সবই তাদের জানা, কিন্তু পেটের দায়ে রাস্তায়
লকডাউনের মধ্যে প্রয়োজনীয় সহায়তা না পেয়ে অনেকেই নিয়ম ভেঙে বেরিয়ে পড়ছেন রিকশা চালাতে। তারা বলছেন, ঢাকার ভোটার না হওয়ায় সাহায্য দেন না জন প্রতিনিধিরা।
প্রতিবেদনটি তৈরি করতে ভাষাণটেক এলাকার বেশ কয়েকটি গ্যারেজে গিয়ে দেখা গেলো, বেশিরভাগ রিকশা অলস পড়ে আছে। লক ডাউনের কারণে নিজ পরিবারের কাছে যেতে পারেননি অনেকে। গাটের স্বল্প জমা ফুরিয়ে গেছে। এমন অবস্থায় বেশিরভাগের ভাগ্যে জোটেনে সরকারি খাদ্য সহায়তা। অভিযোগ বণ্টনে অব্যবস্থাপনার।
একজন বলেন, ১০ টাকায় চাল দেয়, কিন্ত ঘণ্টার পর ঘণ্টা সিরিয়ালে দাঁড়িয়েও চাল পাওয়া যায় না।
আরেকজন বলেন, চাল চাইতে গেলে কাউন্সিলররা বলেন, তোরা দেশে যা। দিতে পারবো না। কিন্তু ভাই পেটে তো মানে না। যখন সইতে না পারি, তখনই রাস্তায় বের হয়ে যাই।
এক রিকশা চালক বলেন, ত্রাণ সামগ্রী যদি সেনাবাহিনীর হাতে দেয়া হয়। তাহলে গরিব মানুষেরা ঠিক মতো ত্রাণ পাবে।
রিকশা ভাড়া দেয়া যাদের পেশা তারাও পড়েছেন বিপাকে। রিকশা চালকদের কাছে মহাজন হিসেবে পরিচিত থাকলেও দিন যত যাচ্ছে ততই আয় শূন্যে নামছে।
একজন বলেন, গত মাসের ২৬ তারিখ থেকে এখানে পাহারা দিচ্ছি, কিন্তু কেউ আমাদের খোঁজ খবর রাখেনি। এবং আমরাও কারো কাছে যেতে পারিনি।
এমন অবস্থায় করোনার থাবায় ভিত থমকে যাওয়া নগরীতে নিরবে নিম্ন আয়ের মানুষের জীবন জীবিকার সংকট যে তীব্র হচ্ছে তা সহজেই অনুমেয়। দিন এনে দিন খাওয়া রিকশা চালকরা শ্রমিক শ্রেণির প্রতিনিধি। করোনার প্রকোপ ঠেকাতে জারি করা লকডাউনের মধ্যেই বাধ্য হয়ে অনেকে রাস্তায় নামেছেন। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে যাত্রী পাচ্ছেন সামান্যই। চোখ এড়িয়ে অলিগলি বেয়ে প্রধান সড়কে আসতেই অনেক সময় পুলিশের বাধায় আটকে থাকতে হয় পথে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে, রাস্তায় অতি প্রয়োজন ছাড়া চলাচল করা যাবেনা। সবই তাদের জানা, কিন্তু দায় পেটের।
এক রিকশা চালক বলেন, আমার এই অসুবিধার কারণে আমার বউ-বাচ্চাদের কষ্ট দিবো না। আমার সংসারের কষ্ট আমি বুঝি, কেউ বুঝে না ভাই। তাই বউ-বাচ্চাদের বাঁচাতেই রাস্তায় নেমেছি।
বিলসের এক জরিপ বলছে, ঢাকা শহরে ১১ লাখ রিকশা চলাচল করে। স্বাভাবিক সময় একজন রিকশা চালকের মাসিক আয় ১৩ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত।
জীবন নাকি জীবিকা? এ প্রশ্ন এখন মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে নিম্ন আয়ের মানুষের সামনে। একদিন হয়তো আবার সব আগের মতো ঠিকঠাক চলবে। কিন্তু ততদিনে করোনা ঠেকাতে গিয়ে ক্ষুধায় জেন কেউ মারা না যায়। তাই প্রয়োজন সব রকম সহায়তার সুষ্ঠু বণ্টন ব্যবস্থা।
জিএসনিউজ/এমএইচএম/এএএন



