নিজের মস্তিস্ক ঠিক রাখুন ২০টি উপায়ে

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ>>>
পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী কম্পিউটার হল মানুষের ব্রেন। কিন্তু শরীরের মতো আমাদের মস্তিস্কেরও ব্যায়াম করা দরকার। এখানে ৪০টি বিভিন্ন ব্যায়ামের কথা তুলে ধরা হয়েছে, যার ফলে আমাদের মস্তিস্ক দীর্ঘকাল সক্রিয় থাকতে পারে।
১. ড. রাচেল ভিকার্স বলেছেন, আমাদের প্রচুর পরিমানে মাছ খেতে হবে। আমাদের মত মাছের দেশের লোকের জন্য এ সংবাদ অবশ্যই অনেক সুখবর। তৈলাক্ত ছোট মাছ মস্তিস্কের জন্য সবচেয়ে বেশী উপকারী। এখানে আছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা তিন ফ্যাটি এসিড আছে, যা আমাদের মস্তিস্ককে তাজা ও সক্রিয় রাখতে অনেক বেশী সাহায্য করে। তাতে আমাদের মনোসংযোগ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। এখানে ছোট শিশুদের ওপর ওমেগা তিনের পরীক্ষা করা হয়েছে। ছয় সপ্তাহ তাদের ওমেগা তিন দেওয়ার পর দেখা গেছে, তাদের মনে রাখার ক্ষমতা অনেক্ গুন বেডে গেছে।
২. সবচেয়ে দরকারি খাবার হলো সকালের নাশতা; যা আমাদের মস্তিস্কের জন্য অত্যন্ত দরকারি। দশ-বারো ঘণ্টা না খেয়ে থাকার পর মস্তিস্ক ও শরীরে জ্বালানির দরকার হয়ে পডে। সকালের খাবার না খাওয়া কেবল আমাদের মেটাবলিজমের জন্যই খারাপ নয়, তা আমাদের মস্তিস্ককে একেবারে ভোঁতা/অকার্যকর বানিয়ে দিতে পারে। যে শিশু সকালে নাশতা খেয়ে স্কুলে যায়, সে খুব ভালো মনোসংযোগ করতে পারে।
৩. সবকিছু একরকম নয়, অন্যরকম করে করতে হবে। একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে বাঁ হাত দিয়ে দাঁত মাজার চেষ্টা করা উচিত সবার। কম্পিউটার মাউস বাঁ হাত দিয়ে ধরার চেষ্টা করা। টেবিলের খাবারগুলো একটু অন্যরকম করে সাজানো। বাড়ি ফিরতে গিয়ে অন্য রাস্তা দিয়ে বাড়িতে আসা। হাঁটতে গিয়ে পথ হারিয়ে ফেলা। তাতে আমাদের ব্রেনের সেলগুলো সক্রিয় হয়ে ওঠে অনেক গুন।
৪. তরকারিতে যে হলুদ আছে তা আমাদের আলঝেইমার থেকে বাঁচিয়ে রাখে। কাজেই দেখা গেছে, পশ্চিমের লোকেরা আমাদের থেকে আলঝেইমারে ভোগে অনেক বেশি। পশ্চিমে ‘কারি’ এবং হলুদের ট্যাবলেট এখন অত্যন্ত জনপ্রিয় সবার কাছে।শিশুরা ছোট থেকে হলুদ দেওয়া তরকারি খাবে, ভালো কথা।
৫. আমাদের প্রতিদিন নতুন কিছু শেখা প্রয়োজন। শেখার কোনো বয়স থাকে নেই। নতুন ভাষা, নতুন মিউজিক, বাদ্যযন্ত্র, নাটক বা যে কোনো বিষয়ে শেখার প্রবনতা আমাদের ব্রেন সেলগুলোকে সক্রিয় রাখে। কাজেই গান শেখা বা শোনা, ভাষা শেখা, অরিগামি, ইকিবানার সঙ্গে আমাদের হাঁটাচলার গতিও বাড়িয়ে দিতে হবে। শিশুরা অনায়াসে দুই-তিনটি ভাষা শিখতে পারে।
৬. পাকা টমেটোর রস ব্রেনের জন্য অনেক ভালো, এটি ব্রেনের শক্তিকে অনেক গুন বাডিয়ে দিতে সক্ষম।
৭. বিশ্বাস করুন আর না-ই করুন, গান করার ক্ষমতা আমাদের ব্রেনের শক্তি অনেক বাড়িয়ে দেয়। গান আমাদের ব্রেনে অনেক বেশি অক্সিজেন বহন করে নিয়ে যায়। আর যখন গান বা কবিতার চরণ আমরা মুখস্থ করি, তা মস্তিস্কের একটি ভালো ব্যায়ামের কাজ করে।
৮. প্রোটিন ব্রেনের জন্য ভালো। এসব ভালো প্রোটিনের ভেতর বরবটি, ডিম, চর্বিবিহীন মাংস, বাদাম, ডাল এবং মাছ প্রধান। অনেক প্রোটিনে আছে আমিনো এসিড এবং টিপটোফ্যান, যা আমাদের ‘নিউরোট্রানফিটার’ বাড়াতে সাহায্য করে। এই নিউরোট্রানফিটার আমাদের মুড ভালো করে দেয়।
৯. অল্পবিস্তর ক্যাফিন আমাদের ব্রেনের জন্য ভালো। দিনে তিন কাপ চা বা কফি আমাদের ব্রেনকে জাগিয়ে রাখতে পারে। এর মধ্যে যে নিউরোট্রানফিটার বিরাজ করে, তা ডোপামাইন নামে পরিচিত। এ জিনিস আমাদের জাগায়।
১০. সঙ্গীত বিশেষত ধ্রুপদী সঙ্গীত আমাদের মস্তিস্কের কাজ করার ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। বিদেশে এর অনেক পরীক্ষা হয়েছে। অল্প বয়স থেকে যে শিশু গান শোনে, তার মনোসংযোগ ক্ষমতা বেড়ে যায় ও সে ধীরস্থির হয়।
১১. একটা হবি থাকা ভালো। দেখা গেছে, যেসব বয়স্ক মানুষ মধ্য বয়সেও একটি হবি নিয়ে ভাবছে, তাদের আলঝেইমারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমে গেছে। টিকিট জমানো, সেলাই, জিগস, ক্রশওয়ার্ড পাজল, বাগান করা এসব থাকতে পারে।
১২. যে কোনো হার্বস বা গাছগাছড়া মানুষের জন্য অত্যন্ত উপকারী। যুগ যুগ ধরে স্মরণশক্তি বাড়ানোর জন্য এসব গাছগাছড়া ব্যবহার করা হয়। ধনে পাতা, পুদিনা পাতা, লেটুস পাতা, নিমপাতা, সেজ, মিন্ট এবং আরও যাবতীয় গাছগাছড়া আমাদের খাদ্য তালিকায় সংযুক্ত করা প্রয়োজন।
১৩. বারবার বলা হয়েছে টেলিভিশন কম দেখতে। যখন টেলিভিশন দেখা হয়, ব্রেনের তেমন কিছু করার থাকে না। তখন ব্রেন চলে যায় নিউট্রাল অবস্থায়। ক্লিভল্যান্ডের ওয়েস্টার্ন রিজার্ভ ইউনিভার্সিটির স্কুল অব মেডিসিন পরীক্ষা করে দেখেছে, ব্রেন হেলথের জন্য টেলিভিশনের চেয়ে বাজে জিনিস আর কিছু নেই।
১৪. বাড়ির পুরনো অ্যালবাম দেখা এই কারণে ভালো, যা আমাদের দীর্ঘদিনের নানা স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়; যা ব্রেনের জন্য উপকারী। এর ফলে ব্রেনের মধ্যে অনেক বেশি উপকারী ‘সেরোটিন’ উৎপাদিত হতে পারে।
১৫. হাঁটা ও দৌড়ানো ব্রেনের জন্য অত্যন্ত ভালো। কারণ হাঁটা ব্রেনের গ্লুকোস এবং অক্সিজেন বাড়িয়ে দেয়। বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা ঘরে বসে থাকেন আর টেলিভিশন দেখেন। দেখা যায়, বুড়ো বয়সের সমস্ত রোগ এতে বেড়ে গেছে। হাঁটার বিকল্প নেই। কেবল একটু আলস্য ত্যাগ। তাতে যা লাভ হয় তা হাজার হাজার টাকার ওষুধেও হয় না।
১৬. ঘুম আমাদের সেই জিনিস, যা আমাদের শরীরের ব্যাটারিগুলোকে চার্জ করে তাকে সক্রিয় করে তোলে। এক রাত ভালো ঘুমের বিকল্প নেই। এতে আমাদের মনোসংযোগ ও শেখার ক্ষমতা বেড়ে যায়। যে ছাত্র পরীক্ষার আগের রাতে ভালো করে ঘুমোয়, তার পরীক্ষা ভালো হতে বাধ্য। কারণ, সে তখন অনেক বেশি মনোসংযোগ করতে পারছে।
১৭. প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি ও ফল আমাদের ব্রেনের জন্য ভালো। কেবল ব্রেনের জন্যই ভালো নয়, শরীরের জন্যও ভালো। এ হলো ‘আন্টিওক্সাইডান্ট’ নামের প্রয়োজনীয় জিনিসের সরবরাহকারী। এ শরীরের টক্সিন বা বিষ বের করে দিতে সাহায্য করে। যেসব বিষ বা টক্সিন আমাদের ব্রেনকে ড্যামেজ করে দেয়।
১৮. নানা জায়গায় ঘোরা এবং এক্সপ্লোর করা আমাদের ব্রেনের জন্য ভালো। নতুন পরিবেশ, নতুন মানুষ সবকিছুই ব্রেনের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। পশ্চিমে হলিডের যে নিয়ম আছে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিশুদের মাঝে মাঝে ‘স্টাডিটুরে’ যাওয়া জরুরি।
১৯. ক্রশওয়ার্ড পাজল আমাদের ব্রেনের একটি উপকারী ব্যায়াম। এ ব্রেনের ক্ষমতা বাড়ায় ও আমাদের ভাষার শব্দভাণ্ডারকেও সমৃদ্ধ করে।
২০. সুডোকো নামের যে খেলা এখন বাজারে, বিশেষজ্ঞের অভিমত- এ আমাদের ব্রেনের জন্য উপকারী। এ হলো সমস্যা সমাধানের গেম বা কঠিন ভাবনার গেম।