গাইবান্ধায় পিটিয়ে ৪ পুলিশ হত্যা: প্রধান আসামিরা ধরাছোয়ার বাহিরে

স্টাফ রিপোর্টারঃ>>>>
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় নির্মমভাবে পিটিয়ে চার পুলিশ হত্যার পঞ্চম বার্ষিকী আজ। ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সুন্দরগঞ্জের বামনডাঙ্গা পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালিয়ে চার পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকান্ডের পাঁচ বছরেও শুরু হয়নি বিচার কাজ। ধরাছোয়ার বাহিরে প্রধান আসামি। ফলে সন্তুষ্ট নন নিহত চার পুলিশ সদস্যদের স্বজনরা। ২০১৩ সালের এই দিনে জামায়াত নেতা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর ফাঁসির রায় ঘোষণার প্রতিবাদে গোটা সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় শুরু হয় বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের ক্যাডারদের সহিংসতা ও নারকীয় তান্ডব। যার নির্মম বলি হয়েছিল চার পুলিশ সদস্য। এ ছাড়াও ধ্বংসলীলা ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল ব্যাপক। সুন্দরগঞ্জবাসী সেই থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারিকে সুন্দরগঞ্জ ভয়াল ট্র্যাজেডি (কালো দিবস) হিসেবে স্মরণ করে থাকেন। আজও দিবসের পঞ্চম বার্ষিকী উপলক্ষে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা সদর ও বামনডাঙ্গায় শোক র্যালি, নিহত ৪ পুলিশের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পমাল্য অর্পণ, আলোচনা সভা ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
নিহত পুলিশ কনস্টেবলরা হলেন, গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার খামার ধনারুহা গ্রামের মৃত এছাহাক আলীর ছেলে নাজিম উদ্দিন, রংপুর জেলার পীরগাছা উপজেলার রহমতচর গ্রামের মৃত আনছার আলীর ছেলে তোজাম্মেল হক, কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার কিশামত গোবধা গ্রামের আবু শামার ছেলে হজরত আলী ও বগুড়া জেলার সোনাতলা উপজেলার ঠাকুরপাড়ার তফিজ উদ্দিনের ছেলে বাবলু মিয়া। নিহত পুলিশ সদস্যদের পরিবার ও স্বজনরা আজও রাষ্ট্রের প্রতি তাকিয়ে আছে ন্যায় বিচারের আশায়। সেদিনের সেই হামলাকারী বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা যেন আইনের ফাঁকফোকরে পার না পায় রাষ্ট্রের কাছেও এমনটাই প্রত্যাশা নিহত পুলিশ পরিবারের স্বজনদের। স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ জানায়, ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি মানবতা বিরোধী অপরাধের মামলায় দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায় দেয়াকে কেন্দ্র করে ওই দিন সারাদেশে হরতালের ডাক দেয় জামায়াত-শিবির। হরতাল চলাকালে সকাল থেকে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কঞ্চিবাড়ি, বেলকা, দহবন্দ, হরিপুর, বামনডাঙ্গা, সর্বানন্দ, তারাপুর, সোনারায়, রামজীবন ও ধোপাডাঙ্গা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেন জামায়াত-শিবিরের ক্যাডারসহ সাঈদী অনুসারী ও ভক্তরা। দুপুরের পর যখন রায় ঘোষণা করা হয় তখন বেপরোয়া হয়ে ওঠেন তারা।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা। এক পর্যায়ে জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা সুন্দরগঞ্জ উপজেলা শহর, মীরগঞ্জ বাজার, ধুবনী-কঞ্চিবাড়ি বাজার, বেলকা বাজার, ডোমেরহাট বাজার, বামনডাঙ্গা বাজার, বামনডাঙ্গা রেলস্টেশন, শোভাগঞ্জ বাজার, বামনডাঙ্গা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র ও ছাইতানতলা বাজারসহ বিভিন্ন বাজারের দোকানপাট-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় তারা বামনডাঙ্গা রেলস্টেশনে হামলা চালিয়ে রেলস্টেশন পুড়িয়ে ও রেললাইন উপড়ে ফেলে দেয়। এতে রংপুর, লালমনিরহাট রেল রুটে ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়ে। সেই সাথে বামনডাঙ্গা আওয়ামী লীগ অফিস, বেলকা কালিমন্দির, বামনডাঙ্গা কালিমন্দির ও গংশারহাট পূজা মন্দির গুঁড়িয়ে দেন তারা। এরপর সংঘবদ্ধ জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা একত্রিত হয়ে বামনডাঙ্গা রেলস্টেশনে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হন। এ সময় সংঘর্ষে ঘটনাস্থলে ৪ পুলিশ কনস্টেবল নিহত হন। জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা চার পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যার ১ বছর ৬ মাস ২৩ দিন অধিকতর তদন্তের পর ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর গাইবান্ধা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৩২ পৃষ্ঠার এ চার্জশিট দাখিল করেন সুন্দরগঞ্জ থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাম্মেল হক। চার্জশিটে গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের জামায়াত দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল আজিজ ও সর্বানন্দ ইউনিয়নের অবসরপ্রাপ্ত বিডিআর মজিবর রহমানের অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে সুমন মিয়াসহ ২৩৫ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। কিন্তু প্রধান আসামিরা আজও রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিয়ার রহমান বলেন জানান, ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত জামায়াত-শিবিরের ক্যাডারের সহিংসতায় পুলিশসহ নিহত হয়েছেন ১০ জন।
এসব ঘটনায় বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সুন্দরগঞ্জ থানায় ৪৫টি মামলা দায়ের হয়। মামলায় ১ হাজার ৫০৭ জন নামীয় আসামি ও ৭৪ হাজার ১১৫ জন অজ্ঞাত আসামি রয়েছেন। ৪ পুলিশ হত্যাসহ অধিকাংশ মামলার চার্জশিট আদালতে দাখিল করা হয়েছে। বর্তমানে মামলাগুলো আদালতে বিচারাধিন। দায়ের হওয়া এসব মামলায় এজাহার ও অজ্ঞাত ১২০০ বেশি আসামিকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। প্রধান আসামি ও অন্য আসামিদের গ্রেফতার অভিযান অব্যহত রয়েছে। সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এসএম গোলাম কিবরিয়া জানান, বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের ক্যাডারদের সহিংসতার ঘটনায় উপজেলায় মোট ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৪ কোটি ১৫ লাখ ৫৫ হাজার ৮৯০ টাকা। নিহত-আহত ও বসতবাড়ি-প্রতিষ্ঠানের ক্ষতিগ্রস্তরা বিভিন্ন সময়ে সরকারি সহায়তা হিসেবে চাল ও নগদ টাকা পেয়েছেন।