যৌতুকের টাকা ফেরত দিল ৪ বছর পর

জিএস নিউজ ডেস্কজিএস নিউজ ডেস্ক
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ১১:২৬ এএম, ২৫ জানুয়ারি ২০১৮

নীলফামারী প্রতিনিধি:>>>
নীলফামারীর জলঢাকা পৌর এলাকার এরশাদ আলী (২৮) সবুজপাড়া মহল্লার বাসিন্দা। তিনি পেশায় দোকান কর্মচারী। তিনি চার বছর আগে পৌর এলাকার চ্যারেঙ্গা গ্রামের মৃত সুলতান আলীর মেয়ে রোজিনা বেগমকে বিয়ে করেন। এরশাদের বিয়েতে তাঁর অমতে যৌতুক হিসেবে ৯০ হাজার টাকা নেয় পরিবার। অবশেষে গত শুক্রবার এরশাদ ওই টাকা তাঁর শাশুড়িকে ফেরত দেন।

 

খবর পেয়ে বিষয়টি জানতে ওই গ্রামে গিয়ে গতকাল বুধবার দুপুরে কথা হয় এরশাদের শাশুড়ি রাবেয়া বেগমের (৬০) সঙ্গে। এ সময় রাবেয়া বলেন, ‘ওই টাকা ফেরত নিতে চাইনি। এরশাদ জোর করে দিয়েছে। এখন ওই টাকা দিয়ে বন্ধক রাখা জমিটা ফেরত নিব।’

 

এর আগে গতকাল সকালে উপজেলা শহরের ভাই ভাই হার্ডওয়্যার দোকানে গিয়ে কথা হয় দোকান কর্মচারী এরশাদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বিয়ের সময় আমি যৌতুক নিতে চাইনি। আমার পরিবার যৌতুক নিতে বাধ্য করে। বিয়ের পর আমি স্ত্রীকে বলেছি, একদিন ওই টাকা ফেরত দিব। আমি সঞ্চয় করে প্রথমে একটি গাভি কিনি। একপর্যায়ে টাকা হয়ে গেলে সিদ্ধান্ত নিই, টাকা ফেরত দেওয়ার।পরে আমার পরিবারের সদস্যদের বলি যৌতুকের টাকা ফেরত দিব। তখন বাবা বলেন, তুমি রোজগার করে দিবে সেটা তোমার ব্যাপার।’

 

এরশাদ আরও বলেন, ‘বিয়ের সময় শাশুড়ি ৪০ হাজার টাকায় একটি গাভি বিক্রি করেন ও জমি বন্ধক রেখে আরও ৫০ হাজার টাকা দেন। আমি সে হিসেবে ৪০ হাজার টাকা মূল্যের একটি গাভি ও নগদ ৫০ হাজার টাকা দিই। প্রথমে আমার শ্বশুরবাড়ির লোকজন টাকা নিতে রাজি হননি। তাঁরা ভাবেন, হয়তো আমার স্ত্রীর সঙ্গে দ্বন্দ্ব হয়েছে। পরে বুঝিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে গত শুক্রবার টাকা ও গাভিটি দিয়ে আসি। এখন আমার খুব ভালো লাগছে। আমি লেখাপড়া জানি না, কিন্তু জানি যৌতুক নেওয়া ও দেওয়া দুটোই অপরাধ।’

 

এ বিষয়ে এরশাদের দোকানের মালিক আতাহার আলী বলেন, ‘ছেলেটা প্রায় চার বছর ধরে আমার দোকানে কাজ করছে। ছেলেটি সৎ ও কর্মঠ। ছেলেটা একটু একটু করে সঞ্চয় করে যৌতুকের টাকা ফেরত দিয়েছে, এটা বিরল ঘটনা।’

 

এরশাদের বাবা আতিয়ার রহমান বলেন, ‘আমাদের বাড়িভিটে ছাড়া জমাজমি নেই। আমি না বুঝে তখন যৌতুক নিয়েছি, ছেলে তা আবার ফেরত দিয়েছে। এখন তাকে নিয়ে গর্ববোধ করছি।’ প্রতিবেশী নূর বকত বলেন, ‘আমি যৌতুক নিইনি। এরশাদের টাকা ফেরত দেওয়ার কথা শুনে আমার এক বন্ধু সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সে–ও বিয়েতে নেওয়া যৌতুকের টাকা ফেরত দেবে।’ শ্যালক মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমার ভগ্নিপতি আমার চোখ খুলে দিয়েছে। আমি বিয়েতে ১৫ হাজার টাকা যৌতুক নিয়েছিলাম। ওই যৌতুকের টাকা ফেরত দিব।’

 

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খালেদ রহীম বলেন, এরশাদ যে কাজটা করেছে, এটা প্রশংসার দাবি রাখে। আইন দিয়ে শতভাগ যৌতুক নির্মূল করা সম্ভব নয়। এরশাদের মতো সবাইকে সচেতন হয়ে মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে।

আপনার মতামত লিখুন :