গন্তব্য স্থানের নাম নুসরাতের বাড়ি বললেই চিনে রিক্সাওয়ালারা

জিএস নিউজ ডেস্কজিএস নিউজ ডেস্ক
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ০১:৫০ পিএম, ১০ জুন ২০১৯

সোনাগাজী যখন পৌঁছি তখন বেলা বারটা। শহরটায় একটু চোখ বুলিয়ে নিলাম। কেমন শান্ত মনে হলো মফস্বল শহরের এই উপজেলাটি। আশপাশে লোকজন কর্মব্যস্ত! সবাইকে সুশৃঙ্খল লাগছে। অথচ, এখানেই আজ থেকে দু’মাস আগে ঘটে গেছে এক জঘন্য হত্যাকান্ড!
ছোট ভাই আব্দুল্লাহ রিয়েল ও সাহেদের অপেক্ষায় আছি। ওয়ালটনের বিল্ডিংটায় মার্কেটে ঢুকলাম। বোরখা হাউজ দেখে আবারো ভাবছি নুসরাতের হত্যার জন্য মণির বোরখা কেনার কথা। পাশে দিয়ে বোরখা পড়া হেঁটে যাওয়া মেয়েদের মণি, চম্পা মনে হলো।
নুসরাত হত্যার বিষয়টা মাথায় ঘুরছে ঠিক তখন রিয়েল , সাহেদ এলো। ওদের নিয়ে সোনাগাজীর বিশেষ রিক্সায় উঠে বসলাম নুসরাতের বাড়ির উদ্ধেশ্যে! রিক্সাওয়ালা বললো কোথায় যাবেন? আমরা বললাম নুসরাতের বাড়ি! দেখলাম আর কোন প্রশ্ন না করে রিক্সাওয়ালা আমাদের নিয়ে চললো। গ্রামাঞ্চলে নারীর নামে কেউ চিনেনা বাড়ি! কিন্তু নুসরাতের উপর এমন পৈশাচিক হামলার পর সে এখন পুরো বাংলাদেশের তারকা। তাকে এখন সোনাগাজী বাজারে সবাই চিনে। রিয়েল বললো আপু নুসরাত এখন সেলিব্রেটি। ও মরে গিয়ে সেলিব্রেটি হয়ে গেছে। বর্তমান পুলিশ সুপার বলেছে নুসরাত এর পরিবার এখন পাবলিক প্রোপার্টি! এমন এক ইতিহাস রচনা করে গেছে নুসরাত!
বাড়ির সদর দরজায় আসতেই পুলিশ চারজন বসা,আমাদের তাদের দিকে ডাকলেন। হাজিরা খাতায় সাক্ষর নিলেন নাম পরিচয়, কোথা থেকে আগত,নাম্বার সহ আর পাশে একটি মন্তব্য! মানে নুসরাতের আসামীদের কেমন শাস্তি চায় আগতরা । সে যেই হোক! প্রতিদিনই মানুষ আসে নুসরাতের গর্ভধারিণী মাকে দেখতে। আমরা তিনজনই লিখলাম ফাঁসি চাই। নজর বুলালাম এর আগেও সবাই লিখেছে সর্ব্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির কথা।
বাড়ির ভেতরে গেলাম। সামনের রুমে নুসরাতের দাদা কথা বলছে তাদের পরিচিত ব্যক্তির সাথে। হুঁশ কিছুটা কম মনে হলো বৃদ্ধ মানুষটার। আর একটু ঢুকেই দেখি নুসরাতের ছোট ভাই রায়হান তার ঈদ উপলক্ষ্যে আসা ব›ধুদের নিয়ে গল্প করতে। নুসরাতের মা কে রান্নাঘর থেকে আসতে দেখলাম। একটু স্বাভাবিক,শান্ত মনে হলো ! সদ্য গোসল করে আসাতে এমন মনে হলো বোধ হয়! পরিচয় দিলেই বুকে জড়িয়ে ধরলেন।আগেও এসেছি একবার। তখনের পরিবেশ,পরিস্থিতি, অস্বাভাবিকতা এতো হাজার মানুষের ভিতর আলাদা করে কথা বলা সম্ভব ছিলনা।
নুসরাতের মা খাটে নিয়ে বসলেন। কেমন আছেন বললে বলে কেমন থাকি মা বল? স্তব্ধ আমি! এমন প্রশ্ন অবান্তর! জানালেন মেয়ে ছাড়া ঈদের মুহুর্তগুলো তার কেমন যে লাগছে।একমাত্র মেয়ে ছাড়া এমন আনন্দের দিন তিনি ভাবেন নি। সবসময়ই মেয়েকে মনে পড়ে তার। বললেন কতো বিয়ের জন্য এসেছে আমার মেয়ের জন্য। বসুরহাটের দোতলা বাড়ি আছে, এক ব্যবসায়ী ছেলে তার মেয়েকে বিয়ে করতে অনেক অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু মেয়ের সায় ছিলনা বিয়েতে। নুসরাত বলতো আম্মা টাউনে দেখি আসেন অনেক মেয়ের বত্রিশ,তেত্রিশেও বিয়ে হয়না। আর আপনি আমাকে এখনি বিয়ে করতে বলছেন। আম্মা আমি আরো পড়ালেখা করবো। তারপর এসব! আফসোস করে তার মা বললো যদি জোর করে বিয়ে দিয়ে দিতাম আমার মেয়েটো হয়তো বাঁচতো! শামীম, নুর উদ্দিন এরা আমার মেয়েকে বহু আগে থেকে জ্বালাতো। আমার মেয়ে দেখতে অনেক সুন্দর! লম্বায়ও সাড়ে পাঁচ ফুট। আপনারা যে ছবি ছাপেন পেপারে ওটা আরো ২/৩ বছর আগের ছবি। ও চিন্তায় চিন্তায় শুকাই গেছিলো! চারিদিকের এসবের জ্বালায়! ভাবতাম রাস্তায় অনিরাপদ! কিন্তু প্রতিষ্ঠানে এমন ঘটনা ঘটাবে কি আমরা জানতাম? ভাবছি আলিম পরীক্ষাটা শেষ হোক।ওকে আমরা ফেনী শহরে পাঠাই দিবার সিদ্ধান্ত ছিল! কিন্তু খুনীরা তার আগেই আমার মেয়েকে দুনিয়া ছাড়া করলো।
কত হাজার মানুষের ভিড় তাদের বাড়িতে। তিন মাসে যা মানুষ আসতো এখন ঈদের সময়,অনেকের ছুটির কারণেও আসছে। রোজ কোথাও না কোথাও থেকে মানুষ আসছে এক নজর দেখতে নুসরাতের বাড়িটা, দেখতে আসছে নুসরাতের গর্ভধারিণী মাকে !
জিএসনিউজ/এমএইচএম/এসএল

আপনার মতামত লিখুন :