নুসরাতের বাড়িতে আসামীদের স্বজনরা, মামলা প্রত্যাহারের চাপ!

MD Aminul IslamMD Aminul Islam
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ১১:৩৬ এএম, ১৪ এপ্রিল ২০১৯
নুসরাতের পরিবারকে সমবেদনা জানান রুহুল আমীন (বাম থেকে প্রথম)

ফেনীর সোনাগাজীতে  অগ্নিদগ্ধ  নুসরাত জাহান রাফির পারিবারিক শোকে যোগ দিচ্ছেন মামলায় গ্রেফতার হওয়া আসামিদের স্বজনরা। তারা নুসরাতের পারিবারিক লোকজন ও আত্মীয় স্বজনদের কাছে গ্রেফতারকৃত এবং অভিযুক্তরা নির্দোষ বলে দাবি করছেন। মামলা প্রত্যাহার করতে নানাভাবে প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করছেন। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বিভিন্নভাবে চাপ দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন নুসরাতের স্বজনরা।

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নুসরাতের চাচাতো ভাই ফরহাদ  বলেন,  গ্রেফতার হওয়া নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীমসহ অন্যান্য আসামীদের  আত্মীয় স্বজনরা নিয়মিত এখানে এসে কান্নাকাটি করে তাদের স্বজন নির্দোষ- এসব বিষয় বলছেন। তারা নিয়মিত এখানে আসা যাওয়া করলেও আমরা তাদেরকে কিছু বলতে পারছি না। বিষয়টি নিয়ে আমরা বিব্রত।

এদিকে নুসরাত জাহান রাফির গায়ে আগুন দেওয়ার ঘটনায় মাদ্রাসার গভর্ণিং বডির সহ-সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি রুহুল আমীন জড়িত থাকতে পারে বলে খবর প্রকাশ করে একটি সংবাদমাধ্যম। তবে এলাকায় প্রভাবশালী হওয়ায় তার ব্যাপারে মুখ খুলছেন না কেউ। এলাকাবাসীর অভিযোগ সিরাজ উদ দৌলার হাতে নুসরাতের যৌন হয়রানির বিষয়টি শুরুতেই ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন এই রুহুল আমীন।

শুক্রবার বিকেলে নুসরাতের বাড়িতে পরিবারকে সমবেদনা জানাতে আসেন রুহুল আমীন। এরপর রাত ৯টায় ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম হাজারীর সাথে রাত ৯টায় আবার আসেন।

নুসরাতকে হত্যার ঘটনায় বিচার প্রার্থীদের অভিযোগ, ভুক্তভোগীদের বাড়িতে রুহুল আমীনের নিয়মিত আসা যাওয়ার ব্যাপারটি বিচার কাজে প্রভাব ফেলতে পারে। তাই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে ওই বাড়িতে গ্রেফতারকৃত ও অভিযুক্তদের আত্মীয়দের আনাগোনা বন্ধ করতে প্রশাসনের প্রতি আহবান জানান তারা।

উল্লেখ্য, গত ২৭ মার্চ ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগে মামলা করেন ওই ছাত্রীর মা। পরে ওই মামলায় গ্রেফতার করা হয় অধ্যক্ষকে।

গত ৬ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে আলিম (এইচএসসি) পর্যায়ের আরবি প্রথমপত্র পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে যান ওই ছাত্রী। এরপর কৌশলে তাকে পাশের ভবনের ছাদে ডেকে নেওয়া হয়। ওই সময় বোরকা পরিহিত ৪-৫ জন ওই ছাত্রীর শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে তার শরীরের ৮৫ শতাংশ পুড়ে যায়।

শিক্ষার্থীর পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেন, পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত কক্ষ থেকে নুসরাতকে ছাদে ডেকে নিয়ে কয়েকজন বোরকাপরা নারী পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যার চেষ্টা করে।

তারা জানান, মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগে দায়ের করা মামলা তুলে না নেয়ায় এ ঘটনা ঘটেছে। এ তথ্য ফেনী সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় স্থানীয় পুলিশকেও জানিয়েছেন ওই শিক্ষার্থী। তার অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় ওই দিন বিকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়।

পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগে মামলা করেন ওই ছাত্রীর মা। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ২৭ মার্চ সকাল ১০টার দিকে অধ্যক্ষ তার অফিসের পিয়ন নূরুল আমিনের মাধ্যমে ছাত্রীকে ডেকে নেন।

পরীক্ষার আধা ঘণ্টা আগে প্রশ্নপত্র দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ওই ছাত্রীর শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন অধ্যক্ষ। পরে পরিবারের দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার হন অধ্যক্ষ। সেই মামলা তুলে না নেয়ায় অধ্যক্ষের লোকজন ওই ছাত্রীর গায়ে আগুন দেয়।

পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান নুসরাত। গত বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।

জিএসনিউজ/এমএইচএম/এমএআই

আপনার মতামত লিখুন :