মিয়ানমারে ফিরতে চায় রোহিঙ্গা তরুণরা, আগ্রহ নেই বয়স্কদের

মিয়ানমারের রাখাইন থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা তরুণরা নিজ দেশে ফিরতে চাইলেও বয়স্করা চান না। তাদের মতে, গত ২০ বছরে অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। এবারও সম্ভাবনা কম। ফলে, আপাতত বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়ার ব্যাপারে বয়স্ক রোহিঙ্গাদের আগ্রহ কিংবা চিন্তা, কোনোটাই নেই। একসপ্তাহ ধরে উখিয়ায় স্থাপিত তিনটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসবাসকারী অর্ধশত রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বলে তাদের এই মনোভাবের কথা জানা গেছে।
উখিয়া উপজেলার বালুখালী-১, রাজাপালং, কুতুপালং, পানবাজার, ময়নারগোনা ও লম্বাশিয়ায় স্থাপিত ক্যাম্পসহ কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়া রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। এরমধ্যে বেশিরভাগ তরুণই মিয়ানমারে ফিরতে চান বলে জানিয়েছেন। তারা মনে করেন, মাতৃভূমিতেই বেঁচে থাকার পূর্ণ অধিকার তাদের আছে। তারা প্রতিনিয়তই মাতৃভূমির কথা মনে করেন। তরুণ রোহিঙ্গাদের ভাষ্য, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সীমাবদ্ধ জীবনের চেয়ে গ্রামের মুক্তজীবন অনেক ভালো। তবে বয়স্করা নির্যাতনের ভয়ে দেশে ফিরতে চান না বলে জানিয়েছেন। বয়স্কদের অনেকে ভালো-মন্দ বলার চেয়ে নিজের কাজের দিকেই মনোযাগী হতে চান।
বালুখালী-১ ক্যাম্পের ভেতরে পাহাড়ের ওপরে তৈরি করা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কথা হয় দশম শ্রেণি পাস আজিজুল হকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি ৩ বছর আগে দশম শ্রেণি পাস করেছি। আমাদের যদি শান্তিপূর্ণভাবে নিয়ে যাওয়া হয়, তবে দেশে যেতে চাই। রোহিঙ্গা হিসেবে মেনে নিয়ে নাগরিকত্ব দিলে যাব।’
ক্যাম্পে যখন এ প্রতিবেদককে দেশে ফিরে যাওয়ার কথা বলছিলেন, ওই সময় পাশ থেকে ফোঁড়ন কাটেন ৪৫ বছর বয়সী আবদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘কেমনে যাব? ওখানে কিভাবে যাওয়া সম্ভব? সেখানে তো বসবাসের কোনও সুযোগ নেই।’
যদিও বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) দুপুরে মিয়ানমারের মংডুর হরিতলা গ্রাম থেকে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় মৌলভি আবদুল করিমের (ছদ্মনাম) সঙ্গে। তিনি জানান, ‘মংডুতে এখন সরাসরি নির্যাতন নেই। সেখানে পুলিশ বাড়ি-বাড়ি যাচ্ছে। টাকা তুলছে। রোহিঙ্গারা নিজ গ্রামের চৌহদ্দির বাইরে কোথাও পা ফেলতে পারেন না। এমনকি স্থানীয় বাজারেও যেতে অনেক বাধা দেওয়া হয।’
আবদুল করিম কিছু ছবি তুলেও পাঠান। যেখানে গ্রামের বন্ধ স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদ, ধানক্ষেত ও গ্রামের পুকুরের ছবিও রয়েছে।’
গত ৩১ অক্টোবর সন্ধ্যায় উখিয়ার কুতুপালং লম্বাশিয়া ক্যাম্পে কথা হয় দশম শ্রেণির ছাত্র মোহাম্মদ শাহের সঙ্গে। তার দেশের জন্য মন কাঁদে বলে জানান। সুযোগ পেলেই দেশে যেতে চান বলেও জানান তিনি।
মোহাম্মদ শাহর সঙ্গে যখন কথা হচ্ছিল, তখন তার পাশে জনাদশেক রোহিঙ্গা তরুণও ছিলেন। এরমধ্যে দশম শ্রেণি পাস করে ক্যাম্পে পানের দোকান চালানো জামাল ভুট্টো ভিন্নমত পোষণ করেন মোহাম্মদ শাহ’র সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘মিয়ানমার আমাদের মেনে না নিলে আমরাও যেতে চাই না।’
ময়নার গোনা ক্যাম্পে যাওয়ার আগে উখিয়া-টেকনাফ সড়কের দাঁড়িয়ে কথা হয় সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গে। ২৫ বছর বয়সী এই তরুণ বলেন, ‘দেশে ফিরতে চাই। কিন্তু সেখানের অবস্থা ভালো না।’
কথা হয় আরও কয়েকজনের সঙ্গে। তাদের ২০-২২ জন কাজ করছেন একটি গ্যারেজে। প্রত্যেকেই সুযোগ বুঝে নিজের দেশ থেকে ঘুরে এলেও স্থায়ীভাবে দেশে ফেরা নিয়ে সন্দিহান। অর্থনৈতিক কারণে তারা কক্সবাজার থেকে না যেতে চাইলেও মাতৃভূমিকে দেখে আসতে চান প্রতিনিয়ত।
নিরাপত্তার স্বার্থে নিজেদের নাম ও পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন রোহিঙ্গা তরুণ জানান, রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমার সরকার সরসময়ই মুসলমানদের ওপর নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রেখে চলেছে। বিগত বছরগুলোর অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে তাদের যুক্তি, ‘সরকার মগদেরই নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেবে। রোহিঙ্গাদের কোনও জমিও দেবে না।’