পর্যটকের ঢল কক্সবাজারে

কক্সবাজার প্রতিনিধিঃ>>>
এবারের ঈদুল ফিতরের ছুটিতে বেড়াতে আসা মানুষের ভিড়ে কক্সবাজারের বিনোদন কেন্দ্রগুলো এখন বেশ জমজমাট। বিপণী কেন্দ্রগুলোতেও উপচে পড়া ভিড়। তবে বর্ষণ–বন্যা ও সেন্টমার্টিনগামী জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় পর্যটকদের উপস্থিতি আগের বছরের তুলনায় কম বলে দাবি পর্যটন সংশ্লিষ্টদের।
গত দু’দিন কক্সবাজারের বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে সরেজমিনে পরিদর্শন ও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঈদের পরদিন থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ বেড়াতে আসছেন কক্সবাজারে। সার্ভিস বাসে অথবা প্রাইভেট গাড়িতে বেড়াতে আসা এসব মানুষের ভিড়ে জমজমাট হয়ে ওঠেছে এই পর্যটননগরী।
শহর ও সাগরপাড়ের বিপণী কেন্দ্রগুলোতে এখন উপচে পড়া ভিড়। হোটেলগুলোর অধিকাংশ কক্ষই পর্যটকে ভরপুর। রাস্তাঘাটে সৃষ্টি হচ্ছে ট্রাফিক জ্যাম। এবারের ঈদের ছুটিতে সমুদ্র সৈকত ছাড়াও ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক, হিমছড়ী ঝর্ণা, দরিয়ানগর ও ইনানী সৈকতসহ অন্যান্য স্পটগুলো পর্যটকের পদভারে মুখর। টানা বৃষ্টি ও বন্যায় ঈদ বাজারে ব্যবসায়ীরা টার্গেট অনুযায়ী বিকিকিনি করতে না পারলেও এবার তাদের সেই ক্ষতি পুষিয়ে উঠবে বলে আশা করছেন।
তবে হোটেল মালিকরা বলছেন ভিন্ন কথা। তারা বলেছেন, গত দু’দিনে প্রায় দেড় লক্ষ পর্যটক কক্সবাজারে রাত যাপন করেছেন। যা গত বছর তুলনায় কম। একই অভিমত ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন অব কক্সবাজার (টোয়াক বাংলাদেশ) এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এসএম কিবরিয়া খানের। তিনি বলেন, সেন্টমার্টিনগামী জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় এবারের ঈদের ছুটিতে প্রত্যাশিত সংখ্যক পর্যটক আসেনি।
হোটেল–মোটেলের কক্ষগুলো একদিনের জন্যও ফুল বুকিং হয়নি। সেন্টমার্টিনগামী জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় এ অবস্থা বলে মনে করেন তিনি। তিনি সেন্টমার্টিনের বিকল্প হিসাবে শহরের পার্শ্ববর্তী দ্বীপ সোনাদিয়াতে পর্যটকদের জন্য বোট সার্ভিস চালুর দাবি জানান।
তবে ঝড় বৃষ্টির আশংকায় পর্যটক কম এসেছেন বলে মনে করেন অনেকে। তাদের ধারণা, আগের বছরগুলোতে ঈদের সময় টানা বৃষ্টি হওয়ায় অনেকেই কক্সবাজারে হয়ে পড়েছিলেন হোটেলবন্দি। বৃষ্টিতে ভিজে কেউ কেউ সৈকত ও শহর ঘুরলেও শহরের বাইরে তেমন ঘুরতে পারেন নি। ফলে একই আশংকায় এবার পর্যটক কম হয়েছে।
এরপরও কক্সবাজারে গত দু’দিনে স্থানীয়সহ ২ লক্ষাধিক পর্যটক কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতসহ বিনোদন কেন্দ্রগুলো ভ্রমণ করেছেন বলে ধারণা রবি লাইফ গার্ডের ইনচার্জ ছৈয়দ নূরের। তিনি জানান, সমুদ্র সৈকতে এ পর্যন্ত গোসলের সময়ে কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। এ বিষয়ে পুলিশ ও লাইফগার্ডকর্মীরা সচেতন থাকায় দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ফজলে রাব্বি জানান, ঈদের ছুটিতে কক্সবাজারে বিপুল সংখ্যক পর্যটকের আগমন ঘটেছে। সেদিকে লক্ষ্য রেখে পর্যটন স্পটগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এর মধ্যে শহরের ৩টি প্রধান স্পটে ওয়াচ টাওয়ারের মাধ্যমে চব্বিশ ঘণ্টা নজরদারি রয়েছে। সমুদ্র্নানকালে কেউ বিপদে পড়লে তাকে উদ্ধারের জন্য ট্যুরিস্ট পুলিশের জেটস্কি প্রস্তুত রয়েছে। তাছাড়া মেরিন ড্রাইভ ও ঝাউবাগানসহ শহরের নির্জন এলাকায় পোশাকধারী ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোষাকে পুলিশ টহল দিচ্ছে। ফলে এবারের ঈদের ছুটিতে কোথাও বড় ধরনের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন জানান, ঈদের ছুটিতে প্রতিবছর কক্সবাজারে লাখো পর্যটকের মিলনমেলা বসে। একথা মাথায় রেখে প্রশাসন পর্যটকদের হয়রানি রোধে সতর্ক রয়েছে।