দাবি বাস্তবায়ন ছাড়া ঘরে ফিরবে না শিক্ষার্থীরা

স্টাফ রিপোর্টার:>>>
শুক্রবার সন্ধ্যা ৬ টা ছাত্রছাত্রীদের রাজধানী নিরাপদ সড়কের দাবিতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন অনুষ্ঠিত হয়। তবে সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় তাদের উপস্থিতি কম আছে দুপুর থেকে রাজধানী সাত পয়েন্টে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ দেখা যায় তাদের।
তুলনামূলক সংখ্যা কম হলে গতকাল তাদের দেখা যায় গাড়ি চালকদের লাইসেন্স যাচাই করা। তারা দাবি বাস্তবায়নে পাশাপাশি মিরপুর এলাকায় গত বৃহস্পতিবার শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ ও বহিরাগতদের হামলার প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
সব দাবি বাস্তবায়িত না হওয়া পর্যন্ত তারা কর্মসূচী বন্ধ করা হবে না বলে বক্তব্য রাখেন। এদিকে নিরাপদ সড়ক দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর রাজধানী বিভিন্ন জায়গায় আতঙ্কের হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এদিকে গতকাল সকাল থেকে রাজধানী বাস চলাচলের বন্ধ মালিক ও শ্রমিকরা। সায়েদাবাদ থেকে যাত্রাবাড়ী এলাকায় পরিবহন শ্রমিকরা লাঠি হাতে বিক্ষোভ দেখা যায়। শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কে প্রচুরসংখ্যক পুলিশও দেখা যায়। বিমানবন্দর সড়কে জাবাল নূর পরিবহনের বাসচাপায় শহীদ রমজ উদ্দিন কানননমেন্ট কলেজের ছাত্র আব্দুল করিম রাজীব ও দিয়া খানম মেমকে হত্যার ঘটনা থেকে গত ২৯ জুলাই ছাত্ররা রাজপথ আন্দোলন চলছে। ফলে ভেঙে পড়া যোগাযোগবিষয়ক সংস্থা
গতকাল সকাল ১১ টার দিকে মিরপুর ও আসাদ গেট এলাকায় মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করার জন্য শিক্ষার্থীদের দেখা হয়েছে। পরে দুপুর ১২ টার পরে উত্তরা, শাহবাগ, বাড্ডা প্রগতি সরণি, ধামমন্দি ও যাত্রাবাড়ী রাইরবগ কিছু ছাত্রী জড়ো হয়ে স্লোগান দো। এ সময় তারা আগের চার দিনের মত গাড়ী কাগজপত্র যাচাই করে। সকাল ১১ টা কিছু ছাত্রী মিরপুর ১ নম্বরে একত্রিত হয়ে মানববন্ধন করে। দুপুর ১ টায় মিরপুর ১০ নম্বর গোলচেতাতে মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, বিইউবিটি, বিসিআইসি কলেজে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী অবস্থান নেয়। তাদের একজন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির বিবিএর ছাত্রছাত্রী তাহরিম সামি বলেন, ‘আমরা নৌপরিচালক শাজাহান খানের পদত্যাগ চান। অনেকে বলছেন, এটা বিএনপি দাবি। কিন্তু না, এটা সাধারণ ছাত্রদের দাবি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। ‘এক ছাত্রের নাম না লেখার শর্তে বলে,’ অনেক আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। আমরা চাই ফিটনেসবিহীন, অকার্যকর ড্রাইভার এবং গাড়ির সাথে রাস্তায় বের হবেন না আমাদের ন্যায্য দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন থামাবে। ‘
কয়েকজন শিক্ষার্থী অভিযোগ করেছেন, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মিরপুর ২ নম্বরে ১৫ থেকে ২০ জন শিক্ষার্থীকে পুলিশ মারধর করে। এ সময় ১৩ নম্বরে ছাত্রদের ওপর হামলা চালানো পুলিশ ও বহিরাগতরা
শিক্ষার্থীদের মিরপুর ১০ নম্বর যানবাহনের লাইসেন্স যাচাই করা হয়েছে। তাদের দুজন এক হাত ইশারায় গাড়ি পার হচ্ছে। অনেকগুলি পথচারীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার
সকাল ১১ টার দিকে ধানমন্ডি ২৭ নম্বর, আড়ং এবং আসাদ গেট এলাকায় অবস্থান নেয় কয়েক শ ছাত্র। তাদের কেউ মানববন্ধন করা হয়, অনেকে রাস্তায় নেমে গাড়ি শৃঙ্খলা আনবার কাজে যুক্ত হয়। এ সময় তাদের হাত বিভিন্ন স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড দেখা যায়। আন্দোলনকারীদের একজন তৌহিদ আসাদ বলেন, ‘শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি দিন এবং বিসিএস পরীক্ষার জন্য বড় ধরনের কর্মসূচিতে যাওয়া হয়নি। তবে গণসাক্ষর অভিযানের মতো কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হচ্ছে। ‘শনি ও রবিবারের বন্ধুগণ ফেসবুকের সাথে যোগাযোগ করে সিদ্ধান্ত নেবে বলেও তাওহীদ বলেন।
দুপুর ১২ টার দিকে রাজধানীর উত্তরা হাউস বিল্ডিংয়ের সামনে মানববন্ধন করে শিক্ষার্থীরা বললো, সরকার মৌখিকভাবে তাদের ৯ ডাফার দাবি মেনে নিয়েছে কিন্তু শিক্ষার্থীরা লিখিত পদক্ষেপ এবং প্রজ্ঞাপন চায়। তারা অভিযোগ করেছে, অতীতে সরকার ছাত্রছাত্রীদের অনেক দাবি মেনে নিলেও পরে বাস্তবায়ন হয়নি। শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, শুক্রবার জুমার নামায, তাই তারা সড়ক অবরোধ করেছে উত্তরে বিপুলসংখ্যক পুলিশ সড়কে অবস্থান নেয়। তারা মানববন্ধনে দাঁড়াতে সময় ছাত্রদের আইডি কার্ড পরীক্ষা করে। আইডি কার্ড ব্যতীত কোন শিক্ষার্থী মানবপন্থী বা রাস্তায় অবস্থান করার জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে
আশা ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী রাহাত বলেন, ‘আজ আমরা শুধু মানববন্ধন পালন করছি পালন করা হচ্ছে। আজ কোনও ছাত্র সড়ক অবরোধ করছে না কিন্তু আমাদের দেওয়া দাবি লিখিত পদক্ষেপ না পাওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়ব না।
আগামীকাল (শনিবার) সকাল ৮ টা থেকে সড়কে অবস্থান নেব। ‘রাশেদুল হাসান নামে আরেক ছাত্রী বলে, আর কত দিন এভাবে রাস্তা দুর্ঘটনায় মানুষ প্রাণ যাবে? সরকার এগুলো মনিটরিং করছে না পরিবহন চালকরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে তাদের বেপরোয়া মনোভাব রুখতে আমিও একমত হয়েছি। ‘
রাজধানী নীলক্ষেত মোড এবং সায়েন্স ল্যাবরেটরি গত কয়েক দিন মত আন্দোলন নেই। তবে সেলেহা মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয়, সিটি কলেজ ও ঢাকা কলেজের ৮-১০ জন শিক্ষার্থী দুপুরের পর বিভিন্ন গাড়ি কাগজপত্র যাচাই করা শুরু হয়েছে। তারা ধামাঙ্গী ১ নম্বর সড়কে রাকিশা, মোটরসাইকেল, সিএনজি ও ব্যক্তিগত গাড়িসহ সব ধরনের যানবাহন একদিকে যেতে বাধ্য। এ সময় অতিরিক্ত রিকশা থাকার কারণে ১ নম্বর সড়কের মাথা পার্কে যানজট গিয়ে ঠাকুম ঝগাটালে বিকেল ৩ টা থেকে ৪ টা পর্যন্ত যানজট পড়ে বেশ কয়েকজন যাত্রী বিরক্ত হয়ে রাস্তায় নেমে আসে। তারা শিক্ষার্থীদের রাস্তা ছেড়ে দেওয়ার জন্য বললে তারা চলে যায়
বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে শাহবাগ মোড়ে কয়েকজন শিক্ষার্থী জড়ো হলেও তাদের রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা দেখা হয়েছে। সকাল থেকে শাহবাগ এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন সেখানে। বিকালে ৩ এ অনেক শিক্ষার্থী শান্তির অবস্থানের সাথে ৪ টার দিকে চলে যায়। তারা কিছু সময় স্লোগান দেয় পুলিশ রমনা জোন অতিরিক্ত উপকমিশনার মো। আজিমুল হক বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের মধ্যে তৃতীয় পক্ষ ঢুকেছে এমন কিছু করতে না পারলেও নজর রাখা হবে। শিক্ষার্থীদেরও বিষয়টি বোঝানো হচ্ছে। ‘
সায়েদাবাদে শ্রমিক অবস্থান: সড়ক পরিবহন ভাংচুর, শ্রমিকদের হামলার প্রতিবাদ ও তাদের নিরাপত্তার দাবি রাজধানী সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল সামনে সড়ক অবরোধ ধর্মঘট করে পরিবহন শ্রমিকরা। এ সময় টার্মিনাল থেকে কোনও পরিবহন ছাড়াইনি। শ্রমিকরা জানায়, সরকার যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবে না, ততদিন পর্যন্ত তারা তাদের কাজে যোগ দেবে না
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শ্রমিকরা লাঠিসিনতা নিয়ে যাত্রাবাড়ী মোড় পর্যন্ত চলে গেছে। তখন পুলিশ তাদের আটকে দেয় সেই সময় যাত্রাবাড়ীর রায়েরবাগে রাস্তায় অবস্থান নেয় শত শত শিক্ষার্থী। তারাও বিক্ষোভ করছে পুলিশ শ্রমিকদের সায়েদাবাদে ফেরত আনা হলে উত্তেজনা কমে যায়। শিক্ষার্থীদের রায়েরবাগে বিকেল সাড়ে ৩ টা পর্যন্ত অবস্থান করে।
বিক্ষোভের অনাবল পরিবহনের হেলপার মিরা উদিন বলেন, ‘আমরা সরকার ও মালিকপক্ষসহ সবাইকে জানিয়ে দিয়েছি, যতদিন পর্যন্ত আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারত ততদিন পর্যন্ত আমরা রাস্তায় গাড়ি থামাতে পারতাম না।’
বেড়েছে পুলিশি তৎপরতা: শিক্ষার্থীদের প্রতীকী কর্মসূচী পরে সড়কে লাইসেন্স করাহীন মোটরযানচালকদের বিরুদ্ধে তৎপর হয়ে উঠছে ট্রাফিক পুলিশও। বিশেষ করে মোটরসাইকেলের নজরে রাখা তারা গতকাল রাজধানী মহাখালী, বিজয় সরণি, ধামমন্দি, খামারবাড়িসহ বেশ কিছু এলাকা এ রকম চিত্র দেখা গেছে। সকাল থেকে মোটরসাইকেল, সিএনজি, প্রাইভেট কার থামিয়ে রেজিস্ট্রেশন, চালক লাইসেন্সসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চেক করতে দেখা গেছে ট্রাফিক পুলিশ। ত্রুটি পেলে জরিমানাও হয়। পুলিশ এত দায়বদ্ধতা দেখছি পথচারীদের কেউ হাতলবিশেষ আছে। পুলিশ এই ভূমিকায় ‘শাশা, শাবাব’ শব্দটি উচ্চারণ করে সাধুবাদ জানায় পথচারীরা।
মহাখালী বাসিন্দা বশির উদ্দিন বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের দেখানো পথে লাইন এসে গেছে ট্রাফিক পুলিশ। বাচ্চারা বৃষ্টির ভিজে দেখিয়েছে, আমরা কতটা দুর্নীতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি রাস্তা। ‘
সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় ধামংঘী ১ নম্বর সড়ক দুপুর ২ টা এক মোটরসাইকেলচালক আটক করা ট্রাফিক পুলিশ সদস্য। তখন চালক নিজেকে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সাথে পরিচয় দিয়ে দাপটের সাথে চলে যায়। পরে ট্রাফিক পুলিশের একজন সদস্য কালের কণ্ঠে বলেন, ‘যখন আমরা কাগজপত্রের জন্য আটক হয়েছি তখন নিজেকে এই কলেজে, সেই কলেজের প্রেক্ষাপটে দাপটের সাথে চলে যায়। এভাবে যাকেই ধরি কেউ বড় বড় কেউ কেউ অনেক নেতার নিকটতম লোক এভাবেই চলছে, অথচ সব দোষ ট্রাফিক পুলিশ। ‘তিনি দাবি করেন, শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে অথচ তাদের ৯০ শতাংশ কোন কাগজপত্র নেই!
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর বিভিন্ন স্থানে হামলা: নিরাপদ সড়ক দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর বিভিন্ন স্থানে হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। মিরপুরের রূপনগর ১০ নম্বর সড়কটি গতকাল বিকেল সাড়ে ৬ টায় যানবাহনে চরম সংঘাত নিয়ন্ত্রণ ছিল এক দল শিক্ষার্থী। এ সময় স্থানীয় কিছু যুবক তাদের উপর চড়াও হয়। তারা দুজন শিক্ষার্থীকে মারধর করে পথ থেকে সরিয়ে দেয় এ ঘটনার পর সন্ধ্যা ৭ টার দিকে কমার্স কলেজের সামনে ছাত্ররা জড়ো হয়। সেখানে তারা রাত ৯ টা পর্যন্ত যাচাইকরণ এবং শৃঙ্খলা রক্ষা কাজ করে।
এ ছাড়া গতকাল বিকেলে ঢাকায় ৭ / এ সড়কে বেসরকারি ইউনিভার্সিটি ইউল্যাব শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করা হয়েছে একদল দুর্বৃত্ত। ইউল্যাব শিক্ষার্থী ফয়সাল মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিকেল ৩ টার দিকে মানববন্ধন শেষে রিকশায় ফিরে যাওয়ার সময় কয়েকজন যুবক এসে অস্থায়ী আমাদের মারধর শুরু করে। শিক্ষার্থীদের ওপর এই হামলার ছবির ছবি তুলে ধরে দুর্বৃত্তদের মারধর শিকার শিকার হয়েছেন প্রদীপ দাস নামের এক সাংবাদিক।
ইউসুফের ছাত্রদের ওপর হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে ধামমন্দি থানার ওসি আবদুল লতিফ বলেন, হামলার খবর পাওয়া যাচ্ছে তদন্ত চলছে। ঘটনার জড়িতদের আটক করা হবে