বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে বিএনপি

GS News 24GS News 24
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ০৯:০৯ এএম, ২৫ জানুয়ারি ২০১৮

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ>>>

নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে সোচ্চার হওয়ার চিন্তা করছে বিএনপি। দীর্ঘদিন থেকে ঘরোয়া পরিবেশে নানা দিবস পালনের মধ্য দিয়ে ঝিমিয়ে পড়া নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতেই সতর্কতার সঙ্গে এই চিন্তা করা হচ্ছে। গতকাল রাতে গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এই নিয়ে দলটির সিনিয়র নেতারা বৈঠকও করেন। বৈঠকে আগামী দিনের কর্মসূচিসহ দলের করণীয় ঠিক করা, খালেদা জিয়ার মামলা বিচারকার্যক্রম, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিলেট থেকে নির্বাচনী প্রচার করবেন বলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরÑ এসব বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে। এ বৈঠক চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে ৩০ জানুয়ারি আবার বসবে বলে সূত্র জানায়। চলমান বিষয় নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার বেলা এগারোটায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করবেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপির নীতিনির্ধারণী সূত্রে জানা যায়, চিকিৎসা শেষে লন্ডন থেকে ফেরার পর চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে সর্বশেষ রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘বিশাল জনসমাবেশ’ করে। এর পর ঘরোয়া পরিবেশ নানা দিবস ছাড়া রাজপথে কোনো কর্মসূচিই করতে দেখা যায়নি। চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মামলার কার্যক্রম এবং সম্ভাব্য রায় নিয়েও দলটি শঙ্কিত। এ ক্ষেত্রে দলের সিনিয়র নেতা এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের ভূমিকা নিয়েও নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বিদ্যমান এই অবস্থায় নেতাকর্মীদের মাঝে এক ধরনের হতাশা কাজ করছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক নেতা জানান, অনেক নেতাকর্মী দেখা হলেই জানতে চায় ম্যাডামের মামলার রায় কী হবে? এ ক্ষেত্রে আমাদের করণীয় কী? নেতাকর্মীদের এই প্রশ্নের কোনো জবাবই দিতে পারছি না। দেশের এত বড় একটি জনপ্রিয় দলের নেতা হওয়ার পরও আমরা সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। সব কিছুর জন্য চেয়ারপারসনের দিকে তাকিয়ে থাকি। মিথ্যা মামলায় ম্যাডামের বিচার হচ্ছেÑ এখন তাকেই যদি বলতে হয় রায়ে সাজা হলে এই করবে, ওই করবে। এটা তো কোনো কথা হতে পারে না। তাই আমরা কী করা যায় এই নিয়ে বুধবার রাতে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বৈঠকে বসেছিলাম।
সম্প্রতি কয়েকজন বুদ্ধিজীবী সাক্ষাৎ করে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে রাজপথে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। বিভিন্ন জেলা ও বিভাগীয় শহরগুলোয় সফরের পরামর্শ দিয়ে নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে বলেন। পাশাপাশি ছোট দলগুলোর সঙ্গে যুক্তফ্রন্ট গঠন করে আন্দোলনেরও পরামর্শ দেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়।
বৈঠকে অংশ নেওয়া এক নেতা জানান, গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে এই বৈঠক হয়। বৈঠকে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ছাড়াও খালেদা জিয়া দুই আইনজীবী বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদিন ও যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন প্রমুখ।
বিএনপির অপর এক ভাইস চেয়ারম্যান জানান, ঢাকাসহ তৃণমূল বিএনপিকে সতর্ক রাখতে ডিসেম্বরে ৭৭টি সাংগঠনিক টিম গঠন করা হয়। ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত টিম প্রধানদের সংশ্লিষ্ট জেলা সফরের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ছাড়াও আতাউর রহমান ঢালী, ডা. জাহিদ হোসেন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ ৩০ জনের মতো নেতা তাদের দায়িত্ব পালন করেন। এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় আমাদের সময়কে বলেন, এখন দেশে কোনো কর্মকা- করতে গেলেই সরকার বিএনপিকে বাধা দেয়। তার পরও প্রতিকূল পরিবেশে অনেক জেলায় এ কর্মকা- করা সম্ভব হয়েছে। বাকিরাও করবেন।
তবে বিএনপির এক যুগ্ম মহাসচিব বলেন, যারা দলের দায়িত্ব পালন করে, তারা অজুহাত খোঁজে না। বিরোধী দলের রাজনীতি করতে হলে যে কৌশল থাকা দরকার অনেক নেতারই নেই। ঢাকঢোল পিটিয়ে তো বিরোধী দলের রাজনীতি করা যায় না। যাদের বিভিন্ন সময়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়, দায়িত্ব পালনে তারা সক্ষম কিনা সেটা কেউই ভাবেন না। যাকে তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। যার ফলে কর্মসূচি দিলেও ব্যর্থ হয়। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় পুরো দল।
বিএনপির এ নেতা বলেন, আমাদের সামনে নির্বাচনের আগে দুটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু রয়েছে। একটি হচ্ছে, ম্যাডামের মামলার রায়, অপরটি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থার দাবি। এখন থেকেই আমরা নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকব। যাতে করে ম্যাডামের রায় বিরুদ্ধে গেলে তাৎক্ষণিক কর্মসূচি করতে পারি। এখানে সফল হলে নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন না হলে যতই প্রস্তুতি নেওয়া হোক কোনো লাভ হবে না। গতকালের রাতে বৈঠকে এসব বিষয়ে ব্যাপকভাবে আলোচনা হয়।

আপনার মতামত লিখুন :