদলি করা যাবে। বদলি ও এর আবেদনের সময় আগের মতোই জানুয়ারি থেকে মার্চ। তবে প্রশাসনিক ও সমন্বয়ের প্রয়োজনে সারা বছরই বদলি করা যাবে।

 

এ ধরনের বদলির আদেশ দেবেন মহাপরিচালক। অন্য ক্ষেত্রে বদলির অধিক্ষেত্র সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। এসব অধিক্ষেত্রের অধিকর্তা উপজেলা ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এবং বিভাগীয় পরিচালক। ডিপিই (প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর), জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ও সিটি কর্পোরেশনের ক্ষেত্রে থানা শিক্ষা অফিসারদের সুপারিশক্রমে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের বদলি করা হবে।

 

নীতিমালা অনুযায়ী, চাকরি পাওয়ার পর নারী শিক্ষকদের বিয়ে হলে স্বামীর কর্মস্থলের পার্শ্ববর্তী স্কুলে বদলি হতে পারবেন, প্রতিবন্ধী শিক্ষকদের স্থায়ী ঠিকানার পার্শ্ববর্তী এলাকার স্কুলে বদলি করা যাবে। প্রতিবন্ধী সন্তানের ক্ষেত্রে সুবিধাজনক বদলির সুযোগ পাওয়া যাবে। স্বামী মারা গেলে বা বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সুবিধামতো স্থানসহ বিশেষ কোনো কারণে বছরের যেে কোনো সময় বদলি হওয়া যাবে।

 

দুর্গম এলাকায় নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকরা চাকরির মেয়াদ ২ বছর পর নিজ এলাকায় বদলি হতে পারবেন। এসব বদলির জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ও বিভাগীয় উপ-পরিচালকের সুপারিশ প্রয়োজন হবে। জাতীয়করণ হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষকরা চাইলে নিজ জেলায় বদলি হতে পারবেন। তবে ৫ বছর পর।

 

মন্ত্রণালয় কর্মকর্তারা জানান, এখন থেকে যোগ্য ও জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে শিক্ষকরা ঢাকা মহানগরের যে কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শূন্য আসনে বদলির জন্য আবেদন করতে পারবেন। তবে কেবল বৈবাহিক কারণ বা জীবনসঙ্গীর চাকরি সূত্রে বদলি হওয়া যাবে। বিশেষ কারণে যে কোনো সময় বদলি করা হবে। এ ক্ষেত্রে নিয়োগদাতা কর্তৃপক্ষের সুপারিশ লাগবে।

 

শিক্ষকরা নিয়োগের পর বিবাহ বন্ধনে আবন্ধ হলে স্বামী বা স্ত্রী উভয়ের স্থায়ী ঠিকানায় বদলির জন্য আবেদন করতে পারবেন। এক্ষেত্রে কাবিননামা, প্রত্যয়নপত্র, সংশ্লিষ্ট পৌর মেয়র/ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান/ওয়ার্ড কাউন্সিলরের প্রত্যায়নপত্র, স্বামী/স্ত্রীর স্থায়ী ঠিকানার জমির দলিল, খতিয়ান, বাড়ির হোল্ডিং নম্বর (সিটি কর্পোরেশন এলাকার জন্য) ও ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের রশিদ আবেদনের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে।

 

তবে একই পদে একাধিক আবেদনকারী হলে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে বদলির জন্য বিবেচনা করা হবে। স্বামীর কর্মস্থল বা স্থায়ী ঠিকানা- যেখানেই হোক নারী শিক্ষকরা বদলির জন্য আবেদন করতে পারবেন।

 

নির্দেশিকায় আরও বলা হয়, নদী ভাঙন বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে শিক্ষকের বসতভিটা বিলীন হলে, প্রশাসনিক প্রয়োজনে, কোনো বিদ্যালয়ে শ্রেণীকক্ষে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত ও শিক্ষকদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করার প্রয়োজনে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার উপজেলা শিক্ষা অফিসারের সঙ্গে আলোচনাসাপেক্ষে একই উপজেলায় বদলি করতে পারবেন।

 

এসব নির্দেশনা রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবন পার্বত্য জেলার জন্য প্রযোজ্য হবে না। প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষকসহ প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকরা এ নীতিমালার আওতাভুক্ত হবে। তবে এর আলোকে সংশ্লিষ্ট জেলার উপযোগী নির্দেশিক্ষা প্রণয়ন করতে পারবে।

আপনার মতামত লিখুন :