মাত্র চার বছরে সোনাগাজী পৌর মেয়র খোকনের অবৈধ সম্পদের পাহাড়!

সোনাগাজী (ফেনী) প্রতিনিধিসোনাগাজী (ফেনী) প্রতিনিধি
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ০৮:১৮ পিএম, ২৬ অক্টোবর ২০২০

ফেনীর সোনাগাজী পৌরসভার মেয়র রফিকুল ইসলাম খোকন ২০১৬ সালে পৌর নির্বাচনে অংশ নেয়ার সময় হলফনামায় বসতভিটা, স্ত্রীর গহনা ও ব্যাংক ব্যালেন্সসহ সর্বমোট ২০লক্ষ টাকার সম্পদের বিবরন জমা দিয়েছিলেন। মেয়র নির্বাচিত হয়ে এপ্রিল’১৬তে দায়ীত্ব নেন। দায়ীত্ব নেয়ার পর সোনাগাজী কাঁচা বাজারে দুটি পৌর মার্কেটের ৬৪টি দোকান বরাদ্দে অনিয়ম, বিনা টেন্ডারে পৌরসভার উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ করণ, টেন্ডারের আগেও প্রকল্পের উদ্বোধন, নামসর্বস্ব প্রকল্প দেখিয়ে আইইউডিপির ১০ কোটি টাকা আত্মসাত, বাড়ী নির্মান কাজের অনুমোদনে মোটা অংকের টাকা নেয়া, ৯জন কর্মকর্তা ও কর্মচারি নিয়োগে বানিজ্য, নির্মিত প্রকল্প পুণ:নির্মানের নামে অর্থ লোপাট, প্রবাসীর ভুমি দখল ও মুহুরী সেচ প্রকল্প সংলগ্ন ফেনী নদীর পাড় দখলের অভিযোগ উঠেছে।

জানা যায়, দায়ীত্ব গ্রহনের মাত্র ৪ বছরের মধ্যে নিজ নামে ঢাকার উত্তরায় রাজউক’র ৫ কাঠার প্লট ও সোনাগাজীতে ১১টি দলিলে ১০ একর এবং তার স্ত্রী তাসলিমা কাউছারের নামে ৬টি দলিলে ১৬ একর জমি ক্রয় করেন। যার বাজার মূল্য প্রায় ৫০ কোটি টাকা। এসব ঘটনা ও অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধান করে ব্যাবস্থা নেয়ার জন্য দুদকের চেয়ারম্যান ও সচিবের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন পৌর কাউন্সিলর নুর নবী লিটন ও উপজেলা যুবলীগের যুগ্ন সাধারন সম্পাদক নাছির উদ্দিন আরিফ ভুঞা।

সংশ্লিষ্ট সুত্রে আরো জানা যায়, ২০১৬ সালে কাঁচাবাজারস্থ পৌর মার্কেটের ৬৪টি দোকান বরাদ্দের সময় নির্ধারিত জামানাত ছাড়াও নিজ নামে দোকান প্রতি ৩-৪লক্ষ টাকা অতিরিক্ত আদায় করেন এবং দোকানদারদের জামানতকৃত প্রায় দেড় কোটি টাকা নিজেই উত্তোলন করে ব্যাক্তিগত কাজে ব্যাবহার করেন। নাম সর্বস্ব প্রকল্প দেখিয়ে গুরুত্বপুর্ন নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের ১০ কোটি টাকার আত্মসাত, পৌরসভার একাধিক উন্নয়ন প্রকল্প টেন্ডারের আগেই উদ্ভোধন, ব্যাবসায়ী কর্র্তৃক নির্মিত পৌর সড়কের নামে ৩৪ লক্ষ টাকা বিল পাশ করে টাকা উত্তোলন, প্রকল্প নির্মান ব্যায়ের চেয়ে ১০গুন টাকায় ভাউচারসহ বহু অনিয়মের অভিযোগ করেছেন কাউন্সিলর নুর নবী লিটন।

কাউন্সিলর লিটন বলেন, গত সাড়ে ৪ বছর সোনাগাজী পৌরসভা তহবিল মেয়র খোকনের ব্যাক্তিগত তহবিলে পরিনত হয়েছে। যখন যা খুশি তাই করছেন। রাজস্ব ও এডিবির প্রাপ্ত টাকায় কোন প্রকার প্রকল্প কমিটি, টেন্ডার ও রেজুলেশন ছাড়াই নিজেই প্রকল্পের ভাগবাটোয়ারা করে অর্থ লুটপাট করেছেন। পৌরবাসীর বাড়ী নির্মান কাজের অনুমোদনে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। পৌরসভার ৯ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারি নিয়োগে কোটি টাকার বানিজ্য করেছেন। গত সাড়ে ৪ বছরে প্রায় শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। এসব জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদের তদন্ত করে ব্যাবস্থা নেয়ার জন্য আমি এবং যুবলীগ নেতা আরিফ ভূঞা দুদকে অভিযোগ দিয়েছি। দুদকে অভিযোগ গুলো তদন্তাধিন আছে। সোনাপুর গ্রামের বাসিন্দা সৌদি প্রবাসী মো. শাহজাহান বলেন, ২০১৬ সালে পৌর নির্বাচন চলাকালে অর্থ সংকটে পড়ে মেয়র তার ভগ্নিপতির ৫ শতক বাড়ীর আঙ্গীনা আমার কাছে বিক্রি করেছিলেন। ৪ বছর পার হলেও ওই জায়গা বুঝাইয়া দেন নাই। তিনি নিজেই স্থাপনা তৈরি করে দখলের পায়তারা করছেন। চর খোয়াজের ভুমি মালিক আবদুল মান্নান বলেন, থাক খোয়াজের লামছি মৌজায় আমার ১২০শতক কৃষি জমি দখল করে মৎস্য খামার করেছে মেয়র খোকন। স্থানীয়ভাবে দেনদরবার করেও দখলমুক্ত করতে পারিনি।

খোন্দকার গ্রামের নুর নবী বলেন, বড় ফেনী নদীর দুপাড়ে জেগে উঠা চর দখল করে মৎস্য খামার করেন মেয়র খোকন। ওই প্রকল্পের দুপাশে আমার ১৭একর জমি দখল করেন তিনি। বাধা দিলে নামমাত্র মুল্য দিয়ে দান দলিল সৃজনের মাধ্যমে মালিক বনে যান তিনি। টাকা চাইলে প্রাননাশের হুমকি দেন। আমি ছাড়াও তার ওই ১০০ একরের প্রকল্পে অনেক অসহায় কৃষকের জমি রয়েছে। অবৈধ সম্পদের পাহাড় ও নামসর্বস্ব প্রকল্প দেখিয়ে অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় সোনাগাজী প্রেসক্লাব সভাপতি গাজী হানিফ ও যুগ্ন সাধারন সম্পাদক আবদুর রহিমকে প্রাণনাশের চেষ্টা করে মেয়র খোকন। উপজেলা যুবলীগ নেতা নাছির উদ্দিন আরিফ ভুঞা বলেন, মেয়র খোকনের লাগামহীন দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাতীয় ও স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে জনস্বার্থে দুদকে অভিযোগ দিয়েছি। ভুমি দখলের অভিযোগ গুলো অস্বীকার করে মেয়র রফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, আমি পেশায় আইনজীবি। আইন পেশায় প্রাপ্ত অর্থ ও স্ত্রীর জমানো টাকায় এসব জমি কিনেছি। দুদকে অভিযোগের বিষয়ে মেয়র বলেন, উপজেলা যুবলীগ নেতা নাছির উদ্দিন আরিফ ভুঞা ও কাউন্সিলর নুর নবী লিটনের সাথে ব্যাক্তিগত দ্বন্ধ থাকায় সে বার বার বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিচ্ছে।

আপনার মতামত লিখুন :