কোরিয়া সার্কুলার ২০১৯ দেখে নিন দক্ষিণ কোরিয়া ভিসা আবেদনের বিস্তারিত
বিশ্বের ১৫ টি দেশ থেকে শ্রমিক নেয়ার জন্য প্রতিবছরই এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে দেশটি। প্রতি বছর শুধু বাংলাদেশ থেকেই প্রায় ৫ হাজার অদক্ষ শ্রমিক নিচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া। বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকা এবং বাংলাদেশের এর একমাত্র এজেন্ট বাংলাদেশ ওভারসিস এমপ্লয়মেন্ট এন্ড সার্ভিস লিমিটেড (বোয়েসলে) এর ওয়েব সাইট www.boesl.org.bd-এ প্রকাশ করা হয়। কোরিয়া যাওয়ার সব ধরনের তথ্যও পাওয়া যাবে এই ওয়েবসাটে।
কোরিয়ান সরকারের ইপিএস প্রোগামের আওতার শ্রমিক হিসাবে দক্ষিণ কোরিয়া যেতে, কোরিয়া সার্কুলার ২০১৯ হবে খুব শিগ্রই। এবছর দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ার জন্য কোরিয়া ডিভি লটারি সার্কুলার ২০১৯ ঘোষণা করা হয়েছে গত ৫ই মার্চ ২০১৯। গত বছর কোরিয়া সার্কুলার ২০১৮ তে উল্লেখ ছিল যে প্রাথমিক ভাবে ভাষা পরীক্ষার জন্য ৮৪০০ জন কে লটারির মাধ্যমে মনোনীত করা হবে। গত ৪ঠা মার্চ ২০১৮ রবিবার সকাল ১০ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত আবেদন করেছিল ১ লক্ষ ৫০ হাজার প্রার্থী, বোয়েসেল এর ওয়েব সাইটে http://eps.boesl.org.bdএর মাধ্যমে। যার মধ্য থেকে কোরিয়া লটারি রেজাল্ট প্রকাশিত হবার পরে প্রাথমিক ভাবে লটারিতে বিজয়ী ঘোষণা করা হয় ৮৪০০ জন কে। এবছর কোরিয়া সার্কুলার ২০১৯ এর বিজ্ঞপ্তি বোয়েসেলের ওয়েবসাইট WWW.BOESL.ORG.BD মাধ্যমে প্রকাশ করা হবে।
কারা যেতে পারবে কোরিয়া
- এই চুক্তির আওতায় দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ার প্রথম শর্ত কোরিয়ান ভাষা শেখা।
- বয়স হতে হবে ১৮ থে ৩৯ বছর
- মশেনি রডিবেল পাসর্পোট থাকতে হবে
- কখনও কোন অপরাধে সাজা প্রাপ্ত হলে আবদেন গ্রহন যোগ্য নয়।
- অতীতে যারা কোরয়িাতে অবধৈ ভাবে বসবাস করেছেন তার আবেদনও গ্রহন যোগ্য নয় ।
সেই সাথে মনে রাখতে হবে ইপিএসের মাধ্যমে যারা শ্রমিক হিসেবে কোরিয়া যেতে চান তাদেরকে সাধারণত কোরিয়ার বিভিন্ন কম্পানীতে কাজ করতে হয়। যা বাংলাদেশের বিভিন্ন মিল ফ্যাক্টরির মতোই। তাই এ ধরনের মিল কারখানায় কাজ করার মন মানসিকতা থাকলেই কেবল কোরিয়া য়াওয়ার জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিতে পারেন।
সার্কোলার হওয়ার পর যা যা করতে হবে
কোরিয়া সরকার যখন শ্রমিক নেওয়ার জন্য অনলাইনে সার্কোলার ছাড়বে, তখন উল্লেখিত সময়ের মধ্যেই www.boesl.org.bd এই পেইজে উল্লেখিত আবেদন ফর্মে আপনাকে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। আবেদনের করার আগেই ডিজিটাল পাসপোর্ট করে রাখতে হবে। কারন আবেদনের সময় আপনাকে ডিজিটাল পাসপোর্ট নম্বর দিয়ে আবেদন করতে হবে । আবেদন করার ৭ দিনের মধ্যেই বোয়েসেল এর ওয়েব পেইজেই লটারির মাধ্যমে ফলাফল ঘোষনা করা হবে। এই লটারির পুরোটাই তদারকি করে থাকে কোরিয়ান সরকার। তাই কারো প্ররোচনায় আপনাকে লটারিতে নাম এনে দিতে পারে এমন ফাঁদে কখনোই পা দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না। প্রতিবছর লটারীতে সাধারণত ৫৪০০ জনকে টিকিয়ে থাকে হয়। লটারি বিজয়ীরা বোয়েসেলের পেইজে উল্লেখিত সময়ে কোরিয়ান ভাষা পরীক্ষায় অংশগ্রহনের সুযোগ পাবেন। ২০০ নম্বরের এই পরীক্ষায় যারা বেশি নম্বর পাবেন তাদেরকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আগে নেওয়া হয়। ২০০ নম্বরের এই পরীক্ষাটিও হয়ে থাকে কম্পিউটারে অনলাইনের মাধ্যমে ।
ভাষা পরীক্ষায় পাসের পর যা করতে হবে
ভাষা পরীক্ষায় পাশ মানেই কোরিয়া যাওয়া নিশ্চিত এটা ভাববেন না । কারণ ভাষা পরীক্ষায় উর্ত্তীন হওয়ার পরও বাকি থাকে অনেক কাজ। এর মধ্যে উল্লেখিত হলো মেডিক্যাল টেস্ট। মেডিকেল টেস্টে সাধারণত এইচ আই ভি ভাইরাস, জন্ডিস, কলোস্টেরল, চোখের সমস্যা এবং ঠান্ডা জনিত সমস্যা আছে কিনা তা খুব নিখুত ভাবে পরীক্ষা করা হয়। তাই কোরিয়ান ভাষা পরীক্ষায় উর্ত্তীন হওয়ার পর পরই উল্লেখিত রোগ সমূহ আপনার শরীরে আছে কিনা তা বিশেষ ভাবে পরীক্ষা করে দেখা উচিত। মেডিক্যাল টেস্টের এ ধরণের ছোট খাটো সমস্যাও আপনার কোরিয়া যাওয়া অনিশ্চিত করে ফেলতে পারে।
সব পরীক্ষা পাশ করার পর যা করবেন
সব ধরনের পরীক্ষায় পাসের পরই আপনার নাম কোরিয়ার জব রোস্টার ভুক্ত হবে। জব রোস্টার ভুক্ত হওয়া পর কোন কোরিয়ান কোম্পানীর মালিক যদি আপনাকে তার কাজের জন্য উপযুক্ত মনে করেন তখন সে আপনাকে তার কোম্পানীতে নেয়ার জন্য কোরিয়ার জব সেন্টারে আবেদন করবে। আর এর সব তথ্যই বোয়েসেলের পেইজের মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন। তাই মাঝে মাঝেই বোয়েসেলের পেইজটিতে আপনাকে নজর রাখতে হবে। আপনার নাম কোরিয়ার চাকরীর জন্য নির্বাচিত হওয়ার পর আপনাকে মিরপুরে অবস্থিত কোরিয়ান টেকনিক্যাল সেন্টারে ৭ দিনের একটি স্বল্প সময়ের ট্রেনিং এ অংশগ্রহন করতে হবে। সব ঠিকঠাক হয়ে গেলে বোয়েসেলের পেইজে উল্লেখিত সময়ে ভিসা প্রসেসিং খরচ এবং বিমানের টিকিটের খরচের টাকা জমা দিতে হবে, যা ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকার মতো হতে পারে।
কোরিয়া বিমান বন্দরে পৌছার পর আপনাকে ৩দিনের একটি প্রশিক্ষনের জন্য অংশগ্রহন করতে হবে। যার তদারকি করবেন কোরিয়ার বাংলাদেশি এইচআরডি প্রতিনিধি। এই ট্রেনিং এ সাধারণত আপনি কোরিয়ায় কিভাবে চলবেন তার উপর আলোচনা করা হবে। ৩ দিনের মাথায় আপনার কোম্পানীর মালিক আপনাকে আপনার কর্মস্থলে নিয়ে যাবেন। আপনার এই কোম্পানীতে যদি আগে থেকেই কোন বাংলাদেশী থেকে থাকে তার কাছ থেকে আপনার কাজের সব ধরনের ধারনা পেতে পারেন, এবং আপনি তাকে অবশ্যই আপনার সিনিয়র কলিগ হিসেবেই বিবেচনা করবেন।
যে ধরণের কাজ করতে হতে পারেু
কোরিয়ার কাজ নিয়ে আপনার ভয়ের কিছু নেই। কারন আপনাকে দিয়ে এমন কিছু করাবে না যা আপনি করতে পারবেন না। কোরিয়াতে মালিক এবং শ্রমিকের মধ্যে তেমন কোন পার্থক্য নেই। কারন আপনি যা করছেন পাশেই আপনার কোম্পানীর মালিক বা তার পরিবারের সদস্যরা তাই করছে। তাই নিজেকে ছোট ভাবার কোন প্রয়োজন নেই। তবে কাজে ফাকি দেওয়ার মানসিকতা একেবারেই বাদ দিতে হবে। কোরিয়া সরকারের রীতি অনুযায়ী যদি কোন বিদেশী শ্রমিক একি কোম্পানীতে তার মেয়াদের পুরো সময় অর্থ্যাত ৪ বছর ১০ মাস সুনামের সাথে কর্মরত থাকে তাহলে তার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর দেশে এসে পুনরায় ৩ মাস পর একি কোম্পানীতে যোগদান করতে পারবেন। আর যদি কোন সমস্যায় পড়ে কিংবা অধিক টাকার লোভে কোম্পানী পরিবর্তন করেন তবে তাকে দেশে এসে পুনরায় বিশেষ পরিক্ষায় অংশগ্রহন করে কোরিয়ায় যাওয়ার সুযোগ পাবেন। কিন্তু সেটা অনেকটাই ভাগ্যের উপরই নির্ভর করবে।
জব রোস্টারে নাম অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর কোন কম্পানীর মালিক যদি আপনাকে তার কোম্পানীর জন্য নির্বাচন না করে সেক্ষেত্রে আপনার কোরিয়া যাওয়া অনিশ্চত হয়ে পড়ে। তবে রোস্টার ভুক্ত হওয়ার পর কোরিয়ায় যেতে পারে নাই এ সংখ্যা হাজারে একজনের ক্ষেত্রে এমনটা ঘটে থাকে। তাই ঘাবড়োনোর কিছু নেই।
বিদেশে যাওয়ার পর আপনাকে মনে রাখতে হবে আপনার ভালো মন্দের উপর নির্ভর করছে বাংলাদেশের সম্মান। আপনি ভালো কিছু করলে বাংলাদেশের সম্মান বাড়বে আর খারাপ কিছু করলে বাংলাদেশের দুর্ণাম হবে। তাই আপনাকে যেকোন ধরনের লোভ লালসার উর্ধ্বে থেকে বিদেশের মাটিতে দেশের মান বৃদ্ধি কল্পে কাজ করতে হবে। কোরিয়ায় একজন মালিকের সাথে আরেক জন মালিকের সম্পর্ক অনেক ভালো। তাই কোন দেশের শ্রমিক যদি ভালো কাজ করে কোম্পানীর মালিক তা অন্য কোম্পানীর মালিকের সাথে আলোচনা করে, তখন সেই মালিকও সেই দেশের শ্রমিক নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। তাই সব সময় মনে রাখতে হবে, আপনার উপরই নির্ভর করছে আপনার দেশের শ্রম বাজার।
দক্ষিণ কোরিয়া লটারি ২০১৯- কোরিয়া সার্কুলারের বিস্তারিত দেখুন এখান থেকেঃ