পৃথিবীর সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি রাসুলুল্লাহও (সা.) শ্রমিক ছিলেন।

GS News 24GS News 24
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ১০:৪০ এএম, ২২ এপ্রিল ২০১৮
জিএসনিউজ

শহরের চারদিকে আকাশছোঁয়া যে ইমারতগুলো দেখতে পাচ্ছেন, এর প্রতিটি পরতে প্রতিটি ইট, বালুকণা, সুরকিতে শ্রমিকের শ্রম আছে। শ্রমিকের হাতের নিপুণ পরশে এই ইমারত আজ ঊর্ধ্বমুখী, আকাশ ছুঁই-ছুঁই। পৃথিবীর দেয়ালে দেয়ালে সুন্দরের যে রং লাগে, তার পেছনে রয়েছে শ্রমিকের মেহনতের স্পর্শ। এই যে পাঠ করছেন, এর পেছনেও রয়েছে শ্রমের শক্ত হাত। শ্রমিকের শক্ত হাতে নির্মিত হয় মালিকের নরম বিছানা। সেই বিছানায় শুয়ে মালিক ভাবে, এটা হয়েছে আমার টাকায়। কত রক্ত ও ঘামের কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে, তার কোনো হিসাব মালিক বাবু রাখেন না। তিনি ভাবেন, শ্রমের দাম তো আমি দিয়েই দিয়েছি। যুগে যুগে পথেপ্রান্তরে শ্রমিকরা গড়ে তোলেন শান্তির আবাসন। দিন শেষে তারা ফিরে যান নিজেদের গাছতলায়।

 

আরও আগে পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তে ছিল শ্রমিক নির্যাতনের নিভৃত আওয়াজ। গোপনে গোপনে কেঁদে ফিরত হাজারো শ্রমিক। মালিকের দেওয়া অর্থের সঙ্গে দ-ও পেতে হতো সমানভাবে। কোথাও আবার শুধু দ-টাই পেত সারা দিনের ক্লান্ত শ্রমিক। শিশু বা নারী কোনো শ্রেণীর শ্রমিকই মুক্ত ছিল না নির্যাতনের হাত থেকে। মহিলা শ্রমিকদের ব্যবহার করা হতো যথেচ্ছা। পুরুষদের খাটানো হতো ইচ্ছামাফিক। কিছু বলার ছিল না, কওয়ার ছিল না। কারণ তারা যে শ্রমিক! শ্রমিকদের এটাই ধর্ম। সেই অন্ধকার যুগকে পেছনে ফেলে শ্রমিক মুক্তির আহ্বান জানিয়েছেন রাসুলে আরাবি (সা.)। শ্রম ও শ্রমিকের দুর্দিনে তিনি বললেন। ক্ষমতার বলে শ্রমিক বা দাসদাসীর প্রতি মন্দ আচরণকারী বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না। (ইবনে মাজাহ)। শুধু কি তা-ই, আরও আছে। বিদায় হজের ভাষণে শ্রমিকদের মর্যাদার কথা তিনি বলেছেন সবার আগে। মানবতার নবী মুহাম্মাদ (সা.) মৃত্যুযন্ত্রণায় কাতর হয়েও ভোলেননি শ্রমিকের মর্যাদার কথা। মৃত্যুকালে সতর্ক করেছেন, ‘সাবধান থাকবে নামাজ ও তোমাদের অধীনদের বিষয়ে।’ (ইবনে মাজাহ : ১/৫১৯)।

 

মালিক শ্রেণিতে একধরনের অসাধু লোক আছেন, বিত্তবৈভবের নিচে পড়ে ভুলে গেছেন যে শ্রমিকরাও মানুষ। দুঃখদুর্দশায় এদের পাশে দাঁড়ানো তো দূরের কথা, ন্যূনতম সৌজন্যটুকুও প্রদর্শন করেন না। কারণ তারা শ্রমিক। মানবতার নবী মুহাম্মাদ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ শ্রমজীবী মানুষকে ভালোবাসেন।’ (আদ-দুররুল মানসুর : ১০/৬৮)। জেলে, তাঁতি, কুমার, মুচি, মেথর, ড্রাইভার, কুলি, দিনমজুর পেশার শ্রমিককে নীচ মনে করা হয়। এসব পেশাকে মনে করা হয় অযোগ্যতার পেশা, অশিক্ষিতদের পেশা। নীচদের পেশা। সমাজের চারদিকে দিনমজুর মানুষগুলোকে নিচ চোখে দেখার সংস্কৃতি ছড়িয়ে পড়ছে, যার ফলে অসমতা ও অমানবিকতার রুক্ষ সমাজ নির্মিত হয়েছে। এই সংস্কৃতির কারণে খেতেখামারের কাজ ছেড়ে দিয়ে শহরের গলিতে গলিতে চাকরি খোঁজে। ঘুষ-সুদের রমরমা ব্যবসায় কেউ হয় ফকির, কেউ হয় ধনপতি। বিশ্বসভ্যতার অগ্রগতি ঠিক রাখতে সমাজের সব ক্ষেত্রে কাজের প্রয়োজন। শ্রমিকের প্রয়োজন। কোনো কাজ ছোট নয়। বৈধ সব কাজই কাজ। এই কারণে রাসুল (সা.) এর জীবনচরিতেও দেখা যায়, মজুরির বিনিময়ে তিনি মেষ চরাতেন। তিনি বলেন, সব নবী মেষ চরিয়েছেন।এ কথা শুনে সাহাবিরা বললেন, আপনিও মেষ চরিয়েছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমি নির্ধারিত মজুরির বিনিময়ে মেষ চরিয়েছি। (মুসনাদে আহমাদ : ৩/৪৬৬)।

 

পৃথিবীর সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি রাসুলুল্লাহও (সা.) শ্রমিক ছিলেন। শ্রমের কাজ করতেন। তিনি শ্রমজীবী হওয়ার ব্যাপারে বেশ উৎসাহ দিতেন। এক আরব্য ব্যক্তিকে কুড়াল দিয়ে জঙ্গলে পাঠানোর ঘটনা তো সুবিদিত।‘জঙ্গলে যাও, নিজে হাতে কাঠ কেটে খাও।’ এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কারও নিজ পিঠে কাঠের বোঝা বয়ে এনে বিক্রি করা, কারও কাছে হাত পাতার চেয়ে উত্তম।’ (বোখারি : ২/৭৩০)। শ্রমের প্রতি রাসুল (সা.) উৎসাহ দিতেন। সুতরাং শ্রমিক হওয়া হীনতার কিছু নয়। সঠিক পথে থেকে নিজ হাতের উপার্জনই শ্রেষ্ঠ উপার্জন। নিজ হাতের উপার্জনকে রাসুলুল্লাহ (স.) আল্লাহর পথে জিহাদের সঙ্গে তুলনা করেছেন। একবার রাসুলের পাশ দিয়ে একজন শক্তিশালী সুঠামদেহী লোক যাচ্ছিল। তাকে দেখে সাহাবায়ে কেরাম বলতে লাগলেন, এই লোকটি যদি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করত! এই কথা শুনে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সে যদি তার সন্তানসন্ততি, পিতামাতা বা পরনির্ভরশীলতা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য উপার্জনে ব্যস্ত থাকে, তাহলে সে অবশ্যই আল্লাহর রাস্তায় আছে।’ (হাইসামি : ৪/৩২৫)। তিনি আরও বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার সঙ্গে ওয়াদাবদ্ধ হবে যে সে কখনও ভিক্ষা করবে না, তার জান্নাতের ব্যাপারে আমি দায়িত্ব গ্রহণ করব।’ (আবু দাউদ : ২/৪২৭)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন শ্রমজীবী মানুষের ব্যাপারে রয়েছে ক্ষমার ঘোষণা ‘যে ব্যক্তি শ্রমজনিত কারণে ক্লান্ত হয়ে সন্ধ্যা যাপন করে, সে ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়েই তার সন্ধ্যা অতিবাহিত করে।’ (তাবারানি, ইসলামে শ্রমিকের অধিকার, পৃষ্ঠা-২)।

আপনার মতামত লিখুন :