নেতাকর্মীদের তোপের মুখে ফখরুল-মওদুদ
নিজস্ব প্রতিনিধি:>>>
একুশে ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে তোপের মুখে পড়েন বিএনপির নেতারা।
বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বিকালে বিএনপি আয়োজিত রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আলোচনা সভা চলাকালীন দর্শকসারিতে বসা দলের নেতাকর্মীদের ক্ষোভ প্রকাশ ও হট্টগোল করতে দেখা যায়। এ সময় দলীয় কর্মী-সমর্থকরা খালেদা জিয়ার মুক্তি ও আন্দোলনের কর্মসূচি শুনতে চিৎকার করতে থাকেন। এসময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বক্তব্য দিচ্ছিলেন।
মওদুদ আহমদের বক্তব্য চলাকালে দর্শক সারি থেকে এক নেতা বলে উঠেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির কথা বলেন। কবে এবং কিভাবে তিনি মুক্তি পাবেন? আজকে দলের এ কর্মসূচিতে হলরুম খালি কেন? নেতাকর্মীরা আসে নাই কেন?
এ সময় মওদুদ সামনে গিয়ে তাদের জিজ্ঞাসা করেন কি বলছেন আপনারা? এ অবস্থায় দর্শক সারি থেকে আবারও একই কথা জানতে চাওয়া হয় এবং অনেকেই খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই স্লোগান দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে মওদুদ আহমদ বলেন, ‘হবে। একটু ধৈর্য ধরতে হবে।
পরিস্থিতি শান্ত হলে মওদুদ বলেন, আইনি প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে না। একমাত্র পথ হচ্ছে আন্দোলন। সেই জন্যই আমাদের সুপরিকল্পিত আন্দোলন করতে হবে। সেভাবেই আমাদের কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। এখন আমাদের একমাত্র এজেন্ডা হবে খালেদা জিয়ার মুক্তি।
আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল সভাপতির বক্তব্য শুরু করলে আবারও দর্শক সারি থেকে আওয়াজ আসে, বিএনপির কমিটি ভেঙ্গে দেন। আজ হল খালি কেন? এসময় মির্জা ফখরুল বলেন, কর্মসূচি আসবে। সবাইকে ধৈর্য্য ধরতে হবে। তিনি ক্ষুব্ধকণ্ঠে বলেন, ‘দাঁড়ান, হলে বসে চিৎকার করলে হবে না।
পরিস্থিতি সামলে মহাসচিব বলেন, আপনারা কেন ভাবছেন ব্যর্থ হয়েছেন। আপনারা ব্যর্থ হননি। আওয়ামী লীগ পরাজিত হয়েছে। আওয়ামী লীগ একদলীয় শাসন কায়েম করতে ১০ বছর ধরে নির্যাতন চালাচ্ছে। তিনি বলেন, একুশের চেতনা ধারন করে আমাদেরকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। সেই লড়াইয়ে আমরা বিজয়ী হবই।
দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মহাসচিব বলেন, আপনারা নিজেদের দুর্বল ভাবেন কেন? মনোবল হারাবেন না। দেশনেত্রী খালেদা জিয়া কখনও মনোবল হারাতে বলেননি। তিনি বলেছেন, সাহসের সঙ্গে সংগ্রাম চালিয়ে যেতে। আমাদেরকে অনেক সংগ্রাম ও ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। সে জন্য আমাদের তৈরি থাকতে হবে।কখনো মনের জোর ও মনোবলকে হারিয়ে ফেলবেন না। স্বৈরাচারি ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমাদেরকে অবশ্যই রুখে দাঁড়াতে হবে। আমরা লড়াই করবো, আর সেই লড়াইয়ে অবশ্যই আমরা বিজয়ী হব। বাংলাদেশের মানুষ বিজয়ী হবেই হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ফ্যাসিবাদি শক্তিকে মোকাবেলা করার জন্য আমাদেরকে অবশ্যই সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে। আর আমরা দীর্ঘকাল ধরে লড়াই করছি। এই লড়াইকে আরো সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হবে। আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রকে কখনো বিশ্বাস করে নাই। এরা গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। আর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করে তারা প্রমাণ করেছে, আওয়ামী লীগ কোনো গণতান্ত্রিক শক্তি নয়।
কারাগারে খালেদা জিয়ার অসুস্থতার কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়া অসুস্থ।
দলের আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান বলেন, দেশের প্রাণ শক্তি হচ্ছে ছাত্ররা। আর বিএনপির প্রাণ শক্তি হচ্ছে ছাত্রদল। তাই বলবো, আপনারা ‘ছাত্ররা’ এগিয়ে আসুন- আমরা রাজপথের আন্দোলনের মাধ্যমে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করবো।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, বিএনপি এতো বড় একটি রাজনৈতিক দল, সারাদেশে সংগঠন আছে, কর্মী সমর্থক আছে তবু কেন আমাদের নেত্রীর মুক্তি হচ্ছে না? আমরা যদি ঐক্যবদ্ধভাবে রাস্তায় নামি ও আন্দোলন করতে পারি তাহলে অবশ্যই খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে।
মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে ও আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন প্রমুখ।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম ও সহ প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীম।



