বুড়িগঙ্গায় নৌকাডুবি, ১ লাশ উদ্ধার, নিখোঁজ ৫

জিএস নিউজ ডেস্কজিএস নিউজ ডেস্ক
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ১২:৪১ পিএম, ০৯ মার্চ ২০১৯

অনলাইন ডেস্ক:>>>

শুক্রবার ছিল বোনের বিয়ে। তাই আগের দিন সন্তান স্বামী নিয়ে বাবার বাড়িতে যাত্রা করেছিলেন জামসেদা বেগম। সঙ্গে ছিলেন পরিবারের ৬ সদস্য। কিন্তু আর যাওয়া হলো না বোনের বিয়েতে। এক নিমিষেই শেষ হয়ে গেলো একটি পরিবার। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টায় নৌকাযোগে কেরানীগঞ্জ থেকে সদরঘাট যাওয়ার পথে ঘটে দুর্ঘটনা। সদরঘাটের কাছাকাছি পৌঁছালে সুরভি-৭ নামের একটি লঞ্চের ধাক্কায় নৌকাটি ডুবে যায়। নৌকার মাঝি সাঁতরে উঠতে পারলেও নৌকায় থাকা যাত্রী একই পরিবারের ছয় সদস্য পানিতে তলিয়ে যায়।

পরে দুই পা বিচ্ছিন্ন অবস্থায় জামসেদার চাচাতো ভাই শাহজালাল (৩৮) ও নিহত জামসেদা (২০)’র লাশ উদ্ধার হলেও নিখোঁজ রয়েছে এই পরিবারের পাঁচ সদস্য।

পরিবারের নিখোঁজ সদস্যরা হচ্ছে- পোশাক শ্রমিক শাহজালালের স্ত্রী সাহিদা বেগম (৩২), দুই মেয়ে মিম (৮) ও মাহি (৬), জামসেদার স্বামী দেলোয়ার হোসেন (২৮) ও তাদের সাত মাস বয়সী সন্তান জুনায়েদ।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বরিশালগামী সুরভি-৭ লঞ্চটি সদরঘাট থেকেই দ্রুত গতিতে চলছিল। এর মধ্যেই সদরঘাটগামী ওই নৌকাকে ধাক্কা দেয় লঞ্চটি। মুহূর্তের মধ্যেই নৌকাটি ডুবে যায়। এ সময় ‘বাঁচাও বাঁচাও’ বলে চিৎকার করছিলেন শাহজালাল ও তার পরিবারের সদস্যরা। বুড়িগঙ্গা নদীর মধ্যখানে এ ঘটনা ঘটায় এই চিৎকার শুনেছেন কম মানুষই। তবে দূর থেকে এই দৃশ্য দেখে এগিয়ে যায় নৌ-পুলিশের একটি টিম। তারা দ্রুত গিয়ে শাহজালালকে উদ্ধার করেন।

ততক্ষণে লঞ্চের পাখার আঘাতে শাহজালালের দুই পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। নৌ-পুলিশের সদস্যরা শাহজালালকে উদ্ধার করে মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে তাকে পঙ্গু হাসপাতালে পাঠানো হয়। ওই সময়ে নৌকার মাঝি সাঁতরে পাড়ে উঠতে সক্ষম হন। কিন্তু নৌকায় থাকা শাহজালাল ছাড়া ওই পরিবারের অন্য সদস্যদের জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। গতকাল দুপুর পৌনে ১২টার দিকে নৌ-পুলিশের সহযোগিতায় ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল জামসেদার লাশ উদ্ধার করে। বাকি নিখোঁজ পাঁচ জনকে উদ্ধারে চেষ্টা করছে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি, নৌপুলিশ ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) সদস্যরা। নিখোঁজদের উদ্ধার করতে বৃহস্পতিবার রাত ১১টা থেকেই তিনটি ইউনিট, ছয়টি স্পিটবোড, পাঁচটি অগ্নিশাসকসহ প্রায় ২৭ জন ডুবুরি কাজ করে যাচ্ছে।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ঢাকা জোন-৩ এর সহকারী পরিচালক মোস্তফা মহিউদ্দিন জানান, নৌকাটিতে সাতজন যাত্রী ও একজন মাঝি ছিলেন। সাতজনের মধ্যে একজনকে দুই পা বিচ্ছিন্ন অবস্থায় পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে জামসেদার লাশ দুপুরে উদ্ধার করা হয়েছে। বাকিরা এখনও নিখোঁজ। তারা সবাই একই পরিবারের সদস্য।

সদরঘাট নৌ-থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক জানান, রাত সাড়ে ১০টার দিকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। সেখান থেকে শাহজালালকে তারা উদ্ধার করেন।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে এসে পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একে এম এনামুল হক শামীম বলেন, বিআইডব্লিউটি’র অফিসে যুগ্ম সচিব আরিফুজ্জামানের সঙ্গে ফায়ার সার্ভিস, নৌ-পুলিশ, নৌবাহিনী প্রতিনিধিদের আলোচনা হয়েছে। দুর্ঘটনা স্থলে সকল নৌযান, বিশেষ করে বালির বালকেট বন্ধ করে অভিযান চালানো হবে। জানা গেছে, এই ঘটনায় বিআইডব্লিউটিএ’র পরিচালক মো. শাহজাহানের নেতৃত্বে তিন সদস্য’র তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী তিন কার্যদিবেসে মধ্যে এই ঘটনার প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে।

মালকান্দির বিয়েবাড়ি এখন মৃত্যুপুরী: শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ তারাবনিয়া ইউনিয়নের জাফর আলী মালকান্দি গ্রামের কামাল চোকদারের মেয়ে খাদিজা আক্তারের বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল শুক্রবার। বিয়েতে যোগ দিতে জামসেদা ও তার চাচাতো ভাই শাহজালালের পরিবার এক সঙ্গে ঢাকা থেকে গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হন। তারপরই ঘটে দুর্ঘটনা। খবর পেয়ে খাদিজার বিয়ের অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়। বিয়ে বাড়িতে শোকের মাতম চলছে। অনেক স্বজন তাদের সন্ধানে ঢাকায় বুড়িগঙ্গার তীরে ছুটে যান।

শুক্রবার দুপুরে বাড়ির উঠানে বসে বিলাপ করছিলেন জামসেদার বাবা কামাল চোকদার। তিনি বারবার বলছিলেন, আমার মা’রে আর নানু ভাইরে আইন্না দে। অগো কইছিলাম রাইতের লঞ্চে আহিসনা। একদিন আগে দিনে আয়। আমার সব শেষ হইয়া গেল।

শাহজালাল চোকদারের বাবা মহসিন চোকদার বলেন, আমরা গরিব মানুষ। অভাবের সংসার হওয়ায় শিশু বয়সেই ছেলেকে কাজে ঢাকায় পাঠাই। সেখানে দর্জি কাজ শিখেছিল। ভালোই আয় রোজগার করত। তার পাঠানো টাকায় আমরা চলতাম। বৌ আর নাতনি দুইটার খোঁজ পাচ্ছি না। ছেলেটার দুইটা পা বিচ্ছিন্ন হইয়া গেছে। আল্লাহ কেন এত বড় বিপদ দিলা আমারে। ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাব্বির আহম্মেদ বলেন, নৌ-দুর্ঘটনায় একই পরিবারের ছয় জন নিখোঁজ থাকার বিষয়টি অত্যন্ত বেদনা দায়ক। সরকারি সংস্থাগুলো নিখোঁজ ব্যক্তিদের সন্ধান করছে। ওই পরিবার গুলোর পাশে উপজেলা প্রশাসন সার্বক্ষণিক থাকবে।

আপনার মতামত লিখুন :