এ কেমন নির্যাতন!

সুনামগঞ্জের ধর্মপাশায় চোর সাব্যস্ত করে মানসিক ভারসাম্যহীন এক যুবককে হাত-পা বেঁধে বেধড়ক মারধর করেছে স্থানীয় কিছু মানুষ। গত বৃহস্পতিবার সকালে ধর্মপাশা উপজেলার সুখাইড় রাজাপুর উত্তর ইউনিয়নের সুখাইড় বাজারের পূর্বপাশে বৌলাই নদীর পাড়ে এ ঘটনা ঘটে। সম্প্রতি এ ঘটনার একটি ভিডিও হাতে হাতে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি জানাজানি হয়।
স্থানীয়রা জানান, নির্যাতনের শিকার যুবকটি মানসিক ভারসাম্যহীন। সে ওই এলাকারও নয়। বৃহস্পতিবার ভোরে নদী খননের কাজে নিযুক্ত ব্যক্তিদের হাউজ বোটে মোবাইল ফোন চুরির অভিযোগে তাকে আটক করা হয়।
এ সময় শ্রমিকদের সর্দার তাজুল ইসলাম, ড্রেজারের ইঞ্জিন অপারেটর জামিল হোসেন ও ড্রেজার ইঞ্জিনিয়ার কার্তিক কুমার ঘোষ ওই যুবককে হাত-পা বেঁধে বেধড়ক মারধর করেন। এ পর্যায়ে যুবককে মাটিতে ফেলে তার হাতের ওপর দাঁড়িয়ে পায়ের তলায় লাঠি দিয়ে পেটানো হয়। এ সময় তার চিৎকারে ছুটে আসে আশপাশের লোকজন। স্থানীয় এক ব্যক্তি সুযোগ বুঝে এই দৃশ্য মোবাইল ফোনে ধারণও করেন। যা সাংবাদিকদের কাছে রয়েছে।
স্থানীয়রা আরও জানান, ঘটনার পর থেকে যুবকটিকে আর এলাকায় দেখা যায়নি।
নির্যাতনকারী তাজুল ইসলাম, জামিল হোসেন ও কার্তিক কুমার পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন মেসার্স নুরুজ্জামান খান নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অধীনে কাজ করছেন। গতকাল ধর্মপাশা থানা পুলিশ বিষয়টি তদন্তে ঘটনাস্থলে যায়।
নদী খনন কাজের সুপারভাইজার শিমুল আল মাসুম জানান, চোর সন্দেহে ওই যুবককে মারধর করা হচ্ছে খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। পরে যুবকটিকে উদ্ধার করে স্থানীয় ইউপি সদস্য ইমান আলীর কাছে সোপর্দ করেন।
ইউপি সদস্য ইমান আলী জানান, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন ওই যুবকটিকে গাছের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে। স্থানীয় লোকজন ওই অজ্ঞাত যুবক মানসিক ভারসাম্যহীন বলে জানায়। তারপরও যুবকটির ওপর অত্যাচার চলতে থাকে। বাধা দিলে নির্যাতনকারীরা তাদেরকে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখায়। পরে তারা যুবকটিকে ড্রেজারের লোকজনের কাছে ফিরিয়ে দেন।
তাজুল ইসলাম ওই যুবককে মারধরের বিষয়টি স্বীকার করে জানান, হাউজ বোটে থাকা সোহাগ নামের এক ব্যক্তির মোবাইল ফোন চুরির সময় বুধবার রাতে ওই যুবককে আটক করা হয়। এর আগে তাদের বোট থেকে আরও দুটি দামি মোবাইল ফোন চুরি হয়েছে।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ধর্মপাশার ইউএনও মো. মামুন খন্দকার বলেন, ‘কেউ চুরি করলে তাকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করতে পারতো তারা। যদি মারধর করে থাকে তাহলে বিষয়টি অমানবিক।’