খালেদা জিয়ার পরামর্শ চায় বিএনপি

জিএস নিউজ ডেস্কজিএস নিউজ ডেস্ক
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ০৬:৩৭ পিএম, ০৭ অক্টোবর ২০১৭

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সাথে সংলাপে অংশ নিতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। সংলাপে বিভিম্ন প্রস্তাবের পাশাপাশি পৃথিবীর বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশগুলোর মতোই ইসিকে প্রদত্ত ক্ষমতা পুরোপুরি নিরপেক্ষভাবে প্রয়োগ করার জোর দাবি জানাবে দলটি। আগামী ১৫ অক্টোবর এই সংলাপ হওয়ার কথা রয়েছে। এর জন্য সংলাপের খসড়া প্রস্তাবও প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছে।
দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে উচ্চ ক্ষমতাসম্পম্ন একটি প্রতিনিধি দল সংলাপে অংশ নিবে। এই প্রতিনিধি দলে কতজন সদস্য থাকবেন তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে প্রতিনিধি দলে ১৫ থেকে ১৭ জন সদস্য থাকবেন। লন্ডনে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পরামর্শে সবকিছু চূড়ান্ত করা হবে। এরজন্য এরই মধ্যে লন্ডনে তাঁদের কাছে খসড়া প্রস্তাবটি পাঠানো হয়েছে।
সম্প্রতি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ সিনিয়র কয়েকজন নেতা দলীয় চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে নির্বাচন কমিশনের সাথে সংলাপের বিষয় নিয়ে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে ইসির সাথে সংলাপের খসড়া প্রস্তাব, প্রস্তাবে কী কী বিষয় থাকবে, সেগুলোর তালিকা করা হয়। ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সাবেক সচিব ইসমাইল জবিউল্লাহসহ আরও কয়েকজন জেষ্ঠ্য নেতা।
ওই বৈঠকে সংলাপের বিষয়ে যে খসড়া করা হয়েছে তা চেয়ারপারসনের কাছে পাঠানো হয়েছে। চেয়ারপারসন এখনও খসড়াটি চূড়ান্ত করে ফেরত পাঠাননি। চলতি সপ্তাহে সংশোধিত খসড়াটি পাওয়া গেলে দলের নেতারা ইসির সাথে সংলাপের বিষয়ে চূড়ান্ত কৌশল প্রণয়ন করবেন।
দলের একাধিক নেতা জানান, বিএনপির দাবি সরকার এবং ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সাথে সংলাপ করা। অগ্রাধিকার তালিকায় রয়েছে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার। আগামী নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য ও ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে সরকারের সাথে রাজনৈতিক সমঝোতা চায় বিএনপি।
দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া লন্ডন থেকে দেশে ফেরার পর নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের প্রস্তাব তুলে ধরবেন। নির্বাচন কমিশনের সাথে সংলাপের বিষয়টি তেমন গুরুত্বপূর্ণ না হলেও সংলাপে অংশ নিবে বিএনপি। সংলাপে দেশজুড়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও সীমানা পুনর্নির্ধারণ, আইন সংস্কার, নতুন নিবন্ধন, ভোটকেন্দ্রে ইসির সক্ষমতা বাড়ানো, সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি, নির্বাচনে সেনা মোতায়েন, ইভিএম পদ্ধতি বাতিল, ভোটকেন্দ্রে প্রবেশে দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকদের অনুমোদন দেওয়া, দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব ফৌজদারি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ ইসির কাছে বিভিম্ন প্রস্তাব তুলে ধরবে দলটি। ইসির সাথে সংলাপের বিষয়বস্তু নিয়ে ২০ দলীয় জোট নেতাদের সাথেও বিএনপির আলোচনা হয়েছে।
গত ১৬ জুলাই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন-সংক্রান্ত রোডম্যাপ প্রকাশের পর ৩০ জুলাই প্রথম ধাপে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, দ্বিতীয় ধাপে ১৬ ও ১৭ আগস্ট গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সাথে সংলাপ করেছে নির্বাচন কমিশন। তৃতীয় ধাপে ২৪ আগস্ট রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সংলাপ শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বিভিম্ন রাজনৈতিক দলের সাথে সংলাপ করছে ইসি। ৯ অক্টোবর  এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি, ১৫ অক্টোবর বিএনপি ও ১৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগের সাথে ইসির সংলাপের কথা রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, “আমরা আগেই বলেছি প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে. এম. নুরুল হুদা কোনোমতেই নিরপেক্ষ নন। অতীতে একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের সদস্য ছিলেন তিনি। তাকে যখন সিইসি করা হয় তখনও সমর্থন দেইনি। এর পরও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে নির্বাচন কমিশনের সাথে সংলাপ করতে চাই। ইসির সাথে সংলাপের চেয়ে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার গঠনে সরকারের সাথে সংলাপ বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য সরকারের কাছে বারবার সংলাপের দাবি জানালেও সরকার ও ক্ষমতাসীন দল গুরুত্ব দিচ্ছে না। কিন্তু সরকারের সাথে আলোচনা ছাড়া রাজনৈতিক সংকট দূর হবে না। কারণ ইসির সংলাপে কোনো সমাধান আসবে না।”
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ১৫ অক্টোবর নির্বাচন কমিশনের সাথে বিএনপির সংলাপ হওয়ার কথা রয়েছে। সংলাপে কী কী প্রস্তাব তুলে ধরা হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশনকে কীভাবে শক্তিশালী করা যায় তা নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অনেকবার বক্তব্য রেখেছেন। বিশেষ করে নির্বাচন কমিশন গঠনের সময় এবং বিএনপির ভিশন-২০৩০ নিয়ে চেয়ারপারসন যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেই বক্তব্য থেকেই আমরা কয়েকজন আলোচনা করে একটি সারসংক্ষেপ প্রস্তাব তৈরি করেছি। প্রস্তাবটি চেয়ারপারসনের সাথে আলোচনা করে চূড়ান্ত করা হবে। তারপর তাঁর পরামর্শক্রমে প্রস্তাবটি নির্বাচন কমিশনের কাছে পেশ করা হবে।”
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের সাথে সংলাপে যাওয়ার বিষয়ে এখনও আমরা সিদ্ধান্ত পাল্টাইনি। ইসির কাছে দাবি থাকবে দেশে একটি সুষ্ঠু, অবাধ নির্বাচন করতে যা যা করার প্রয়োজন কমিশন যেন তা করেন। সেই দাবি সামনে রেখেই দলের প্রস্তাবনা নিয়ে সংলাপে যেতে চায় বিএনপি।’
দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রহুল কবির রিজভী জানান, নির্বাচন কমিশনের সাথে সংলাপের বিষয়টি নির্ধারণ করবেন দলের নীতিনির্ধারকরা। এখনও সংলাপের ব্যাপারে চূড়ান্ত কোনো আলোচনা হয়নি। কর্মকৌশল প্রণয়নের পর সব কিছু চূড়ান্ত হলেই সংলাপের ব্যাপারে কথা বলা যাবে বলে জানান তিনি ।

আপনার মতামত লিখুন :