গ্যাসের পরিবর্তে বাতাস বিক্রি করছে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি

GS News 24GS News 24
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ১১:৩২ এএম, ২০ জুন ২০১৮

স্টাফ রিপোর্টারঃ>>>

চট্রগ্রাম অঞ্চলে গ্যাস বিতরণের দায়িত্বে আছেন কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড। বিশেষজ্ঞদের মতে, গ্যাস, বিদ্যুৎ বা এ জাতীয় কোনো শক্তি বিতরণকালে কিছুটা সিস্টেম লস হয়ে থাকতে পারে। কিন্তু সিস্টেম গেইন অর্থাৎ বিতরণকালে গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া একেবারে অসম্ভব। সেই অসম্ভবকেই সম্ভব করেছে কর্ণফুলী। ২০১৪ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত সময়ে ৬ শতাংশ থেকে ১১ শতাংশ পর্যন্ত ‘সিস্টেম গেইন’ করেছে কোম্পানিটি। গ্যাসের মূল্য সমন্বয় নিয়ে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের গণশুনানিতে খোদ কোম্পানির প্রতিনিধিরা এমন তথ্য তুলে ধরেছেন। নিরীক্ষিত হিসাবে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি দেখিয়েছে, প্রতিষ্ঠানটি পেট্রোবাংলা থেকে যে পরিমাণ গ্যাস কিনছে, গ্রাহকের কাছে বিক্রি করছে পরিমানে তারচেয়েও বেশি। সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন জেগেছে, কর্ণফুলী বাড়তি গ্যাস পাচ্ছে কোত্থেকে? সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গ্যাসের পরিবর্তে বাতাস দিয়ে গ্রাহকের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে কর্ণফুলী।

 

গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের বিতরণ মার্জিন এবং ভোক্তা পর্যায়ে দামবৃদ্ধি নিয়ে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানিতে কর্ণফুলী বলেছে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ সিস্টেম গেইন হয়েছে তাদের। এর পরের দুবছরে সিস্টেম গেইনের পারিমাণ আরও বেড়েছে; ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৮ দশমিক ৬৯ শতাংশ এবং ২০১৬-১৭ সালে আরও বেড়ে দাঁড়ায় ১১
দশমিক ১৬ শতাংশ।

 

গ্রাহককে ফাঁকি থেকে রক্ষা করতে ২০১৫ সালে কমিশন নির্দেশ দিয়েছিল শিল্প গ্রাহকদের ইভিসি এবং আবাসিক ও বাণিজ্যিক গ্রাহকদের প্রিপেইড মিটার দেওয়ার। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, ২০১৫ সালের সেই আদেশ এখনো পুরোপুরি বাস্তবায়ন করেনি কোনো কোম্পানি।

 

ভোক্তাদের অধিকার নিয়ে সোচ্চার অধ্যাপক শামসুল আলমের এক প্রশ্নের জবাবে গণশুনানিতে কর্ণফুলীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা এখন পর্যন্ত তাদের এলাকায় ৭৮০টি মিটারের চাহিদার বিপরীতে ৩১০টি স্থাপন করেছে, যা অর্ধেকেরও কম। অন্যদিকে ৬ লাখ আবাসিক চুলার সংযোগ রয়েছে তাদের। এর বিপরীতে ৩০ হাজার চুলায় মিটার বসানো হয়েছে। শুনানিতে বিতরণ কোম্পানিটি জানায়, বর্তমানে গৃহস্থালির সংযোগ বন্ধ থাকলেও শিল্পে গ্যাস সংযোগ দেওয়ার জন্য ৬৭৬টি চাহিদাপত্র দেওয়া হয়েছে।

 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কর্ণফুলীর বিপুলসংখ্যক গ্রাহক সঠিক সেবা পাচ্ছেন না। তারা অতিরিক্ত বিল দিতে হচ্ছে। আর গ্রাহক ঠকানোর এই পথেই সিস্টেম গেইন করে কোম্পানি।
খোদ বিতরণ কোম্পানিটির ভাষ্যেও এমন তথ্যই উঠে এসেছে। কর্ণফুলী বলছে, বাস্তবে প্রতি গ্রাহকের আবাসিক সংযোগে চুলাপ্রতি ৮৮ ঘনমিটার গ্যাসের হিসাব ধরে বিল করা হলেও তারা প্রিপেইড মিটারে তারা দেখেছে, গ্রাহক ৬৮ ঘনমিটার গ্যাস ব্যবহার করছে। কিন্তু কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) বলছে, বাস্তবে গ্যাসের চাপ না থাকায় চুলাপ্রতি ২০ ঘনমিটারের বেশি গ্যাস ব্যবহার হয় না।

অধ্যাপক শামসুল আলম শুনানিতে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, বাস্তবে সংকট সামাল দেওয়ার কথা বলা হলেও বহুমূল্যের এলএনজি আমদানির শুরুতেই বেশি চাহিদা তৈরি করা হচ্ছে। এতে সংকট হ্রাসের পরিবর্তে বরং বৃদ্ধি পেতে পারে।

 

বিতরণ কোম্পানিটির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কমিশনের কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি বলছে, এলএনজি মিশ্রিত প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম হবে ৮ দশমিক ৩৭৯০ টাকা। এখন দাম ৩ দশমিক ৪৪৯৩ টাকা। বিতরণ কোম্পানিটি প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ১১ দশমিক ৭১২৩ টাকা করার প্রস্তাব করেছিল। অর্থাৎ কমিশনের কারিগরি কমিটি ১৪২ শতাংশ দাম বৃদ্ধির সুপারিশ করেছে। তিতাসের জন্য এই বৃদ্ধির সুপারিশ ছিল ১৪৩ শতাংশ।

 

কোম্পানিটি শুনানিতে ঘনমিটারে ১ দশমিক ০৫ টাকা গ্যাসের বিতরণ মার্জিন বৃদ্ধির জন্য আবেদন করে। শুনানিতে কমিশনের চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম, সদস্য রহমান মুর্শেদ, মাহমুদুউল হক ভুইয়া, মো. আব্দুল আজিজ খান, মিজানুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

আপনার মতামত লিখুন :