রমজানে সুস্থ থাকুন

GS News 24GS News 24
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ১০:৪৭ এএম, ২১ মে ২০১৮

অনলাইন ডেস্কঃ>>>

পবিত্র রমজান মাস ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মাস। এই মাসে বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় খাদ্যাভ্যাসে বিরাট পরিবর্তন দেখা যায়।

যদি এই সময়ে পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যসম্মত আহার করা না হয়, তবে এক মাস রোজা রাখা কষ্টকর হয়ে পড়ে। কারণ, এই মাসে যেমন ধর্মীয় নির্দেশনায় উপবাস করতে হয়, তেমনি জাগতিক নিয়মে ঘরে–বাইরের সব কাজই করতে হয়। এ জন্য সুস্থ থাকা এ সময় খুবই জরুরি। আর তাই খাদ্যের তালিকায় থাক প্রয়োজন জরুরি কিছু বিষয়।

 

ইফতারি : শরবত বা ডাবের পানি, কাঁচা ছোলা, কম তেলে ভাজা ছোলা, পেঁয়াজু, বেগুনি অথবা আলুর চপ, মুড়ি অথবা চিড়া এবং ফল।

যেদিন হালিম অথবা খিচুড়ি খাওয়া হবে সেদিন বেসনের বা ডালের তৈরি ভাজা খাবার এবং মুড়ি বা চিড়া বাদ দিতে পারেন। আবার নুডলস অথবা ফ্রায়েড রাইস খেলেও মুড়ি অথবা চিড়া বাদ দিতে হবে।

ইফতারির কাঁচা ছোলার সঙ্গে আদা কুচি, লবণ ও পুদিনা পাতা কুচি দিয়ে খাওয়া যায়। এটা হজমে যেমন সহায়ক, তেমনি ভিটামিন ও খনিজ লবণের ঘাটতি এতে দূর হবে। রমজানের সময় ইফতারিতে খেজুর একটি বিশেষ উপাদান হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। প্রতিদিন অন্যান্য খাবারের সঙ্গে একটি বা দুটির বেশি খেজুর খাওয়ার তেমন প্রয়োজন নেই। কারণ, এতে ক্যালরি ও শর্করার পরিমাণ বেশি থাকে। যদিও পর্যাপ্ত লৌহ খেজুর থেকে পাওয়া সম্ভব।

 

সন্ধ্যা রাতের খাবার

রোজার সময় সন্ধ্যা রাতের খাবারের গুরুত্ব তেমন থাকে না। মনে হয়, খেতে হবে তাই খাওয়া। তার পরও কেউ যদি খেতে চান তাহলে যেন খাবার গুরুপাক ও বেশি হয়ে না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। যেহেতু ইফতারিতে ডালের তৈরি খাবার বেশি হয়, সেহেতু এ সময় ডাল বাদ দেওয়া যেতে পারে। এ সময় হালকা মসলায় রান্না করা মাছ ও সবজি থাকলে ভালো হয়। ইফতার ও সেহরিতে অনেক সময় সবজি খাওয়াটা বাদ পড়ে যায়। অনেকেই রমজানে সবজি একেবারেই পছন্দ করেন না। তাঁদের জন্য সন্ধ্যা রাতই সবজি খাওয়ার উপযুক্ত সময়। এ রাতে খাবারে ছোট মাছও রাখা যেতে পারে। সেহরির সময় কাঁটা বেছে মাছ খেতে অনেকেই বিরক্ত বোধ করেন।

সেহরির খাবার

সেহরির খাবার গ্রহণ করার অবশ্যই একটি স্বাস্থ্যগত দিক রয়েছে। কারণ, যদি সেহরিতে খাবার না খান তাহলে অবশ্যই দুর্বল হয়ে পড়বেন। এতে ক্যালরির ঘাটতি দেখা দেবে। ফলে এক মাস রোজা রাখা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। সেহরির সময় না খেলে আমাদের দেহের বিপাকক্রিয়ায় বেশ পরিবর্তন আসতে পারে।

সেহরিতে ভাতই খেতে হবে এমন কোনো কথা নেই। রুচি অনুযায়ী রুটি, পরাটা, দুধ, সেমাই ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে। এ সময় মাংস ও ডিম খাওয়া সুবিধাজনক। এই সময়টাতে ঘন ডাল খাওয়া যেতে পারে। এছাড়া ছোট–বড় সবার জন্যই এক কাপ দুধ খাওয়া উচিত। কারণ, খাবারে চাহিদামতো প্রোটিন বা আমিষ না থাকলে উপবাসের সময় শক্তির ঘাটতি দেখা দেবে।

মোট কথা অন্যান্য দিনে যার যতটুকু ক্যালরির চাহিদা থাকে, ততটুকু ক্যালরি রমজানের তিন বেলা আহারে গ্রহণ করতে হবে। এর বেশিও নয়, আবার কমও নয়। রোজার সময় প্রত্যেকের শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করেই মেন্যু ঠিক করা উচিত। তবে এই যে কিছুদিন আগে পর্যন্তও দেখা যেত যে যেকোনো অসুস্থতায় অনেকেই রোজা রাখাকে আতঙ্কজনক বলে ভাবতেন। বর্তমানে চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদদের উপদেশ, আশ্বাস ও সহযোগিতার ফলে অসুস্থতা নিয়েও অনেকে নির্বিঘ্নে রোজা রাখতে পারছেন।

ডায়াবেটিস থাকলে চিনি–মিষ্টি–গুড়–মধু শরবত কিংবা অন্যান্য খাবার থেকে মিষ্টি বাদ দিতে হবে। পেপটিক আলসারের রোগী হলে ডুবো তেলে ভাজা এবং ঝাল খাবার বাদ দিতে হবে। তারা খেতে পারেন চিড়া, কলা, চিড়া–দই, মুগের ডালের নরম খিচুড়ি, নুডলস ইত্যাদি।

রক্তে কোলেস্টেরল বা ট্রাইগ্লিসারাইডের পরিমাণ বেশি থাকলে ইফতারিতে তেঁতুল ও রসুনের চাটনি খাওয়া যেতে পারে। যদি কোনো কারণে ডাল খাওয়া নিয়েও সমস্যা থাকে, তাহলে ইফতারিতে চালের গুঁড়া বা ময়দার বড়া এবং চিড়া, দই, নুডলস, ফ্রায়েড রাইস খাওয়া যেতে পারে।

ওজন বেশি থাকলে তেলের পরিমাণ কমাতে হবে এবং সম্পূর্ণ খাবার থেকে ক্যালরি কমাতে হবে। এদিকে যাদের ওজন কম তাদের জন্য ইফতারিই আদর্শ খাবার।

সবশেষে বলা যায়, রমজান মাসে যে খাবারই গ্রহণ করুন না কেন, তা যেন সহজপাচ্য ও সীমিত হয়। কারণ, এ সময় অতিরিক্ত খাবার দেহের রাসায়নিক উপাদানের মধ্যে সুক্ষ্মভাবে পরিবর্তন আনে, ফলে রক্তের ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়। এতে শারীরিক দুর্বলতা অনুভূত হয়। অর্থাৎ বেশি খাবার খেয়েও কোনো লাভ হয় না।

এমনভাবে খেতে হবে যাতে এক মাস নির্বিঘ্নে রোজা রাখা সম্ভব হয়।

আপনার মতামত লিখুন :