শীতে প্রবীণদের স্বাস্থ্য সমস্যা এবং প্রতিরোধের উপায়

কিছুদিন ধরেই তানিয়ার দাদু বলছেন তার হাঁটুর ব্যথাটা বেড়েছে। রাতে যেন ব্যথাটা অনেক বাড়ে, যন্ত্রণায় তিনি ঘুমাতে পারেন না। প্রতিবছর শীতে তার এই ব্যথাটা বাড়ে। চারদিকে এখন মহা আয়োজনে সবাই শীত উৎসব পালনের জন্য ব্যস্ত। চলছে পিঠার আয়োজন, বেড়াতে যাবার আয়োজন, নতুন কী পোশাকের ট্রেন্ড চলছে সেসব নিয়ে উত্তেজনা। এইসব প্রস্তুতির সঙ্গে সঙ্গে আমাদের পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠদের নিয়েও ভাবনা কম না। কারণ শীত তাদের জন্য আনন্দ বয়ে আনে না। সর্দি, ঠান্ডা, হাঁপানিসহ বাতের ব্যাথাটাও এ সময় খুব বেড়ে যায়।
আজকের আলোচ্য বিষয় শীতে প্রবীণদের স্বাস্থ্য সমস্যা এবং প্রতিকারের উপায়। এ সময় তাদের প্রয়োজন শরীরের প্রতি বাড়তি যত্ন ও সচেতনতা-
১। প্রবীণদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও কর্মক্ষমতা কমে যায়। তাই এ সময়টায় তাদের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। তীব্র শীতে অ্যালার্জি, হাঁপানি, নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিসের মতো রোগ হয়ে থাকে। যদি কারও রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, অস্টিও আর্থ্রাইটিস এসব সমস্যা থাকে, তবে শীতে সেটি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
এসব রোগ প্রতিকারে এ সময় হালকা ব্যায়াম করতে হবে। ঠান্ডার কারণে যদি বাইরে নাও বের হন, তবে ঘরের মধ্যে হাঁটাহাঁটি, হাত-পা নাড়াচাড়া করুন। এতে শরীরে তাপ উৎপন্ন হবে। ব্যায়াম করলে সর্দি-কাশি-জ্বর ইত্যাদি রোগ কম হয়।
২। শীতে প্রবীণদের শরীরের তাপমাত্রা কমে গিয়ে হাইপোথারমিয়া হতে পারে, যার ফলে অজ্ঞান হওয়া থেকে শুরু করে মৃত্যু পর্যন্ত হয়।
তাই শীতে পোশাক পরার ক্ষেত্রেও সচেতন হওয়া দরকার। একটি মোটা কাপড় পরার চেয়ে কয়েকটি পাতলা কাপড় পরলে শীত কম লাগবে। রাতে গলা ও কানে পাতলা কাপড় জড়িয়ে ঘুমান, এতে ঠান্ডা লাগবে না।
৩। শীতে খাওয়া-দাওয়ায় পরিবর্তন করা প্রয়োজন। ঠান্ডা খাবার অবশ্যই বাদ দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে গরম দুধ, ফলের রস, বিভিন্ন ধরনের স্যুপ খাওয়া যেতে পারে। নিয়মিত লেবু দিয়ে চা খাওয়া যেতে পারে। এটি শরীরে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের কাজ করবে।
এ ছাড়া প্রচুর ফল ও ফলের রস খেতে হবে। এটি শরীরের নিস্তেজ ভাব দূর করবে। ফলে প্রচুর ভিটামিন-সি থাকে, যা শরীরে শক্তি জোগাতে সাহায্য করবে।
৪। শীতের সময় প্রচুর শাকসবজি পাওয়া যায়। বয়স্কদের খাবার তালিকায় বেশি করে বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি রাখতে হবে। কারণ গাজর, টমেটো, সিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি থাকলে প্রয়োজনীয় ভিটামিন, মিনারেলের অভাব পূরণ করে শীতে সুস্থ থাকতে সাহায্য করবে।
৫। শীতে পানির চাহিদা কম থাকায় বয়স্করা পানি পান কম করেন। এ কারণে দেহে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। এটি কিডনির কার্যক্ষমতা নষ্টসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য জটিলতা তৈরি করে। তাই শীতে গরম খাবারের পাশাপাশি প্রচুর কুসুম গরম পানি পান করুন। গরম পানি দিয়ে গোসল, অজু ও অন্যান্য কাজ করতে পারেন। এতে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকবে। প্রবীণ ব্যক্তিও আরাম পাবেন।
৬। শীতে শরীরের অয়েল গ্ল্যান্ড থেকে তেল কম নিঃসৃত হয় বলে ত্বক খসখসে ও শুষ্ক হয়ে পড়ে। ত্বক সুরক্ষায় ময়েশ্চারাইজার লোশন, ভ্যাসলিন, গ্লিসারিন, অলিভ অয়েল ও সরিষার তেল ব্যবহার করা যেতে পারে। যখনই মুখ পানি দিয়ে পরিষ্কার করবেন, তখনই কোনো ক্রিম বা লোশন মুখে ব্যবহার করুন।
৭। শহরাঞ্চলের প্রবীণরা সাধারণত ঘরের বাইরে কম বের হন, তাই তাদের ভিটামিন ডি এর অভাব দেখা দিতে পারে। তাই এই ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়াতে নিয়মিত শীতের সকাল ৮টা থেকে ১০টার মধ্যে অন্তত ১৫ থেকে ২০ মিনিট রোদে থাকুন।
বয়স বেড়ে গেলে এমনিতেই জীবনযাপনের ক্ষেত্রে সচেতন হতে হয়। পরিবারের অন্য সদস্যরা যদি একটু দায়িত্ব নিয়ে প্রবীণদের দেখাশোনা করেন, তাহলে পরিবারের এই প্রবীণ সদস্য জীবন-সায়াহ্নের দিনগুলো সুখেই কাটাবেন। আসুন এবারের শীত উৎসব পালন করি পরিবারের সবাইকে নিয়ে।