একতরফা নির্বাচন করতেই শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হচ্ছেঃরিজভী
স্টাফ রিপোর্টার:>>>
একতরফা নির্বাচন করতেই সরকারের সাজানো ‘ছকে’ পুলিশ দলের মহাসচিবসহ শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। গতকাল মঙ্গলবার সকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশের কাছে আষাঢ়ে গল্পের একটা ফরমেট সবমসয় প্রস্তুত করা থাকে। মামলা দেয়া ও গ্রেফতারে সেগুলো ব্যবহার করে থাকে। এবারো পুলিশ ঠিক তাই করেছে। সেই একই ফরমেটের ধারাবাহিকতায় আমাদের মহাসচিবসহ জ্যেষ্ঠ সকল নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে।
সরকার একতরফা নির্বাচন করতে ছক ধরে এগুচ্ছে মন্তব্য করে রিজভী আরো বলেন, সারাদেশ নিঃশব্দ ও জনশূন্য করার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে জ্যেষ্ঠ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের এই ঘটনা সেটিরই প্রথম পদক্ষেপ বলে আমরা মনে করি। রিজভী বলেন, গত রোববার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপির বিশাল জনসভার পর থেকে সরকার আরো বেশি ক্ষিপ্ত ও প্রতিশোধপরায়ন হয়ে উঠেছে। ওই জনসভার শেষে পাইকারি হারে নেতা-কর্মীদের গ্রেফতারের পরও তাদের পরিতৃপ্তি হয়নি। এখন দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের তালিকা ধরে তাদের বিরুদ্ধে রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় পুলিশের কাজে বাঁধা ও নাশকতা হাস্যকর মিথ্যা বানোয়াট, ষড়যন্ত্রমূলক মামলা পুলিশ দিয়েছে।
তিনি বলেন, বাকশালী শাসনকালের পুনরাবৃত্তি পরিপূর্ণরূপে আত্মপ্রকাশের কিছুটা ঝলক আমরা এই মামলার মধ্য দিয়ে দেখতে পারছি। কারণ আগামী নির্বাচন হবে সম্পূর্ণ একতরফা নির্বাচন, আগামী নির্বাচন হবে শেখ হাসিনার মনগড়া নির্বাচন। আগের সেই পাতানো ও সিলেকশনের নির্বাচনই তিনি করতে চান। একটা অংশগ্রহনমূলক প্রতিযোগিতামূলক সুষ্ঠু নির্বাচন তিনি চান না এবং চান না বলেই সেই আলামত সুস্পষ্টভাবে ফুঁটে উঠলো দলের মহাসচিব, স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ জ্যেষ্ঠ নেতাদের নামে এই মিথ্যা মামলা দায়ের করে।
সোমবার হাতিরঝিল থানায় পুলিশের কাজে বাঁধা ও নাশকতার মামলায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুসহ ৫৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।
সবার কাছে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, আপনারা কেউ দেখেছেন কী কোথাও কেউ সেদিন জনসভা শেষে পুলিশের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়েছে? অথচ আমরা গণমাধ্যমে এবং প্রত্যক্ষদর্শীরা যারা দেখেছেন ঈগলের মতো চিলের মতো পুলিশ ছোঁ দিয়ে কর্মীদের টানছে এবং ভ্যানের মধ্যে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। কোথাও কোনো ইট-পাটকেল ছোঁড়া বা একটা ফুলের পাঁপড়ি নিক্ষেপ করেছেন এটার কেউ কোনো প্রমাণ দেখাতে পারবে না। পুলিশ একটা পাতানো ষড়যন্ত্র করে এই মামলায় জ্যেষ্ঠ নেতৃবৃন্দের নাম দিয়েছে। আমি এই ষড়যন্ত্রমূলক মামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে তা প্রত্যাহারের জোর দাবি জানাচ্ছি। ঢাকা, টাঙ্গাইল, ভোলা, ঝিনাইদহ, নারায়নগঞ্জ, কুমিল্লা,নরসিংদী, নোয়াখালীসহ বিভিন্ন জেলায় নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েরী মামলা দায়েরের তালিকা তুলে ধরেন রিজভী।
তিন বলেন, আওয়ামী সরকার আর কোনোভাবে কোন বিরোধী দলের অস্তিত্ব মানতে পারছে না। তারা এখন ফ্যাসিবাদের চরম মাত্রায় পৌঁছে গেছে। ক্ষমতাকে যক্ষের ধনের মতো আঁকরে ধরে রাখার জন্য কুটিল রাজনীতি ও ষড়যন্ত্রই হচ্ছে আওয়ামী রাজনীতির পরিচিতি। সরকারপ্রধানসহ আওয়ামী নেতাদের প্রতিদিনের ভাষা, সংলাপ, জবাব সন্ত্রাসী-ক্রুরতার আস্ফালন ছাড়া অন্য কিছু নয়। যাদের রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি পীড়ন আর রক্তপাত নির্ভর, তারা জনমতের ভয় করে না- জবাবদিহিতা তো দূরে থাক। এমন নীতির কারণেই গত পরশু বিএনপির বিশাল জনসমাবেশের পর থেকে সরকার আরও বেশি ক্ষিপ্ত ও প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে উঠেছে।
সম্পাদক পরিষদের নৈতিকতা বলে কিছু নেই প্রধানমন্ত্রীর তথ্য প্রযুক্তি ও যোগাযোগ বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের দেয়া বক্তব্য নিয়ে ও প্রশ্ন তুলেছেন রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন সিনিয়র সাংবাদিকরাই সম্পাদক পদে উন্নীত হন। তারা সমাজের সঙ্গতি-অসঙ্গতি, শুভ-অশুভসহ নানা বিষয় গণমাধ্যমে প্রতিফলনের প্রধান দায়িত্ব পালন করেন। সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতির নানা বিভাজন ও জটিলতা বিচার বিশ্লেষণ করে মানুষকে পথ দেখাতে অভিমত ব্যক্ত করেন। অথচ তথ্য প্রযুক্তি উপদেষ্টার মতে এই সমস্ত গুনি ব্যক্তিদের মধ্যে কোন নৈতিকতা নেই। তাহলে নৈতিকতা আছে কাদের- আমি এই কথাটি জানতে চাই প্রধানমন্ত্রীর প্রযুক্তি ও তথ্য উপদেষ্টা মহোদয়ের কাছ থেকে।
রিজভী জানতে চান, ভোটার বিহীন সরকারের নৈতিকতা আছে? পদ্মাসেতু, শেয়ার বাজার, রাষ্ট্রীয় ব্যাংক, কেন্দ্রীয় ব্যাংক লোপাটকারীদের নৈতিকতা আছে? যারা কয়লা, পাথর গিলে খেয়েছেন তাদের নৈতিকতা আছে? দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বিচারের নামে প্রহসনকারীদের নৈতিকতা আছে? ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ক্ষমতার জোরে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা দায়েরকারীদের নৈতিকতা আছে? গণমাধ্যম দখলসহ বিরোধী দলের জোত জমিও দখলে নিচ্ছে।
তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন মৃত বাকশালের বিভিষিকাময় উত্থান। জনগনকে শত্রু পক্ষ মনে করে বলেই তাদের টুঁটি টিপে ধরতেই এই কালো আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। একদিকে মন্ত্রীরা বলছেন যে, এই আইনের গণবিরোধী ধারাগুলো নিয়ে মন্ত্রি পরিষদের বৈঠকে আলোচনা করা হবে। আবার অন্যদিকে নানা শ্রেনী-পেশার মানুষের প্রতিবাদকে তারা বিদ্রুপ করছে।



