ফেনী-১ আসনে নির্বাচনটা মজনুর নয় খালেদা জিয়ার

MD Aminul IslamMD Aminul Islam
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ১১:৪৮ এএম, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৮

স্টাফ রির্পোটারঃ>>>

খালেদা জিয়ার নামে ভোট করছেন তিনি। নাম তার রফিকুল আলম মজনু। তিনি ঢাকা মহানগর যুবদল দক্ষিণের সভাপতি। থাকেন ঢাকায়। গ্রামের বাড়ি ফেনী সদর উপজেলার সাতসতি গ্রামে। নির্বাচন করছেন ফেনী-১ (পরশুরাম, ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া) বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আসনে। নির্বাচনী প্রচারে শুরু থেকে রফিকুল আলম মজনু প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছেন, নির্বাচনটা তার নয়, তিনি খালেদার ছায়া মাত্র, খালেদাকেই প্রতিনিধিত্ব করছেন।

বিএনপি নেতারা বরাবরই বলেন, ফেনী-১ আসনের নির্বাচনের ব্যাপারে সব সময় একপক্ষ। খালেদা জিয়ার পৈতৃক বাড়ির বাসিন্দা হিসেবে এ অঞ্চলের মানুষ গর্ব করে থাকে। নির্বাচন এলে স্লোগান উঠে ‘ফেনীর মেয়ে খালেদা, গর্ব মোদের
আলাদা।’

নব্বুইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পর প্রথম নির্বাচন থেকে খালেদা জিয়া এ আসন থেকে লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করে আসছেন। তবে এবার খালেদা জিয়া মাঠে নেই। জেলে। তাতে কি, মজনুকে নিয়েই মাঠে বিএনপি নেতাকর্মীরা।

তবে এবারের চিত্র একটু ভিন্ন। বিগত সব নির্বাচনে ফেনী-১ যেমন খালেদাময় হয়ে থাকে, তা হয়নি। পিছিয়ে নেই মহাজোট প্রার্থী। সমানতালে চলছে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর প্রচার। ইতিমধ্যে প্রচারযুদ্ধ শুরু হয়েছে। মহাজোটের প্রার্থী জাসদ সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে তিনি এ আসন থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগ সদস্য ঢাকায় অবস্থিত ফেনী সমিতির সভাপতি শেখ আবদুল্লাহ।

ফেনী-১ আসনে ত্রিমুখী লড়াই শুরু হয়েছে। মহাজোট এবং আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা সুযোগ করে দিয়েছে মজনুর। তার প্রচার কৌশলও বেশ প্রকাশ্য। গ্রামের পর গ্রাম চষে বেড়াচ্ছেন। হাটবাজারে লিফলেট বিতরণ করছেন। এমনকী শালদহে পূর্বনির্ধারিত সভায় হামলা হওয়ার পরও তিনি গেছেন সেখানে এবং জনস্রোত দেখা গেছে তার পক্ষে।

শিরীন আখতার এবং শেখ আবদুল্লাহও পিছিয়ে নেই। শিরীন আখতার বলেন, গত এক সপ্তাহে তিনি ১২টির মতো পথসভা করেছেন। নৌকার পক্ষে মানুষের বিপুল সাড়ায় তিনি সন্তুষ্ট। তার দাবি, আওয়ামী লীগ থেকে একজন বিদ্রোহী প্রার্থী হলেও ওই দলের নেতাকর্মীরা তার সঙ্গে রয়েছেন। পাড়া-মহল্লায় নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। জয়ের ব্যাপারে তিনি শতভাগ আশাবাদী।

২০১৪ সালে বিএনপি ভোট বর্জন করেছিল। এবারও মামলাজনিত কারণে খালেদা জিয়া নির্বাচন করতে পারবেন না বলে এটা বুঝতে পেরে আওয়ামী লীগের চারজন এ আসনে মনোনয়ন পেতে চেয়েছিলেন। ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবুল বশর তপন বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন তাকেই দেওয়া হয়েছিল। পরে মহাজোট জাসদ সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতারকে মনোনয়ন দেওয়ায় তিনি প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে প্রত্যাহার করে নেন। এবারও আওয়ামী লীগ থেকে কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। তপনের বিশ্বাস, দলীয় কাউকে মনোনয়ন দেওয়া না হলেও দলের প্রতীক নৌকা যেহেতু শিরীন আখতারকে দেওয়া হয়েছে, সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবেন।

আওয়ামী লীগের নেতারা মুখে যাই বলুন না কেন, নির্বাচনের মাঠ ভিন্নকথা বলছে। দলের নেতাদের শিরীন আখতারের সঙ্গে দেখা গেলেও কর্মীরা থাকছেন শেখ আবদুল্লাহর প্রচারে। ২০১৪ নির্বাচনের পর থেকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শিরীন আখতার তাদের অসহযোগিতা করছেন বলে অভিযোগ করা হচ্ছে। পরশুরাম, ছাগলনাইয়া ও ফুলগাজীতে আওয়ামী লীগ প্রকাশ্য সভায় শিরীনকে বর্জনের ঘোষণা দিয়ে আসছিল। শিরীনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে সেই থেকে। স্থানীয় পর্যবেক্ষকরা জানান, মূলত শিরীন আখতারের পক্ষে আওয়ামী লীগের উপজেলা কমিটিগুলো কাজ করলেও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানরা রয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে। শেখ আবদুল্লাহর দাবি, তিনিই প্রকৃত আওয়ামী লীগ। তাই প্রতীক না পেলেও আওয়ামী লীগের কর্মী, সমর্থক ও ভোটাররা তার পক্ষেই থাকবেন।

তুলনায় ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী রফিকুল আলম মজনু অনেক সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন। পরশুরাম উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু তালেবের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি স্পষ্ট হলো। তালেব জানান, তিন উপজেলা বিএনপির সব কমিটি নিঃশর্তভাবে মজনু ভাইয়ের পক্ষে কাজ করছে। সাধারণ ভোটাররা ভোট দেবেন খালেদা জিয়াকে। খালেদা জিয়ার নামেই চলছে প্রচার। রফিকুল আলম মজনুও একই কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘ফেনী-১ এলাকায় আমি এমপি হতে আসিনি। খালেদা জিয়ার পতাকা উড়াতে এসেছি।’ তিনি বলেন, ‘মানুষ ভোট দেওয়ার সুযোগ পেলে আবারও ধানের শীষ লাখো ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করবে।’

আপনার মতামত লিখুন :