মুক্তি পাচ্ছেন কি বেগম জিয়া ?

GS News 24GS News 24
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ১০:১২ এএম, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ>>>>>

আজ ১৮ তম দিন খালেদা জিয়ার কারাবাসের । এর মধ্যে অনেকবার প্রশ্ন উঠেছে, কবে মুক্তি পাচ্ছেন বেগম জিয়া। শহর থেকে গ্রাম সর্বস্তরে বিএনপির নেতাকর্মীরা উদ্বিগ্ন তাদের দলীয় চেয়ারপারসনকে নিয়ে। আজকে তাদের প্রতীক্ষার অবসান ঘটবে কি-না তা নির্ভর করছে উচ্চ আদালতের উপর। গত বৃহস্পতিবার আপিল আবেদন গ্রহণের পর আজকের কার্যতালিকায় এসেছে জামিন আবেদনের শুনানি।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড মাথায় নিয়ে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে একমাত্র বন্দি হিসেবে আটক রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। ঢাকার বিশেষ জজ আদালতের দেওয়া সেই দণ্ডের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল আবেদন করেন তার নিজিস্ব আইনজীবীরা। সেদিন আপিল আবেদনটি গ্রহণ করে খালেদার বিরুদ্ধে দেওয়া অর্থদণ্ড স’গিত করেন দেন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত এক বেঞ্চ।
বয়স, অসুস্থ’তা, সহ বেশকিছু যুক্তি তুলে ধরে খালেদা জিয়ার জামিন চেয়ে আবেদন করেছিলেন আইনজীবীরা। সেই আবেদনটি শুনানির জন্যে উচ্চ আদালতের আজকের কার্যতালিকার ৩৬ নম্বরে রাখা হয়েছে। ৮৮০ পৃষ্ঠার এই আবেদনে ৪৮টি প্যারা এবং ৩২টি যুক্তি রয়েছে বলে জানা গেছে।
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার আপিল আবেদন গ্রহণের পর খালেদা জিয়ার জামিনের বিরোধিতা করেছিলেন মামলার বাদিপক্ষ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবীরা। দুদক আইনের নানা যুক্তি দেখিয়েছিলেন তারা। তবে হাইকোর্ট বেঞ্চের সেদিনের বক্তব্যে জামিন আবেদনের বেশ কয়েকটি যুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্যতা খুঁজে পান খালেদার আইনজীবীরা। সে কারণে তারা মনে করেন যে শুনানি হলে খালেদা জিয়ার মুক্তি মিলতে পারে।
উচ্চ আদালতের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের বেঞ্চে খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনটি শুনানির জন্য ওঠে গত বৃহস্পতিবার। সেদিন খালেদার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘পনের দিন ধরে তিনি (খালেদা জিয়া) কাস্টডিতে আছেন। যেহেতু তাকে লঘু সাজা দেওয়া হয়েছে, সেজন্য আমরা তার জামিন চাইছি। বয়স, সামাজিক অবস’ান বিবেচনায় তিনি জামিন পাওয়ার অধিকার রাখেন।’
এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘আপিল ইতোমধ্যে আদালত গ্রহণ করেছে। আজ সকালে আমরা জামিন আবেদন পেয়েছি। রেকর্ড আসার পরই বিষয়টি (জামিন আবেদন) নিয়ে শুনানি করা হোক।’
এ সময় বিচারক বলেন, ‘আপিলকারীর সাজা তো কম। আদালতের রীতি আছে পাঁচ-সাত বছর বা তার কম সাজা হলে জামিন দেওয়ার। তারা তো অন মেরিট বেইল চাচ্ছে না।’
একপর্যায়ে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, ফৌজদারি
আইনে নারী হিসেবে আদালত জামিনের বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে। কিন’ দুদক আইনে সে সুযোগ নেই। জামিনের আবেদন অনেক বড়, যুক্তিও দেওয়া হয়েছে অনেক। কার্যতালিকায় এনেই শুনানি করা হোক।
বিচারক এ সময় বলেন, ‘আপিল বিভাগের অনেক আদেশ আছে, কম সাজা হলে জামিন দিয়ে দেওয়া হয়। কিন’ সেগুলো এসব স্পেশাল আইন প্রণয়নের আগে। যেহেতু দুদক আইনে আছে তাদের যুক্তিসঙ্গত সময় দেওয়ার, তাই আমরা রোববার (আজ) দুপুর ২টায় শুনানির জন্য রাখলাম।’
খালেদার আইনজীবী প্যানেলের সদস্য ব্যারিস্টার রাগীব রউফ চৌধুরী গতকাল শনিবার বলেন, আপিল গ্রহণের পর আদালতের দেওয়া বক্তব্যে অনুমান করা যাচ্ছে, খালেদা জিয়া খুব শিগগিরই মুক্তি পেতে যাচ্ছেন। রোববার (আজ) শুনানির পরে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, এর মধ্যে বিএনপির চেয়ারপারসনকে আর কোনো মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়নি। যে দুটি মামলায় আদালতে হাজির করার নোটিশ কারাগারে গেছে, জামিনের সামনে সেগুলো খুব বেশি প্রতিবন্ধকতা নয়। দুটির একটি ইতোমধ্যে পার হয়ে গেছে। এ দুটি মামলায় তিনি আইনজীবীদের মধ্যে হাজিরা দিয়ে আসছিলেন।
খালেদার জামিনের পক্ষে যুক্তি দেখিয়েছেন বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদও। তার মতে, ‘আমাদের জুডিশিয়ারিতে ন্যায়বিচারের যে কাঠামো আছে, সেই কাঠামো অনুযায়ী আমি বিশ্বাস করি, ইনশাআল্লাহ রোববারই খালেদা জিয়ার জামিন মঞ্জুর হবে।’
বিএনপির একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, খালেদা জিয়া খুব দ্রুতই জামিনে মুক্তি পেতে যাচ্ছেন- এই বিশ্বাস ও ধারণা থেকে তারা নির্বাচনী কৌশল নির্ধারণে নেত্রীকে নিয়ে বৈঠকের পরিকল্পনাও ঠিক করে রেখেছেন। খালেদা জিয়া মুক্তি পেলে তাকে নিয়ে আগামী দিনের আন্দোলনের কলাকৌশলও চূড়ান্ত হবে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসায় আর বেশি বিলম্ব করতে চান না নেতারা।

আপনার মতামত লিখুন :