বেশি দিন সঙ্গীহীন থাকলে যা হয়

স্টাফ রিপোর্টার:>>>
একাকিত্ব নিয়ে নতুন নির্দেশিকা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) এর। এর জেরে আতঙ্কিত হতেই পারেন সঙ্গীহীন বা ‘সিঙ্গল’-দের দল। ইতিমধ্যেই এই নতুন নির্দেশিকার বিরুদ্ধে শুরু হয়েছে তীব্র সমালোচনা।
সম্পর্কের জালে জড়ানো নয়, বরং নিজের মতো থেকে জীবনের মজা নাও। বর্তমান যুব সমাজের এটাই ট্রেন্ড। বিশেষ করে শহুরে জীবনের উদ্দামতায় এই ধরনের প্রবণতার ঝোঁক বাড়ছে বলেই বিভিন্ন সমীক্ষায় ধরা পড়েছে। এমন প্রবণতার প্রতিফলন ঘটেছে বলিউডের একাধিক ছবিতেও। আজকালকার ছেলেমেয়েরা যতই ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’-র মতো আচরণের চেষ্টা করুক না কেন তাতে হাওয়া দিতে রাজি নয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ‘হু’।
‘হু’ এবার বিশেষ নির্দেশিকা আনতে চলেছে। এই নির্দেশিকার জেরে একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ বা মহিলা বেশিদিন একা থাকলেই তাঁদেরকে ‘ডিসএবেল’ বা ‘ক্ষমতাহীন’ বলে তকমা দেওয়া হবে। অর্থাৎ সঙ্গীহীন থাকা যাবে না। এমনকী, বিবাহিত পুরুষ এবং মহিলারাও যদি ১ বছরের বেশি সন্তানহীন থাকেন তাহলেও তাদের ‘ডিসএবেল’ বলে প্রতিপন্ন করা হবে। আসলে ‘ডিসএবিলিটি’-র ভাবনাটাকে আরও বিস্তৃত করতে চাইছে ‘হু’। এর জন্য এই নয়া ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে এই নিয়ে একটি রিপোর্টও তৈরি করা হয়েছে। সেখানে বলা হচ্ছে, যদি কোনও পুরুষ বা মহিলা সিঙ্গল ফাদার বা মাদার হতে চান অথবা কোনও সমকামী দম্পতি সন্তান দত্তক নেন, তবে তাঁরা এই ‘ডিসএবেল’ তকমার আওতায় পড়বেন না।
আসলে একজন মানুষের ‘রাইট টু রিপ্রোডিউস’-এর অধিকারকে প্রতিষ্ঠা করতেই এই নয়া নির্দেশিকা আনা হচ্ছে বলে ‘হু’ থেকে জানানো হয়েছে। রিপ্রোডাকটিভ এথিকস-এর ডিরেক্টর জোসেফিন কুইনটাভাল্লে ‘হু’-এর নয়া নির্দেশিকার কঠোর সমালোচনা করেছেন। তাঁর মতে এই ধরনের নীতি বানিয়ে ‘বায়োলজিক্যাল ইন্টারকোর্স’-এর গুরুত্বকে অস্বীকার করার চেষ্টা চলছে। এই ধরণের নিয়মে সমাজের কিছু উচ্চবৃত্ত মানুষ লাভবান হতে পারে বলেও দাবি করেছেন জোসেফিন।
অন্যদিকে, ‘হু’-এর ডক্টর ডেভিড অ্যাডামসন-এর দাবি, ‘‘এই নয়া নির্দেশিকায় একজন তাঁর ‘রিপ্রোডিউস’ ক্ষমতার অধিকার পাবেন। এটা মানবজাতির যুগান্তকারী পদক্ষেপ। আন্তর্জাতিক স্তরে এর একটা নির্দেশিকা তৈরি হচ্ছে, যা মেনে চলতে বাধ্য প্রতিটি দেশ।’’
সঙ্গীহীন হলে খাবারে আসে অনীহা!
বাসনার সেরা বাসা যে রসনাতে, তা আমাদের অজানা নয়! তবু কখনো কখনো এমনও হয়, খিদেই যেন হারিয়ে যায় কোথায়। সামনে যতই ভালোমন্দ সাজানো থাক, খেতে ইচ্ছা হয় না। খাবারে অনীহা আসে মূলত সঙ্গীহীন থাকার কারণে। জাপানের নাগোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক দীর্ঘ গবেষণা চালিয়ে যে সিদ্ধান্তে এসেছেন।
‘সাইকোলজি অ্যান্ড বিহেভিয়ার’ পত্রিকায় প্রকাশিত এই প্রবন্ধে বলা হয়েছে, মানুষের স্বভাবই হল সে যখন দলের মধ্যে মিশে থাকে, তখন খাবারের স্বাদ বেশি ভালো বুঝতে পারে। একই খাবার একা খেলে সে যতটা উপভোগ করে, তার থেকে বেশি উপভোগ করে দলবল মিলে সেই খাবার খেলে।
নাগোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা লক্ষ্য করে দেখেছেন, এই প্রবণতাকে কাজে লাগিয়ে যে কারও খিদে বাড়ানো যায়। কেউ যদি একা একা খেতে বসার সময় সামনে একটা আয়না রেখে খায়, কিংবা নিজেরই কোনো ভোজনরত অবস্থার ছবি সামনে রাখে, তা হলেই আশ্চর্যজনকভাবে তার খাওয়ার ইচ্ছা বেড়ে যায়!
এ ব্যাপারে দীর্ঘদিন ধরে তারা পর্যবেক্ষণ চালিয়ে গিয়েছেন। অসংখ্য মানুষের ক্ষেত্রে নাগাড়ে পর্যবেক্ষণ চালিয়ে তবে তারা সিদ্ধান্তে আসতে পেরেছেন। দেখা গেছে, সত্যিই ওইভাবে খাওয়ার ফলে দূর করা গেছে খাওয়ার অনিচ্ছাকে। স্রেফ সঙ্গীহীন অবস্থায় খাওয়ার ফলে এক ধরনের অনীহা কাজ করছিল অনেকের মধ্যেই। এই অবস্থায় আয়নার প্রতিবিম্ব তাদের সঙ্গী হয়ে ওঠায় তারা নতুন করে খাওয়ার ইচ্ছা ফিরে পেয়েছেন।
গবেষণার এই আশ্চর্যজনক ফলাফল আমাদের আরো একবার জানিয়ে দিয়ে যায়, আজকের পৃথিবীকে মানুষের সঙ্গীহীন হয়ে যাওয়ার কুফল কীভাবে তার ওপরে প্রভাব বিস্তার করে চলেছে। আর সঙ্গী মানুষদের মধ্যে খাবারে অনীহা সবচেয়ে।
এখনো কি আপনি সঙ্গীহীন?
এখনো কি আপনি সঙ্গীহীন? কিন্তু কেনো আপনি সঙ্গীহীন? কখনো কি এটা ভেবে দেখেছেন! যাই হোক সঙ্গীহীন থাকা কোনও মানসিক অসুখ না। একা থাকে মানে আপনি সঠিক যোগ্য কোনও সঙ্গীর অপেক্ষায় আছেন। একবার ভেবে দেখুন তো এসব বিষয়গুলো আপনার একাকীত্বের কারণের সঙ্গে মিলছে কি-না।
সাবেকের প্রতি এখনো দুর্বল : খুব সহজে মানুষ অতীত ভুলতে পারে না। সম্পর্কের বিচ্ছেদ হয়েছে কিন্তু আপনি এখনো ভালোবাসার মানুষকে ভুলতে পারছেন না- এমনটা হলে কখনোই সামনের দিকে পথ চলতে পারবেন না। মনে রাখতে হবে, পাস্ট ইজ পাস্ট। তাই অতীতকে ভুলে বর্তমানকে মেনে নিতে হবে।
সরলতা : হয়তো বা অনেক সহজ-সরল প্রকৃতির মানুষ আপনি। একারণে কেউ আপনাকে পছন্দ করবে না এমনটা ভাবছেন। তবে এটা সত্য যে, কেউ না কেউ আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। যে মানুষটি আপনার সরলতাকে ভালোবেসে আপনাকে আপন করে বুকে টেনে নিবে।
হৃদেয়ের কষ্ট : অতীত সম্পর্কে অনেক বেশি কষ্ট পেয়ে থাকলে অনেকের মনে ধারণার জন্ম নেয় যে, হয়তো পরবর্তী সম্পর্কেও এমন কষ্ট পেতে হবে। সে জন্য কেউ কেউ সম্পর্কে জড়াতে চায় না। তাই মূল্যবান সময় নষ্ট করে সঠিক সঙ্গীকে বেছে নিবেন।
অাবেগ প্রবণতার প্রভাব : আপনার জন্য যার মনে ভালোবাসা আছে সে আপনার সঙ্গে একান্তে সময় কাটাতে চাইবে। তবে এক্ষেত্রে আপনি যদি অনেক বেশি আবেগপ্রবণ হয়ে যান তাহলে আপনি সঙ্গীহীন হয়ে থাকবেন।
চিন্তা-ভাবনা অধিক : সঙ্গী নির্বাচনে অনেকে দীর্ঘ সময় নিয়ে থাকেন। সে জন্য সময় থাকতে সঠিক সঙ্গী নির্বাচন করে এখনি মুক্তি নিন নিঃসঙ্গী জীবন থেকে।
সঙ্গীহীনদের কি কিছুই করার নেই?
সঙ্গীহীনদের কি কিছুই করার নেই? সঙ্গীহীন বা একাকী ব্যক্তিদের জন্য দিনটি তাই হতাশার বা অপছন্দের।
১. সিঙ্গেলস অ্যাওয়ারনেস ডে: যুক্তরাষ্ট্রে ভ্যালেন্টাইনস ডের বিরুদ্ধে একই দিন অর্থাৎ ১৪ কিংবা ১৫ ফেব্রুয়ারি পালন করা হয় সিঙ্গেলস অ্যাওয়ারনেস ডে। একে সংক্ষেপে বলে এসএডি বা স্যাড ডে। যাঁরা সঙ্গীহীন বা একাকী, তাঁরা দিনটিকে নানাভাবে উদ্যাপন করেন। জুটিদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে নিজেদের সঙ্গীহীন অবস্থানকে অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করেন। একাকী থাকার গুরুত্ব তাঁরা প্রচার করেন ওই দিন।
২. ফ্রেন্ডশিপ ডে: ফিনল্যান্ডে ভ্যালেন্টাইনস ডে পালন করা হয় অনেকটাই প্লেটোনিক উপায়ে। ১৪ ফেব্রুয়ারি সেখানে মূলত ফ্রেন্ডশিপ ডে। বন্ধু বা ভালোবাসার মানুষটিকে বন্ধুত্বের গভীর বন্ধনে বাঁধার দিন হিসেবে ১৪ ফেব্রুয়ারি পালন করা হয় সেখানে। যাঁরা ভ্যালেন্টাইনস ডের বিরোধী, তাঁরা দিনটিকে বন্ধু দিবস হিসেবে পালন করতে পারেন।
৩. ব্ল্যাক ডে: ঠিক ১৪ ফেব্রুয়ারি নয়, দিবসটি ১৪ এপ্রিল। কোরিয়াতে ব্ল্যাক ডে বা কালো দিবস। যাঁরা ভ্যালেন্টাইনস ডের বিরোধী, তাঁরা পালন করতে পারেন এই ব্ল্যাক ডে। এ দিবসটিতে সঙ্গীহীন ব্যক্তিরা স্থানীয় রেস্তোরাঁয় যান এবং সেখানে সুস্বাদু জাজাংমিয়ন নামে একধরনের নুডলস খান। এই নুডলসের ওপরে কালো শিমের সস ও সবজি দেওয়া হয়। গত কয়েক বছরে একাকী ব্যক্তিদের কাছে এই কালো দিবসটি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
৪. সিঙ্গেলস ডে: ১১ নভেম্বর চীনে সিঙ্গেলস ডে পালন করা হয়। ১৯৯০ সালে ভ্যালেন্টাইনস ডে প্রতিরোধ দিবস হিসেবে অনানুষ্ঠানিক ছুটির দিন হিসেবে এটি পালন করা হয়। এ দিনটিতে সঙ্গীর চিন্তা না করে নিজের জন্য নানা উপহার কিনতে দেখা যায়। ২০১৩ সালে চীনের বড় অনলাইন শপিং কোম্পানি থেকে সিঙ্গেলস ডেতে প্রচুর কেনাকাটা হয়।
৫. আন্তর্জাতিক কুইর্কিঅ্যালোন ডে: নিজেকে ভালোবাসুন—এ মন্ত্রে ১৪ ফেব্রুয়ারি পালিত হয় আন্তর্জাতিক কুইর্কিঅ্যালোন ডে। এই দিবসটি উদ্যাপনের জন্য বিশেষ ওয়েবসাইটও আছে। এই ইভেন্টের প্রতিষ্ঠাতা দিবসটি উদ্যাপন সম্পর্কে বলেন, এটা ঠিক ভ্যালেন্টাইনস ডে বিরোধী কর্মসূচি নয় বরং সব ধরনের ভালোবাসাকে উদ্যাপনের দিবস। এর মধ্যে রোমান্টিক, প্লেটোনিক, পারিবারিক ও নিজেকে ভালোবাসার বিষয়টিও আছে। অর্থাৎ এদিনে যা মন চায়, তা-ই আপনি করতে পারেন।
একাকিত্ব কাটাতে ৯ উপায়
একাকিত্বের উপর বিশ্বের সবচেয়ে বড় জরিপটি চালিয়েছে সংবাদ মাধ্যম বিবিসি। সেখানে তারা সাধারণ মানুষের কাছে একাকিত্ব কাটিয়ে ওঠার বিষয়ে জানতে চেয়েছিল। সেখান থেকে এমন ৯টি উপায় তুলে ধরা হলো যেগুলো সেইসব মানুষের একাকিত্ব কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও কাজ করেছে। এই সমাধান যে সবার ক্ষেত্রে সমানভাবে কাজ করবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। তবে পুরোপুরি বিফল যাবে সেটাও বলা যাবে না।
১. এমন কিছু করুণ যাতে মনোযোগ সরে যায়: একাকিত্ব একটি অস্থায়ী অনুভূতি। জীবনের বিভিন্ন পট পরিবর্তনে আমরা একাকী বোধ করি। সেটা হতে পারে নতুন কলেজ জীবন শুরু করা বা সম্পূর্ণ নতুন কোন স্থানে বসবাস শুরু করা। বিভিন্ন সৃজনশীল কাজ একাকিত্বের কষ্ট থেকে আমাদের দূরে রাখতে সাহায্য করতে পারে। তাছাড়া সময়ের সঙ্গে সঙ্গে একাকিত্ব বোধ ফিকে হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে এমন কোন কাজ করুন যেটা আপনি পছন্দ করেন। বিশেষ করে সেই কাজটি, যেটা আপনার মনোযোগ এতোটাই কেড়ে নেবে যে সময় কিভাবে কাটছে আপনি ভুলে যাবেন। সেটা হতে পারে বই পড়া, কোন শখের চর্চা বা পছন্দের কোন কাজ করা। এই কাজগুলো আপনার শরীর ও মন দুই-ই ভালো রাখবে। নিজের পছন্দের কোন কাজ করুন বা শিখুন।
২. সামাজিক সংগঠন বা সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে যোগ দিন: এই সমাধানের বিষয়টি শুনতে একটু গতানুগতিক ঠেকবে। যদি আপনার একাকিত্বের কারণ আপনার আশেপাশে লোকজনদের সঙ্গে দেখা না করার জন্য হয় তবে এটি আপনার জন্য ভাল সমাধান হতে পারে। তবে এই সমাধান সবার জন্য নয়। অচেনা কোন স্থানে অচেনা কোন মানুষের সঙ্গে হঠাৎ কথা বলা শুরু করা সব সময় এতোটা সহজ নয়। এই কারণে একাকিত্বে ভোগা মানুষের জন্য এই উপায়টিকে জরিপের সর্বনিম্ন সহায়ক পরামর্শগুলোর একটি ধরা হয়। যদি অপরিচিতদের সাথে কথা বলার বিষয়টি আপনাকে ভীত বা অপ্রস্তুত করে তাহলে, এমন একটি সংগঠন বেছে নিন যেখানে আপনি কাজের পাশাপাশি উন্নয়নমূলক বা সৃজনশীল কিছু করতে পারবেন। হয় কোন গানের দলে যোগ দিন অথবা কিছু তৈরি করা শিখুন। এতে করে, ইচ্ছার বিরুদ্ধে কারো সঙ্গে কথা বলার চাপে থাকতে হবে না। সেইসঙ্গে নিজের পছন্দের কোন কাজ বেছে নেয়ায় আপনি হয়তো সেখানে এমন কাউকে পেয়ে যাবেন, যার সঙ্গে আপনার চিন্তা ভাবনা মিলে যাবে।
৩. জীবনকে ইতিবাচক করতে চিন্তা ভাবনায় পরিবর্তন আনুন: এই সমীক্ষায় মানুষের সহানুভূতির মাত্রা পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, যারা নিজেদের একাকী দাবি করেন, তারা সমাজের অন্য মানুষের প্রতি অনেক বেশি সহানুভূতিশীল থাকেন। বিশেষ করে তাদের প্রতি যারা কোন কষ্টকর সময় পার করছেন। সামাজিক দক্ষতা পরিমাপ করে দেখে গেছে যে, একজন একাকী মানুষ আর দশটা মানুষের মতোই দক্ষ ও সামর্থ্যবান। তাই বিষয়টা এমন নয় যে যারা একাকিত্ব বোধ করেন তাদের নতুন করে সামাজিক দক্ষতা শিখতে হবে। তবে তারা পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়া বা মানসিক চাপ কাটিয়ে ওঠার বিভিন্ন কৌশল শিখে নিতে পারেন। এটা তাদের জন্য সহায়ক হবে।
৪. কথোপকথন শুরু করুন: অপরিচিতদের কারো সঙ্গে কথাবার্তা শুরু করার জন্য এক ধরণের মানসিক শক্তির প্রয়োজন। কিন্তু এজন্য আপনাকে শুরুতেই গভীর কোন কথা বলতে হবে, এমনটা নয়। যুক্তরাজ্যে কথোপকথন শুরুর সবচেয়ে জনপ্রিয় বিষয় হল আবহাওয়া। কেননা একেকজনের কাছে আবহাওয়ার ব্যাখ্যা একেক রকম। আপনি দোকানে বা বাস স্টপে যে কারও সঙ্গে কথা শুরু করার জন্য বলতে পারেন যে আজকের আবহাওয়া বেশ ‘গরম / ঠাণ্ডা / আর্দ্র অথবা সুন্দর। তাই না?’ তবে এ উপায়টি কারো সঙ্গে গাঢ় বন্ধুত্ব গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কাজ করবে না। এটা আপনাকে শুধুমাত্র অন্য মানুষের সঙ্গে সংযুক্ত থাকতে সাহায্য করবে। প্রতিবার যখন আমরা কারো সঙ্গে কথা বলি, সেটা যদি অপ্রাসঙ্গিকও হয় তারপরও আমরা এটা বুঝতে পারি যে আমরা সবাই একই বিশ্বে পাশাপাশি থাকছি।
৫. আপনার অনুভূতি সম্পর্কে বন্ধুবান্ধব বা পরিবারের সঙ্গে কথা বলুন: এই সমাধানটির কথা সাধারণত তারাই বলেন যারা একাকিত্ব বোধ করেন না। এতে বোঝা যায় যে, এ ধরণের সমাধান দেয়া যতোটা সহজ, বাস্তবে করা ততোটা সহজ না। বিশেষ করে যারা তীব্র মাত্রায় একাকিত্বে ভোগে তাদের ক্ষেত্রে এই সমাধান মূল্যহীন। এখনো এমন অনেকে আছেন যাদের একাকিত্বকে ঘিরে নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। তবে ভাল খবর হল যে এখন অনেকেই নিজেদের একাকিত্বের বিষয়ে কথা বলতে আগ্রহী হচ্ছেন। আপনার ব্যাপারে অন্যের প্রতিক্রিয়া কি হতে পারে, এ নিয়ে আপনি হয়তো উদ্বিগ্ন হতে পারেন। কিন্তু জরিপে দেখা গিয়েছে যে, মানুষ সাধারণত একাকীত্বে আক্রান্তদের ব্যাপারে খারাপ কিছু ভাবেন না। যারা একাকী নন, তাদেরকেও একাকীত্ব থেকে বেরিয়ে আসার সমাধান খুঁজতে এই জরিপে সময় ব্যয় করতে দেখা গিয়েছে।
৬. প্রতিটি মানুষের ইতিবাচক দিকটি দেখার চেষ্টা করুন: জরিপে দেখা গিয়েছে যে যারা একাকিত্ব ভোগেন, তাদের অন্যের প্রতি বিশ্বাসের ভিত্তিটা নড়বড়ে। তাই এই সমাধানটির মূল বিষয়বস্তু হলো, মানুষের ভেতর থেকে এমন ভাল কিছু খুঁজে বের করা যেন তার প্রতি বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ে। আপনি যদি মনে করেন যে কেউ আপনাকে তিরস্কার করেছে বা কটু কথা বলেছে। তাহলে ভেঙ্গে না পড়ে, ইতিবাচক-ভাবে ভাবুন। নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, আপনার বিরুদ্ধে তার কথাগুলো সত্য কিনা। সে ব্যাপারে কোন প্রমাণ আছে কিনা। না হলে ভিন্নভাবে ভাবুন। সম্ভবত তারা ব্যস্ত বা ক্লান্ত ছিল অথবা তাদের মন খারাপ বা মানসিক চাপের মধ্যে ছিল।
৭. আপনি কেন একাকিত্ব বোধ করেন সে ব্যাপারে জানুন: প্রতিটি মানুষের একাকিত্বের কারণ আলাদা। কেউ হয়তো শারীরিকভাবে নিজেকে বিচ্ছিন্ন মনে করেন, আবার কেউ হয়তো শিকার হয়েছেন বৈষম্যের, কারও পক্ষে অন্যকে বিশ্বাস করা কঠিন, আবার অনেকেই জানেন না নিজের মন মানসিকতার সঙ্গে মিল আছে এমন মানুষ কোথায় পাবেন। একাকিত্ব থেকে বেরিয়ে আসার সমাধান বের করার সবচেয়ে কার্যকর পদক্ষেপ হলো, কেন একাকিত্ব অনুভব করছেন সেটা আগে জানা। এক্ষেত্রে আপনার সমাধান যদি কাজ না করে তাহলে অন্য কিছু চেষ্টা করুন।
৮. অপেক্ষা করুন: আমরা জানি যে একাকিত্বের এই অনুভূতি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অস্থায়ী, তাই এটি কিছু মানুষের ক্ষেত্রে হয়তো কাজ করবে। তবে যারা দীর্ঘস্থায়ী একাকিত্বে ভুগছেন তাদের জন্য হয়তো অন্য কোন সমাধান কার্যকর হতে পারে। যারা একাকিত্বে ভুগছেন তাদের বেশিরভাগই জানিয়েছেন যে একাকিত্বের এই অনুভূতি সময়ের সাথে চলে যায়। তাই সে পর্যন্ত অপেক্ষা করা তাদের ক্ষেত্রে কাজে দিয়েছে। জরিপে দেখা গিয়েছে যে একাকীত্বের অনুভূতি সময়ের সঙ্গে অদৃশ্য হয়ে যায়।
৯. প্রত্যাখ্যাত হওয়ার ভয় কাটিয়ে উঠুন: মানুষকে আপনার সাথে কোন কাজ করতে বলা, বা সাহায্য চাওয়া ভাল অভ্যাস। প্রত্যেকেই এটা ভাবতে চান যে তাদের মতো হয়তো অন্যরাও কোন কাজের প্রতি সাড়া পেলে খুশি হয়। কিন্তু তাদের থেকে কখনো কখনো উত্তর ‘না’ আসতে পারে। আপনাকে এই ‘না’ শোনার ভয় কাটিয়ে উঠতে হবে। কেউ যদি বলেন যে সেদিন তিনি ব্যস্ত আছেন, তাহলে আসলেই হয়তো তিনি ব্যস্ত আছেন। তাই হুট করে এটা ভেবে বসবেন না যে তারা আপনাকে এড়িয়ে চলছেন। অন্যের ‘না’-কে স্বাভাবিকভাবে নিন।