ভোগান্তি কমাতে সহজ হচ্ছে জাতীয় পরিচয়পত্রের সেবা

GS News 24GS News 24
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ০৯:৫০ এএম, ১৭ এপ্রিল ২০১৮

স্টাফ রিপোর্টারঃ>>>

নাগরিক ভোগান্তি কমাতে মাঠ পর্যায়ে জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা সহজ করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ জন্য নির্ধারণ করা হচ্ছে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনকারী কর্মকর্তার নাম ও পদবি। সেইসঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্রে থাকা কোন ধরনের ভুল সংশোধনযোগ্য তা আবেদনের আগেই সংশ্লিষ্ট ভোটারকে জানাতে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। কী তথ্য সংযোজনের বিপরীতে ভুক্তভোগী নাগরিক কোন ধরনের ভুল সংশোধন করতে পারবেন তাও নির্ধারণ করে দিচ্ছে কমিশন। জাতীয় পরিচয়পত্র ও সংরক্ষিত তথ্য-উপাত্ত (সংশোধন, যাচাই এবং সরবরাহ) প্রবিধানমালা ২০১৪ এর প্রবিধি ২(৫) এ সংজ্ঞায়িত ৩ ও ৪ এ বর্ণিত দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও তাদের দায়িত্ব নির্ধারণ করে অস্পষ্টতা নিরসনের এ ধরনের উদ্যেগ নেয়া হচ্ছে। কমিশনের অনুমোদন নিয়ে শিগগিরই এ সংক্রান্ত কার্যক্রম বাস্তবায়ন শুরু করবে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ।

 

 

নথি পর্যালোচনায় পাওয়া তথ্যমতে, নাম পরিবর্তন ব্যতিত ভোটার তার নিজের নামের বানান সংশোধন করতে চাইলে ফরম-২ জেএসসি, এসএসসি/সমমান বা তদূর্ধ্ব সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য নিবন্ধনের পূর্বে প্রণীত পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, জন্মসনদ; ফরম-২এ প্রদত্ত স্বাক্ষর ও অন্য প্রমাণি লাগবে। এ ধরনের আইডি সংশোধনের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি ‘জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা’। এই কাজের সুপারিশ প্রণয়নকারী কর্মকর্তা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা। আবেদনকারী ভোটারের জাতীয় পরিচয়পত্রে রাহেলা বেগম আছে তা সংশোধন করে রাহিলা বেগম করতে পারবেন, যদি উপরের তথ্য নথিতে সংযোজন করতে পারেন। এ ছাড়া নিজের মূল নাম ঠিক রেখে নামের আংশিক পরিবর্তন হলে; যেমন নাজমা বেগম থেকে নাজমা সুলতানা করতে হলে সংশ্লিষ্ট ভোটারকে অবশ্যই জেএসসি, এসএসসি, সমমান বা তদূর্ধ্ব সনদ. পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, জন্ম সনদ, ফরম-২ এ প্রদত্ত স্বাক্ষর, তদন্ত প্রতিবেদন ও অন্য প্রমাণাদি সংযোজন করতে হবে।

 

 

একইভাবে পিতা/মাতার মূল নাম ঠিক রেখে আংশিক পরিবর্তন ও নাম পরিবর্তন ব্যতিরেকে নামের বানান সংশোধন করার ক্ষেত্রেও উপরের ওইসব তথ্য সংযোজন করতে হবে আবেদনপত্রের সঙ্গে। এ ধরনের ভুল সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা নির্বাচন অফিস থেকে সংশোধন করে নিতে পারবেন ভোটার। যেমন, মো. সাইফুল ইসলাম থেকে সাইফুল শেখ এবং আফজোল গাজী থেকে আফজাল গাজী। স্বামী/স্ত্রীর নামের বানান ও মূল নাম ঠিক রেখে আংশিক পরিবর্তন করার ক্ষেত্রেও একই ধরনের প্রমাণাদি আবেদনপত্রের সঙ্গে সংযুক্ত থাকতে হবে।

 

 

এদিকে, পিতা, মাতা, স্বামী ও স্ত্রীর মৃত্যু সাল পরিবর্তন এবং জন্ম নিবন্ধন সনদ নম্বর সংশোধনের ক্ষেত্রে সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে প্রদত্ত অনলাইন মৃত্যুর ও জন্ম সনদ অন্য প্রমাণাদি সংযুক্ত করতে হবে। আর চাকরির বয়সসীমা, মুক্তিযোদ্ধা, ভোটার যোগ্যতা, প্রার্থীর বয়সসীমা, বয়স্কভাতা অর্জনের বয়সসীমা ব্যতিত, জন্ম তারিখ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে পাবলিক পরীক্ষায় উর্ত্তীণ হওয়ার পর সনদের মেয়াদ ৩ বছর পর্যন্ত প্রযোজ্য হবে; এক্ষেত্রে জেএসসি, জেডিসি, এসএসসি সনদ, সমমান সনদ বা এ সংক্রান্ত পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন কার্ডের সত্যায়িত অনুলিপি, চাকরিরত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে সার্ভিস বুকের কপি, মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার (এমপিও) ও চাকরির আইডিসহ অফিস স্মারক লাগবে। তবে, ওই ক্ষেত্রে জন্মতারিখ পরিবর্তনে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় বা এর সমমানের সার্টিফিকেট প্রযোজ্য হবে না।

 

 

এ ছাড়া অন্য পেশাজীবীদের জন্ম তারিখ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে পাসপোর্টের কপি, ড্রাইভিং লাইসেন্স, জন্ম সনদ, সিভিল সার্জন কর্তৃক বয়স প্রমাণের রেডিওলজিক্যাল মেডিকেল টেস্ট রিপোর্ট ও চেয়ারম্যান কর্তৃক পারিবারিক সনদ (পরিবারের সব সদস্যের নাম, পিতা-মাতা, ভাই-বোনের জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ও জন্মের ক্রম উল্লেখসহ, পেনশন, অবসর ভাতা বহির সত্যায়িত ফটোকপি, তদন্ত প্রতিবেদন)।

 

 

লিঙ্গ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে মেডিকেল সার্টিফিকেটসহ অন্য প্রমাণাদি লাগবে। বৈবাহিক অবস্থা পরিবর্তনে মুসলিমদের ক্ষেত্রে কাবিননামা, হিন্দুদের ক্ষেত্রে প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের এফিডেভিট, পেশা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে নিয়োগপত্র, পেশাভিত্তিক সনদ, অসমর্থতাদের ক্ষেত্রে সমাজসেবা অধিদফতর থেকে সনদ, পাসপোর্ট নম্বর পরিবর্তন ও সংশোধানের ক্ষেত্রে পাসপোর্ট কপি ও অনলাইন পাসপোর্ট কপি, মোবাইল ও ফোন নম্বর পরিবর্তনের জন্য বিটিসিএলের প্রত্যয়নপত্র, বিলের কপি, মোবাইল অপারেটর কর্তৃক প্রত্যয়নপত্র। এসব প্রমাণাদি সাপেক্ষে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা আবেদনকারীর পরিচয়পত্র সংশোধন করতে কমিশন থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত হচ্ছেন।

 

 

পাবলিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর সর্বোচ্চ ৫ বছর পর্যন্ত সময়কালের মধ্যে কোনো ভোটার তার জন্ম তারিখ পরিবর্তন করতে চাইলে কমিশনের আঞ্চলিক কর্মকর্তারা উপযুক্ত প্রমাণাদি দেখে তা সংশোধন করতে পারবেন। আর পরিচালক বা তদূর্ধ্ব কর্মকর্তারা চাকরির বয়সসীমা, মুক্তিযোদ্ধা, ভোটার যোগ্যতা, প্রার্থীর বয়স সীমা, বয়স্ক ভাতা অর্জনের প্রাপ্তির বয়সসীমা ব্যতিত জš§ তারিখ পরিবর্তন করতে পারবেন পাবলিক পরীক্ষার সনদ অনুযায়ী। তাছাড়া সম্পূর্ণ নাম পরিবর্তন, পিতা/মাতার নাম সম্পূর্ণ পরিবর্তন এবং জন্মতারিখ সংশোধনের ক্ষেত্রে এনআইডির মহাপরিচালক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।

 

 

নির্বাচন কমিশনের যুগ্ম-সচিব ও এনআইডি উইংয়ের পরিচালক (অপারেশন) মো. আবদুল বাতেন এ বিষয়ে বলেন, মাঠ পর্যায়ে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের সেবা সহজ করতে নানামুখি উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। কিছু সংশোধন রয়েছে যা ঢাকায় না এসেও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা সংশোধন করতে সক্ষম, এ ধরনের জাতীয় পরিচয়পত্রের মধ্যে নামের বানানের দু’একটি শব্দ সংশোধন। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, আবদুল বতেন আছে এটি সংশোধন হয়ে বাতেন হবে এটা জেলা কর্মকর্তারা করতে পারবেন। তবে, সংশোধনের ধরন অনুযায়ী আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, পরিচালক ও মহাপরিচালকের সুপারিশের আলোকে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করা হবে।

আপনার মতামত লিখুন :