চাকরি না পাওয়ায় প্রেমিকা হারাচ্ছে তরুণরা

স্টাফ রিপোর্টার:>>>>
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ থেকে বাড়ানো হবে না জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের এমন মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছেন যুবলীগের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী।
বয়সসীমা কেন বাড়ানো হবে না জানতে চেয়ে যুবলীগ সভাপতি বলেন, সরকারি চাকরিতে বয়সের বেড়াজালে তরুণরা চাকরি পাচ্ছেন না। চাকরি না পাওয়ার কারণে তারা তাদের প্রেমিকাকে হারাচ্ছেন। যাদের সঙ্গে তাদের বিয়ের কথা পাকা হয়েছিল সেই বিয়েও ভেঙে যাচ্ছে।
শেখ হাসিনার ডিজিটাল সরকারের আমলে প্রেমিকা হারানো কিম্বা বিয়ে ভেঙে যাওয়া মতো ব্যাপার চলতে দেওয়া হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন ওমর ফারুক।
মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) দুপুরে নগর ভবন প্রাঙ্গণে প্রয়াত মেয়র মোহাম্মদ হানিফের ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ডিএসসিসি আয়োজিত স্মরণসভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন যুবলীগ সভাপতি।
সভায় মেয়র সাঈদ খোকনের সভাপতিত্বে প্রধান হিসেবে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
স্মরণসভায় ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, উচ্চ শিক্ষিত বেকার তরুণরা যাবে কোথায়? জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সাহেব গত ২০ নভেম্বর সংসদে বলেছেন, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ থেকে নাকি বাড়ানো যাবে না। কেন জানতে চাই। ৩০ বছর বয়সীদের হতাশা আমি দেখেছি, ৩০ এর বেশি বয়সীদের বেদনা আপনি দেখেছেন?
সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে উদ্দেশ্য করে ওমর ফারুক বলেন, কী কারণে তরুণ সমাজ শিক্ষা শেষে পরিবার, সমাজ ও দেশের সম্পদ হওয়ার পরিবর্তে বোঝা হয়ে পড়ছে; একথা আপনাকে বলতে হবে। আমাদের আইনের মারপ্যাচে সীমাবদ্ধ সুযোগের কাছে পরাজিত হচ্ছে তরুণরা।
তিনি আরও বলেন, আইন তার নিজস্ব গতিতে চলে, এই বুলি আউড়িয়ে আইনকে যুগোপযোগী রাখার জন্য সময় পরিবর্তন, পরিবর্ধন, পরিমার্জন, সংশোধন, বিয়োজন করার প্রয়োজন পরে। সময়ের আলোকে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা এমন একটি আইন যা পরিবর্তনের মাধ্যমে ৩০ থেকে বাড়াতে হবে। কথা পরিষ্কার।
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর যৌক্তিকতা তুলে যুবলীগ সভাপতি বলেন, এটাতো পরিষ্কার ২৩ বছরের শিক্ষাজীবন শেষ হয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সমীকরণটি শুধু কাগজে কলমে সীমাবদ্ধ। তার প্রমাণ ২৭-২৮ বছরের আগে কোনো ছাত্রের শিক্ষা জীবন শেষ হয় না।
বিভিন্ন দেশের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, উন্নত বিশ্বের দিকে তাকান, দেখবেন চাকরিতে প্রবেশের বয়সের ক্ষেত্রে কোনো সীমারেখা নির্দিষ্ট করা নাই। কোনো কোনো দেশে অবসরের আগের দিন পর্যন্ত চাকরিতে প্রবেশের সুযোগ রয়েছে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৪০ বছর, সে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে ৩৮-৪০ বছর। শ্রীলঙ্কায় ৪৫, ইন্দোনেশিয়ায় ৩৫, ইতালিতে ৩৫, ফান্সে ৪০, ফিলিপাইন, তুরস্ক, সুইডেনে যথাক্রমে সর্বনিন্ম ১৮, ১৮, এবং ১৬ বছর। অবসরের আগের দিন পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকায় চাকরি প্রার্থীদের বয়স সীমাবদ্ধ নয়। যুক্তরাষ্ট্রে রাজ্যসভায় সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স সর্বনিম্ন ২০ এবং সর্বোচ্চ ৫৯ বছর। কানাডায় সর্বনিম্ন ২০ সর্বোচ্চ ৬৯ বছর। সিভিল সার্ভিসে সর্বনিম্ন ২০, সর্বোচ্চ ৬০ বছর।
সরকারের উদ্দেশে যুবলীগ সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, সমাবেশে তরুণদের চোখে-মুখে গভীর হতাশা, বেদনার ছাপ দেখেছি। তারা কোথায় যাবেন? তাদের ভবিষৎ অনিশ্চিত করবেন না। পড়াশোনা শেষ হওয়ার পর মায়ের কাছে টাকা চাইতে পারেন না। বেকার বলে বন্ধু-বান্ধবদের মুখ দেখাতে পারেন না। চাকরি না পাওয়ায় তরুণরা তাদের প্রেমিকাকে হারাচ্ছেন।