‘মিথ্যা আশ্বাস নয়, স্থায়ী বন্যা সমাধান চাই’—ঢাকায় ফেনীবাসীর মানববন্ধন

ফেনী ও আশপাশের জেলাগুলোতে ভারতীয় উজানের পানির আগ্রাসনে সৃষ্ট বন্যা ও এর পুনরাবৃত্তি রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা এবং ক্ষতিগ্রস্তদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে অবিলম্বে সুস্পষ্ট রোডম্যাপ চেয়েছে ঢাকাস্থ ফেনীবাসী নামের একটি নাগরিক সংগঠন। দাবি না মানলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধসহ প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ঘেরাওয়ের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে সংগঠনের পক্ষ থেকে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে।
শনিবার (১২ জুলাই) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধন থেকে এই ঘোষণা দেওয়া হয়। ঢাকায় অবস্থানরত ফেনীর বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ব্যক্তিবর্গ এই মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ছাগলনাইয়া ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দিদারুল আলম মজুমদার এবং সঞ্চালনা করেন ফেনী কমিউনিটির মুখপাত্র বোরহান উদ্দিন ফয়সল।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, জাতীয়তাবাদী সমবায় দলের সাধারণ সম্পাদক ড. নিজামুদ্দিন, হাবের পরিচালক মেসবাহ উদ্দিন সাঈদ, এডভোকেট জসিম উদ্দিন তালুকদার, উন্নয়ন গবেষক নাজমুল হক, সিনিয়র সাংবাদিক শাহ মহিউদ্দিন, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট আজিম উদ্দিন পাটওয়ারি, শ্রমিক নেতা আব্দুর রহিমসহ বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, “বিগত সরকারগুলো ফেনীর প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণ করেছে, সেই ধারাবাহিকতা এখনো চলছে। উপদেষ্টারা শুধু আশ্বাস দেন, কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যায় না। ফেনীবাসী ত্রাণ নয়, চায় স্থায়ী বন্যা প্রতিরোধ ব্যবস্থা।” তিনি ভারতীয় পানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কার্যকর রাষ্ট্রীয় অবস্থানেরও দাবি জানান।
জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন স্বপন বলেন, “আর মিথ্যা আশ্বাসে নয়, এবার স্থায়ী সমাধান চাই। বারবার যেন আমাদের এলাকা বন্যার পানিতে ডুবে না যায়।”
সভাপতির বক্তব্যে দিদারুল আলম মজুমদার পানি সম্পদ উপদেষ্টার দায়িত্বহীনতার অভিযোগ তুলে বলেন, “বন্যা প্রতিরক্ষা প্রকল্পের নামে কোটি কোটি টাকার অপচয় হয়েছে। অথচ কার্যকর বাঁধ বা প্রতিরোধ ব্যবস্থার কোনো অগ্রগতি নেই। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা যদি দায়িত্ব পালন করতে না পারেন, তাহলে তাদের পদত্যাগ করা উচিত।”
মানববন্ধনে উত্থাপিত প্রধান দাবিসমূহ:
১. উজানের পানির প্রবাহ ঠেকাতে ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী অঞ্চলে টেকসই ও স্থায়ী বন্যা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা।
২. বল্লামুখা বাঁধ ও মুছাপুর ক্লোজার অবিলম্বে পুনর্নির্মাণ।
৩. জলাবদ্ধতা নিরসনে জলাধার উদ্ধার, পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়ন, নদী খনন এবং অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ।
৪. ২০২৪ সালের বন্যা-পরবর্তী ঘোষিত ১০০০ কোটি টাকার পুনর্বাসন প্রকল্পের অগ্রগতি জনসমক্ষে প্রকাশ এবং প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান।
৫. বন্যাকবলিত এলাকায় প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অন্তত তিনতলা ভবন নির্মাণ করে সেগুলোকে দুর্যোগকালীন আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার।
৬. বাঁধ নির্মাণ ও মেরামতে দুর্নীতির তদন্ত এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়ী কর্মকর্তাদের শাস্তির আওতায় আনা।
৭. ফেনীসহ দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ভারতীয় পানি আগ্রাসন রোধে কূটনৈতিক ও আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ এবং ফেনী নদীর পানি হস্তান্তর বন্ধ।
নাগরিক সমাজের এই মানববন্ধন এখন শুধু ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ নয়—এটি সরকারের প্রতি একটি স্পষ্ট বার্তা। দাবি না মানলে ফেনীবাসী যে কঠোর কর্মসূচিতে যেতে প্রস্তুত, তা তারা স্পষ্টভাবেই জানিয়ে দিয়েছে।