ডাকসু নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত থাকবে ছাত্রদল : প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় যারা

জিএস নিউজ ডেস্কজিএস নিউজ ডেস্ক
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ০২:০৬ এএম, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

নিজস্ব প্রতিবেদক:>>>>

ডাকসু নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকবে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। পাশাপাশি অবাধ নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টিসহ ৭ দফা দাবিতে সোচ্চার থাকবে। দাবি আদায়ে ক্যাম্পাসভিত্তিক নানা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে চাপ অব্যাহত রাখবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ওপর। ঢাকসু নির্বাচনে প্রার্থী বাছাই ও প্যানেল গঠনের জন্য ইতিমধ্যে ফরম ছেড়েছে ছাত্রদল। দুইদিনে দেড় শতাধিক ফরম বিক্রি হলেও রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত জমা পড়েছে ৭০টির মতো। প্রথমদিকে তুলনামূলক তরুণরা ভিপি-জিএস পদে আলোচনায় থাকলেও বয়সের সময়সীমা নির্ধারণের পর ছাত্রদলের হল শাখার বেশ কয়েকজন আহ্বায়ক ও যুগ্ম আহ্বায়ক প্রার্থী হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন।

তবে বয়স নির্ধারণের বিষয়ে আপত্তি রয়েছে ছাত্রদলসহ বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের। তাদের অভিযোগ ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে নির্বাচনের সুযোগ দিতেই বয়স নির্ধারণ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এতে ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক সুযোগ পেলেও নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন না ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখার শীর্ষ নেতারা। অনেকের অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষার্থী হওয়ার পরও বয়সের কারণে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি তাদের। নীতিমালা অনুযায়ী তারা নির্বাচনী কর্মকাণ্ডেও অংশ নিতে পারবেন না।

এদিকে নিয়মিত শিক্ষার্থী এবং বয়স ৩০-এর কম হলেও ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন ছাত্রদলের ছাত্রীবিষয়ক সম্পাদক এমফিলের শিক্ষার্থী ফাহমিদা মজিদ ঊষা। গতকাল তিনি এ ব্যাপারে প্রতিকার চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেছেন। সূত্র জানায়, গতরাতেই মনোনয়ন প্রার্থীদের ফরমগুলো যাচাই-বাছাই করেন ছাত্রদলের শীর্ষ নেতৃত্ব ও ঢাকসু নির্বাচন ইস্যুতে দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। সবকিছু ঠিক থাকলে আজ বা আগামীকাল প্যানেল ঘোষণা করতে পারে ছাত্রদল।

ছাত্রদলের একাধিক নেতা জানান, ঢাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তিনদিন আগে ছাত্রদল নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সেখানে ঢাকসু নির্বাচনের পক্ষে-বিপক্ষে ছাত্রদল নেতাদের যুক্তিতর্ক শোনেন তিনি। পরে ঢাকসু নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্তের কথা জানান। ঢাকসু নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিপক্ষে বক্তব্য দেয়া ছাত্রদল নেতাদের সঙ্গে কড়া ভাষায় দ্বিমত পোষণ করেন। এমনকি যারা নির্বাচনে আগ্রহী নয় তারা যেন নীরব থাকেন সে ব্যাপারে নির্দেশ দেন। মূলত সে মতবিনিময় সভার পর পুরো পরিস্থিতি পাল্টে যায়। এর আগে ঢাকসু নির্বাচনে যাওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেয়ার পর বিএনপির সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় কড়া ভাষায় বক্তব্য রেখেছিলেন ছাত্রদলের শীর্ষ নেতারা। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এখন সবাই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার একাধিক নেতা জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে ফরম সংগ্রহ ও জমাদানকারীর সংখ্যা অর্ধশতাধিকের বেশি হলেও ভিপি-জিএস হিসেবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে কয়েকটি নাম। যাদের মধ্যে রয়েছেন- এসএম হল শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক হাবিবুল বাশার (২০০৭-০৮ সেশন), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হল শাখার সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক খোরশেদ আলম সোহেল (২০০৮-০৯), কবি জসীমউদ্‌দীন হল শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক হাসান আল আরিফ (২০০৮-০৯), এসএম হল শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান (২০০৯-১০), সার্জেন্ট জহুরুল হক হল শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক আনিসুর রহমান খন্দকার অনিক (২০১০-১১), মহসিন হল শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক কাওসার আলম রাসেল (২০১১-১২), সূর্যসেন হল শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক কাইমুল হক (২০১১-১২) প্রমুখ। এ ছাড়া ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সহসম্পাদক নিজামউদ্দিন ও ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক ফাহমিদা মজিদ ঊষা প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় ছিলেন।

কিন্তু নিয়মিত শিক্ষার্থী এবং বয়স ৩০ এর কম হলেও ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়ে তাদের নাম। ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির দাবিতে হাইকোর্টে রিট করেছেন ফাহমিদা মজিদ। নিজামউদ্দিন রিট করবেন। উচ্চ আদালত থেকে নির্দেশনা পেলে তারাও প্রার্থী হিসেবে বিবেচনায় থাকবেন। সূত্র জানায়, উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় ভোটাধিকার ফিরে পেলে ভিপি হিসেবে সবচেয়ে এগিয়ে থাকবেন ফাহমিদা মজিদ ঊষা। এদিকে ঢাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর প্রথমে ভিপি-জিএস হিসেবে আলোচনায় উঠে এসেছিল কিছু তরুণের নাম। কিন্তু পরবর্তীতে সিনিয়র কিছু ছাত্রনেতা নির্বাচনে আগ্রহী এবং প্রার্থী হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার পর তুলনামূলক জুনিয়ররা এজিএসসহ অন্যান্য পদে প্রার্থী হওয়ার চেষ্টা করছেন। কেউ কেউ হল কমিটির শীর্ষপদগুলোতে প্রার্থী হিসেবে ফরম কিনেছেন। জুনিয়রদের মধ্যে এজিএস হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন- সূর্যসেন হল শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক তৌহিদুল ইসলাম তৌহিদ (২০১২-১৩ সেশন) ও মহসিন হলের যুগ্ম আহ্বায়ক মিনহাজুল আবেদীন প্রিন্স (২০১১-১২ সেশন)। এ ছাড়া শহীদুল্লাহ হল শাখার সদস্য সাইদুল ইসলাম রাফসান (২০১২-১৩), অমর একুশে হলের সদস্য মোসাদ্দেক হোসেন সৌরভ (২০১২-১৩), সূর্যসেন হলের আবদুল খালেক (২০১২-১৩), জহুরুল হক হলের বোরহানউদ্দিন সৈকত (২০১২-১৩), এসএম হলের আল আমিন (২০১৩-১৪) প্রমুখ হল শাখার ভিপি হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন।

ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার জানিয়েছেন, ছাত্রদল কেবল ঢাকসু নির্বাচনে অংশগ্রহণই করবে না, শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে। একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে ইতিমধ্যে উত্থাপন করা হয়েছে ৭ দফা দাবি। সে দাবিগুলো আদায়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উপর চাপ সৃষ্টি করা হবে। তারই অংশ হিসেবে ভিসির কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনের মতো একটি অগ্রহণযোগ্য নির্বাচন শিক্ষার্থীরা চায় না। সেজন্য আমরা হলের বাইরে ভোট কেন্দ্র স্থাপনের দাবি জানিয়েছি। অন্য ছাত্রসংগঠনগুলোও এ দাবি জানিয়েছে। মেহেদী তালুকদার বলেন, ছাত্রদল একটি সুসংগঠিত সংগঠন। বিগত এক দশক ধরে হামলা-মামলা, নির্যাতনের পরও ছাত্রদল নেতাককর্মীরা মাথা উঁচু করে রাজনীতি করছে। আমরা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত এবং জনপ্রিয় বলেই নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ১০ বছর ধরে সহাবস্থান নেই, তারপরও হামলা-মামলার ঝুঁকি নিয়ে ক্যাম্পাসে যাচ্ছি। প্যানেল গঠনের জন্য ফরম ছেড়েছি। দারুণভাবে সাড়া পাচ্ছি। এখন সাক্ষাৎকার নিয়ে যোগ্যতার ভিত্তিতে প্যানেল গঠন করা হবে। মেহেদী তালুকদার বলেন, ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের সুযোগ করে দিতেই কর্তৃপক্ষ ৩০ বছরের বয়সসীমা বেঁধে দিয়েছে।

তারা যুক্তি হিসেবে বলেছে, সরকারি চাকরির বয়সসীমা ধরেই এটা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৩ হাজার শিক্ষার্থীর নেতৃত্ব দেবে তারা কি চাকরির জন্য নির্বাচিত হবে। তারা তো জাতীয় পর্যায়ে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য প্রস্তুত হবে। ঢাকসুর ইতিহাসে এ ধরনের ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি। তিনি বলেন, আমার বয়স ৩২ এবং আমি নিয়মিত ছাত্র। কিন্তু নীতিমালার কারণে আমি ভোটাধিকার যেমন পাইনি, নির্বাচনী কর্মকাণ্ডেও অংশ নিতে পারবো না। এটা কেমন বিচার? এছাড়া ছাত্রদলের অনেক নেতাকর্মী ৩০ বছরের নিচে বয়স হলেও তাদের ভর্তি সুযোগ ঠেকাতে ভর্তি পরীক্ষা পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। সবকিছু করা হয়েছে একটি নীলনকশা অনুযায়ী ছাত্রলীগ নেতাদের বিজয়ী করার মানসে। তারা চেয়েছিল ছাত্রদল যেন প্রার্থী সংকটে পড়ে এবং প্যানেল দিতে না পারে। মেহেদী তালুকদার বলেন, ছাত্রলীগ তাদের শীর্ষ নেতাদের প্রার্থী করেছে কিন্তু ছাত্রদলের সে সুযোগ নেই। তবে সংগঠনের প্রতি কমিটমেন্ট, ক্যাম্পাসে গ্রহণযোগ্যতার দিক থেকে ছাত্রদলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা এগিয়ে থাকবে।

আপনার মতামত লিখুন :