ওয়ান-ইলেভেনের সেই জেনারেল মাসুদকে রুখতে ফেনী-৩ আসনে প্রস্তুত নাগরিক কমিটি

ফেনী প্রতিনিধি:>>>
ওয়ান-ইলেভেনের অন্যতম মাস্টারমাইন্ড লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী এখন রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠেছেন। ২০০৭ সালে ‘মাইনাস-টু’ মিশন বাস্তবায়নে সবচেয়ে সক্রিয় ভূমিকায় থাকা এই সেনা কর্মকর্তা একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রাথী হচ্ছেন।
জেনারেল মাসুদ নৌকায় ঠাই পাননি। তাকে জানানো হয়, মনোনায়ন নিলেও তাকে নৌকা দেওয়া হবে না। তবে মহাজোটে আপত্তি নেই আওয়ামী লীগের। এই খবর পেয়েই মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। হয়ে যান সাবেক রাষ্ট্রপতির সামরিক উপদেষ্টা। একই সাথে প্রেসিডিয়াম সদস্য।
ধারনা করা হচ্ছে, তাকে ফেনী-৩ আসনে মহাজোটের প্রার্থী করা হবে। ইতিমধ্যে মহাজোট আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিয়েছে। তাই এই আসনে মহাজোটের পক্ষ থেকে লে. জেনারেল (অব.) মাসুদ চৌধুরী নির্বাচনী লড়াই করামোটামুটি নিশ্চিত। তরে ওয়ান-ইলেভেনে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে তাকে রুখতে স্থানীয়ভাবে জোড়ালো হয়ে উঠেছে গণমত। ফেনী-৩ আসনে গঠিত হচ্ছে জেনারেল মাসুদকে প্রতিরোধে নাগরিক কমিটি।
উল্লেখ্য, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী পারিকারিকভাবে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বেয়াই। তিনি বেগম জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ এস্কান্দারের ভায়রা। বিএনপি সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে বাড়তি সুবিধায় জ্যৈষ্ঠদের ডিঙিয়ে একাধিক পদোন্নতি আদায় করে নেন। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নেওয়ার সময় সাভারের নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ছিলেন তিনি। ওই বছরই মেজর জেনারেল থেকে লেফটেন্যান্ট জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি পান তিনি।
সেনাবাহিনীর নবম ডিভিশনের জিওসির দায়িত্বে থাকা মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী এক-এগারোর পরিবর্তনের পর গুরুতর অপরাধ দমন সংক্রান্ত জাতীয় সমন্বয় কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ছিলেন। দুদকসহ সরকারের আরও কয়েকটি দপ্তর হাতে পেয়ে তিনি অনির্বাচিত সরকারের সবচেয়ে প্রভাবশালী কর্মকর্তা হয়ে ওঠেন। ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ঢালাওভাবে তাদের হেনস্থা করে জেনারেল মাসুদ বিতর্কিত হন। দুই নেত্রীকে মামলার ফাঁদে কারাবন্দি করার ক্ষেত্রেও তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন, বলে অভিযোগ ওঠেছিল।
মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীকে ২০০৮ সালের ২ জুন ডিফেন্স কলেজের কমান্ড্যান্ট পদে বদলি করা হয়। ৮ জুন তার চাকরি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তিনি অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার নিযুক্ত হন।লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীর চাকরির বয়সসীমা শেষ হয় ২০১১ সালের ২৯ জুন। এরপর প্রথমে তিন মাস করে দুই দফায় তার চাকরির মেয়াদ বাড়ানো হয়। পরবর্তী সময়ে আরো দুই দফায় এক বছর তার চাকরির মেয়াদ বাড়ে। টানা ছয় বছর হাইকমিশনারের দায়িত্ব পালন শেষে অবসর নিয়ে দেশে ফেরেন ২০১৪ সালে । ওই সময়ই তিনি আওয়ামী লীগের টিকিটে নির্বাচনের আগ্রহের কথা জানিয়েছিলেন। এবারের নির্বাচনের তার প্রথম পছন্দ ছিল আওয়ামী লীগই। কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীজটে তার মনোনয়ন অনিশ্চিত টের পেয়ে শেষপর্যন্ত রাজনৈতিক আশ্রয় হিসেবে জাতীয় পার্টিকে বেছে নিলেন জেনারেল মাসুদ।
এক-এগারোর কুশীলব লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীকে একাদশ সংসদ নির্বাচনে ফেনী-৩ আসনে প্রতিরোধে নাগরিক কমিটি গঠিত হচ্ছে। জেলার দাগনভূঞা ও সোনাগাজী উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন ও দু’টি পৌর সভার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে এই কার্যকরী কমিটি গঠিত হচ্ছে বলে জানা গেছে। এই আন্দোলনে যেকোন সচেতন নাগরিক ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি, পরিবার বা পরিবারের সদস্যরা যুক্ত হতে পারবেন।
ফেনী-৩ (সোনাগাজী-দাগনভূঞা) এর ১৭টি ইউনিয়নের ১১ জন করে মোট ১৮৭ সদস্য নিয়ে ফেনীর সাংবাদিক নেতা রফিকুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে কমিটি গঠন করা হয়।