সোনাগাজী ইসলামীয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটি বাতিল

MD Aminul IslamMD Aminul Islam
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ০৯:৩৪ পিএম, ১৯ এপ্রিল ২০১৯

আলোচিত  মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে  পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় উদ্ভুত পরিস্থিতিতে গতকাল  বৃহস্পতিবার সোনাগাজী ইসলামীয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার ১৩ সদস্যবিশিষ্ট পরিচালনা কমিটি বাতিল (বিলুপ্ত) ঘোষণা করেছে ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাও. মোহাম্মদ হোসাইন জানান, ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ড. আহছান উল্লাহ  জিএসনিউজকে  কমিটি বাতিল (বিলুপ্তির) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। কমিটি বিলুপ্ত করা হলেও আগামী  ২/১ দিনের মধ্যে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট এডহক কমিটি গঠন করা হবে।

নুসরাত হত্যার ঘটনায় দুই দিনব্যাপী ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও তদন্ত শেষে বৃহস্পতিবার বিকালে পুলিশের গাফিলতি তদন্ত কমিটির প্রধান পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি মো. রুহুল আমীন সাংবাদিকদের বলেছেন, ২৭ তারিখের যৌন হয়রানির ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসন, ম্যানেজিং কমিটি ব্যবস্থা নিলে নুসরাতের গায়ে আগুনের ঘটনা এড়ানো যেত।

ডিআইজি মো. রুহুল আমীন বলেন, তদন্ত কার্যক্রম শেষ হতে আরও তিন-চার দিন সময় লাগতে পারে। নথিপত্র যাচাই-বাছাই চলছে। সাধারণ একটি মামলা তদন্ত করতে এক মাস সময় লাগে। এটি একটি বড় ঘটনা, তাই কিছুটা সময় লাগবে।

তিনি বলেন, অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অনেক খারাপ হিস্ট্রি রয়েছে। যা গভর্নিং বডির সদস্যরাও জানত। যদি তার ব্যাপারে আগে ব্যবস্থা নেয়া হতো তাহলে আজকে এ ধরনের ঘটনা ঘটত না। এই ঘটনার সঙ্গে স্থানীয় রাজনীতির বিষয়ও জড়িত রয়েছে।

রুহুল আমীন বলেন, একই দলের দুজন কাউন্সিলর অধ্যক্ষের পক্ষে বিপক্ষে মানববন্ধন করেছে। প্রাথমিকভাবে সত্যতা পাওয়া গেছে। সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে পুরোপুরি তদন্ত শেষে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পাশাপাশি গণমাধ্যমকর্মীদের আনুষ্ঠানিক জানানো হবে।

মাদ্রসার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে বুধ ও বৃহস্পতিবার তদন্ত কমিটির সদস্যরা মাদ্রাসার শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেন এবং ঘটনা সম্পর্কে তাদের মতামত গ্রহণ করেন। বুধবার তারা রাফির বাড়িতে গিয়ে রাফির পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। সেখান থেকে সোনাগাজী আলহেলাল একাডেমিসংলগ্ন সামাজিক কবরস্থানে গিয়ে রাফির কবর জেয়ারত করেন।

গত ৬ এপ্রিল সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় আলিম প্রথমপত্রের পরীক্ষা দিতে যান নুসরাত। তিনি এই মাদ্রাসার এবারের আলিম পরীক্ষার্থী ছিলেন। এর আগে ২৭ মার্চ মাদ্রাসাটির অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার হাতে যৌন হয়রানির শিকার হন নুসরাত। এ ঘটনায় তার মা বাদী হয়ে সোনাগাজী থানায় মামলা করেন। মামলা তুলে নিতে আসামিপক্ষ নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করে। নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন নুসরাত। এর জের ধরেই তাকে ডেকে নিয়ে শরীরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ৮০ শতাংশ পোড়া শরীর নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে পাঁচ দিন লড়ার পর মারা যান নুসরাত।

নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার মামলাটি তদন্ত করছে পিবিআই। এ পর্যন্ত অধ্যক্ষ সিরাজ, মাদ্রাসাছাত্র নুর উদ্দিন, শাহাদাত, জোবায়ের আহম্মেদ, জাবেদ হোসেন, মাদ্রাসাছাত্রী উম্মে সুলতানা পপি এবং সোনাগাজী পৌরসভার কাউন্সিলর ও পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলমসহ ১৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে এজাহারভুক্ত সাতজন আসামি। তাদের মধ্যে নুর উদ্দিন ও শাহাদাত রোববার রাতে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

জিএসনিউজ/এমএইচএম/এমএআই

আপনার মতামত লিখুন :