শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি দীর্ঘ হচ্ছে
করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি ৩১ মার্চ থেকে বাড়িয়ে আগামী ঈদুল ফিতর পর্যন্ত করার দাবি তুলেছেন অভিভাবকরা। তারা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করে তাদের দাবি জানিয়েছেন। তাদের দাবি করোনার জন্য সাধারণ ছুটির সঙ্গে গ্রীষ্মকালীন ছুটি সমন্বয় করে ছুটি বাড়ানো হোক।
জানতে চাইলে শিক্ষা ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, সরকার ইতোমধ্যে ২ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি ছুটি ঘোষণা করেছে। পরিস্থিতির উন্নতি না হলে এ ছুটি বাড়তে পারে। এছাড়া চাঁদ দেখা গেলে আগামী ২৩ এপ্রিল থেকে রমজান শুরু হবে। রমজানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকতে পারে এমন শঙ্কায় বিকল্প উপায়ে শিক্ষাদানের পদ্ধতি খোঁজা শুরু করেছে শিক্ষার সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো। বন্ধের এ সময়টুকুতে গ্রীষ্মকালীন ছুটি যুক্ত করে দেওয়া হতে পারে।
এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো: মাহবুব হোসেন কথা বলবেন মাদরাসা ও কারিগরি বিভাগের সচিব ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিবের সাথে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সময় আরও বাড়ানোর বিষয়ে কথা হবে বলে জানা গেছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের জানান, ‘আমাদের চিন্তা ছিল চলতি সপ্তাহের শেষ দিকে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়ার। যেহেতু ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি অফিসে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে, তাই আমরা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলে সম্মিলিতভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব। সময়মতো সবাইকে জানিয়ে দেয়া হবে।’
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বর্ষপঞ্জি অনুসারে রমজান, ঈদুল ফিতরসহ বেশ কিছু ছুটি মিলিয়ে ২৫ এপ্রিল থেকে ৩০ মে পর্যন্ত ছুটি রয়েছে। এ ছাড়া এপ্রিল মাসে শবেবরাত, স্টার সানডে ও পহেলা বৈশাখের ছুটি রয়েছে। সাপ্তাহিক ছুটি ও সরকারি ছুটি বাদে ৪ থেকে ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত মাত্র ১৪ দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রয়েছে। তাই করোনাভাইরাস রোধে এই ১৪ দিনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে চায় উভয় মন্ত্রণালয়। করোনাভাইরাস পরিস্থিতির উন্নয়ন হলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আগামী ঈদুল ফিতরের আগে আর খুলছে না বলে জানা যায়।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন বলেন, ‘সরকার ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে।এই সময় পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও ছুটি থাকবে। এর পরে পরিস্থিতি বুঝে নতুন ঘোষণা দেওয়া হবে। শিক্ষা সচিবের সঙ্গে কথা বলে সিদ্বান্ত নেবো কত দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হবে।’
দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলে শিক্ষার্থীদের জন্য বিকল্প কী ভাবা হচ্ছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে শিক্ষার্থীদের একটা স্ট্যান্ডার্ড আছে। আমাদের মন্ত্রণালয়ের অধীন বর্ণমালা পড়ুয়া শিক্ষার্থী আছে।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ‘আজ (গতকাল) এটুআইয়ের কর্মকর্তা ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ডিজির সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আলোচনা করেছি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দীর্ঘ সময় বন্ধ রাখা হলে কীভাবে শিক্ষার্থীদের পাঠের মধ্যে রাখা যায়। টিভি, কমিউনিটি রেডিও, সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে শিক্ষা দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। যাতে করে গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করা যায়। তবে অনেক অভিভাবক আছে যাদের বাড়িতে টিভি নাই। তাদের ক্ষেত্রে কী করা যায় তা ভাবতে এটুআই কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারা কাজ করে আমাদের জানালে আমরা সিদ্ধান্ত নিব।’
এ ব্যাপারে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. ফসিউল্লাহ বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়ানো ছাড়া এ মুহূর্তে আর কোনো বিকল্প দেখছি না। তবে সেটি কত দিন হবে তা আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত হবে। তিনি বলেন, বন্ধের সময়টুকুতে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক টাচে রাখতে এটুআইয়ের প্রযুক্তিগত সহায়তা এবং সংসদ টেলিভিশনের মাধ্যমে বাছাই করা শিক্ষকদের রেকর্ডিং করা ক্লাস প্রচার করা হবে। এছাড়াও করোনা নিয়ে সর্তকতামূলক বার্তা ১ কোটি ৪০ লাখ বাচ্চার মায়েদের কাছে এসএমএসের মাধ্যমে পৌঁছানো হবে।
জিএসনিউজ/এমএইচএম/এএএন