প্রসাশনের অনুমতি না পেলেও শনিবার সমাবেশ করবো আমরাঃ মির্জা ফখরুল

জিএস অনলাইন ডেস্কঃ>>>
অনুমতি না পেলেও বিএনপি শনিবার সমাবেশ করবে বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, পুলিশের পরামর্শে বৃহস্পতিবার থেকে আমরা সমাবেশ শনিবারে নিয়ে গেছি। কিন্তু এখনও অনুমতি দিচ্ছে না প্রশাসন। গতকাল বুধবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। এর আগে বিএনপির ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন জেলার, সহযোগী অঙ্গ সংগঠনের নেতা ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিবদের সঙ্গে এক যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়।
বিএনপি কেন জনসভা করতে চাচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দলের নীতিনির্ধারণ নিয়ে কথা বলা ও দলের ভবিষ্যৎ কর্মসূচি দেয়ার জন্য এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। এতে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য ও যুক্তফ্রন্টসহ বিভিন্ন দলীয় নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হবে কিনা-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সময় হলেই সব জানতে পারবেন।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমরা আগামী ২৯ তারিখ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করব। সেটি কেন্দ্র করে এরই মধ্যে সরকারি দল বিভিন্ন কথা বলছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। নাসিম সাহেব বলছেন, যেখানে পাও বিএনপিকে আটকে দাও। জাহাঙ্গীর কবির নানক বলছেন, রাস্তায় নামলে হাত-পা সব ভেঙে দাও। এই তো হচ্ছে তাদের গণতন্ত্রের ভাষা। জনগণ বিবেচনা করবে এই সংঘাত-সহিংসতা কারা শুরু করে। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর কারা লগি-বৈঠা দিয়ে ২৭ জন তরুণকে হত্যা করেছিল এটা ভুলে যাওয়ার কথা নয়। দুর্ভাগ্য এটা যে আমাদের মিডিয়া কেন জানি এসবকে সামনে তুলে নিয়ে আসে না জানিনা। আপনারা শনিবারের সমাবেশের জন্য অনুমতি চেয়ে আবেদন করবেন কিনা জানতে চাইলে ফখরুল বলেন, ভাই অনুমতির আবেদন-টাবেদন না। ইট ইজ দেয়ার রেসপনসিবিলিটি। এটা তারা ঠিক করবেন কী করবেন? আজকে আমরা যৌথসভা করেছি ২৯ তারিখের জনসভার জন্য।
তিনি বলেন, আমরা ২৭ তারিখ জনসভা করতে চেয়েছি, সে জন্য পুলিশকে চিঠিও দেয়া হয়েছে। কিন্তু পুলিশ আমাদের বলেছে, আপনারা ২৭ তারিখ নয়, ২৯ তারিখ করেন। এখন শুনছি, সেদিন মহানগর নাট্যমঞ্চে আওয়ামী লীগের একটা প্রোগ্রাম আছে। এটার কারণে আমাদের জনসভা করতে কী সমস্যা, আমার বুঝে আসে না।
প্রসঙ্গত, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ নানা দাবিতে ২৯ সেপ্টেম্বর ঢাকায় সমাবেশের ডাক দিয়েছে বিএনপি। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বরাদ্দ চেয়ে আবেদনও করা হয়েছে প্রসাশনের কাছে। তবে অনুমতি এখনও মেলেনি।
সাংবাদিক সম্মেনে মির্জা ফখরুল বলেন, এটা স্পষ্ট বর্তমান সরকার আসন্ন নির্বাচন সম্পর্কে যেসব কথা মুখে বলছে সেগুলো সবই তাদের প্রতারণা জনগণের সঙ্গে। এমনকি বিদেশে গিয়েও প্রধানমন্ত্রী বলছেন তারা একটি ইনক্লুসিভ ইলেকশন দেখতে চায়, সকল দল আসুক সেটা তারা দেখতে চান।
তার নমুনা হচ্ছে তিন লক্ষ লোকের বিরুদ্ধে মামলা, তার নমুনা হচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দলের চেয়ারপারসন, তিনবার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তাকে কারাগারে আবদ্ধ করে রাখা, তার নমুনা হচ্ছে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে আবার একটা মামলায় সাজা দেয়ার চেষ্টা করা। আমাদের সিনিয়র নেতৃবৃন্দের মিথ্যা মামলাগুলোকে আবার ত¦রান্বিত করা হচ্ছে।
অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ফাঁসানোর ষড়যন্ত্র চলছে। তিনি বলেন, মামলাটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এ মামলায় তারেক রহমান ও বিএনপির কয়েকজন সিনিয়র নেতাকে জড়ানো হয়েছে। আমরা স্পষ্ট করে বলছি, এ হামলায় কোনোভাবেই বিএনপি জড়িত ছিল না। এ মামলায় মুফতি হান্নানকে ২৪০ দিন রিমান্ডে এনে জোর করে স্বীকারোক্তি আদায় করিয়েছে। পরে তিনি আদালতে বলেছেন- তাকে জোর করে স্বীকারোক্তি আদায় করানো হয়েছে। কিন্তু এই ধরনের চক্রান্ত দেশের মানুষ কখনও মেনে নেয়নি, নেবেও না। গতকাল বুধবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যৌথসভা শেষে এসব কথা বলেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা আগেও বলেছি, এখনও বলছি এই ঘটনার সঙ্গে আমাদের নেতারা কোনোভাবেই জড়িত ছিল না। বিশেষ করে তারেক রহমানের নাম এখানে জড়ানো হচ্ছে প্রতিহিংসার কারণে। এই মামলাটি করার পরে তিনজন তদন্ত কর্মকর্তাকে বদল করে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরে তাদের পছন্দমত একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, গ্রেনেড হামলা মামলায় শেখ হাসিনার যে গাড়িটি গুলীবিদ্ধ হয়েছে, তিনি এফবিআইকে গাড়িটি দিয়ে তদন্তে সহযোগিতা করেননি। এমনকি ভারতের এক পত্রিকায় তিনি বলেছিলেন- এ হামলার সঙ্গে সেনাবাহিনী জড়িত। এ মামলায় ষড়যন্ত্র করে কোনো রায় দিলে দেশের জনগণ তা মেনে নেবে না।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার সময় খালেদা জিয়া ঢাকায় ছিলেন না বলে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, তখন খালেদা জিয়া ঢাকার বাইরে কুমিল্লা বা নোয়াখালীতে ছিলেন। এই ঘটনা শোনার পরে তিনি তার সফরসূচি সংক্ষিপ্ত করে ঢাকায় ফিরে এসেছেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার সুধাসদন বাসায় যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ সেইদিন ছাত্রলীগ ও যুবলীগকে দিয়ে বাধা সৃষ্টি করে খালেদা জিয়াকে যেতে দেননি।
বিএনপি এখন খালেদা জিয়ার ভ্যানেটি ব্যাগে আর আন্দোলন কারাগারে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এই বক্তব্যের সমালোচনা করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, গোটা বাংলাদেশ তো একটা কারাগারে পরিণত হয়েছে। সেই কারাগার ভেঙে ফেলার জন্য অবশ্যই আন্দোলন হবে। আন্দোলনের মধ্যদিয়ে জনগণ গণতন্ত্রকে মুক্ত করবে।
যৌথসভায় ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলার রায় নিয়ে চক্রান্ত এবং সারাদেশে বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের নামে যে চার হাজার ‘গায়েবি মামলায়’ তিন লাখ লোককে আসামী করা হয়েছে, তার নিন্দা জানানো হয়। সভায় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করে তাঁকে বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ার দাবি জানানো হয়।