লক্ষ্মীপুরে ইলিশের শূন্য আড়ত হলেও, সুন্দরবন উপকূলে রুপালি ইলিশের ঢল

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ>>>
বাগেরহাটের সুন্দরবন উপকূলে বঙ্গোপসাগরে জালে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে রুপালি ইলিশ। হাসি ফুটেছে উপকূলের জেলেপল্লীগুলোর সকলের মুখে। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তত্পরতায় বনদস্যুর তত্পরতা কমে যাওয়ায় স্বস্তিতে মাছ ধরতে পারছেন সকল জেলেরা।
তবে ভরা মৌসুমেও শূন্য হাতে ফিরছেন লক্ষ্মীপুরের অধিকাংশ জেলে। একদিকে কষ্টে দিন কাটছে জেলে পরিবারগুলোর, সেই সঙ্গে বিনিয়োগ করে এখন লোকসান গুনছেন আড়তদার ও দাদন ব্যবসায়ীসহ এর সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্টরা সকলে।
গত মঙ্গলবার বাগেরহাটের প্রধান মত্স্যবন্দর কেবি বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, ইলিশভর্তি ট্রলার দড়াটানা নদীর ঘাটে সারিবদ্ধভাবে নোঙর করে রাখা হয়েছে। মৌসুমের শুরুতে ইলিশের দেখা না পেলেও এখন হাসি ফুটেছে কেবি বাজারের জেলে, আড়তদার ও মাছ বিক্রেতাদের মুখে। দিনভর সরগরম থাকছে কেবি বাজার।
উপকূলীয় মত্স্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি শেখ ইদ্রিস আলী জানান, মৌসুমের শুরুতে ইলিশ পাওয়া না গেলেও জুনের শেষের দিকে এসে সুন্দবেন উপকূলে গভীর সমুদ্রে ‘মাছের খনি’খ্যাত সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ডে ইলিশ ধরা পড়তে শুরু করেছে। গত তিনদিনে প্রায় ৫০টি ট্রলার ইলিশ বোঝাই করে কেবি বাজারের ঘাটে নোঙর করেছে। জুলাইয়ে আরো বেশি পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়বে বলে আশা করছেন তিনি। সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে ইলিশ আহরণের পরিমাণ বাড়বে বলে আশা করছেন বাগেরহাট কেবি বাজার মত্স্য আড়তদার সমিতির সভাপতি এসএম আবেদ আলীও।
কিন্তু খারাপ দিন যাচ্ছে সরকারি হিসাবে ৬২ হাজার জেলে ও বেসরকারি হিসাবে মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত লক্ষাধিক মানুষের। দিনভর নদীতে থেকেও ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে প্রায় শূন্য পড়ে রয়েছে জেলার ৩০টি মাছঘাট। অলস বসে থাকছে সরকারি ও ব্যক্তিমালিকানার বেশি কয়েকটি বরফকল।
জেলার সবচেয়ে বড় মাছঘাট কমলনগর উপজেলার মতিরহাট। এখানে ৪১টি বাক্সে প্রতি বছর প্রায় ১০ কোটি টাকার মাছ বেচাকেনা হয়। ওই ঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, আড়তদার ও দাদন ব্যবসায়ীরা খালি বাক্স নিয়ে বসে আছেন জেলেদের অপেক্ষায়। আবার জেলেরা শূন্য হাতে ফিরে এসে বিষণ্ন মুখে বসে থাকছেন। জেলা সদরের মজু চৌধুরীর হাট, কমলনগরের লধুয়া ঘাট, রায়পুরের মোল্লারহাট, রামগতি উপজেলার আলেকজান্ডার মাছঘাট, বড়খেরী ও চেয়ারম্যান ঘাটসহ বিভিন্ন হাট ঘুরে একই চিত্র দেখা গেছে।
সাহেবের হাট এলাকার জেলে মুক্তার মাঝি ও রতন জানান, একেকজন জেলে দাদন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে অগ্রিম এক-দেড় লাখ টাকা নিয়েছেন। মেঘনায় মাছ না পাওয়ায় হতাশায় দিন কাটছে তাদের। এখন দেনার টাকা কীভাবে শোধ করবেন, ভেবে কূল পাচ্ছেন না। মাছ না পেলে পরিবারও অভুক্ত থাকবে। অন্যদিকে আড়তদাররা ঢাকা-মুন্সীগঞ্জ, চাঁদপুর, মতলব, শরীয়তপুর, ঢায়মুড়িয়া, ইজলা, ভৈরব, কালীগঞ্জ, শ্রীপুর ও ভোলাসহ বিভিন্ন স্থানের জেলেদের অগ্রিম টাকা দিয়ে এখন বিপদে পড়েছেন। বিনিয়োগের আসল টাকা ফেরত পাওয়া নিয়েই অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
মতিরহাট মাছঘাটের সভাপতি মেহেদী হাসান লিটন বলেন, এ মাছঘাটে প্রতি বছর প্রায় ১০ কোটি টাকার ব্যবসা হয়। এবার ১ লাখ টাকার ব্যবসাও হচ্ছে না। সব ব্যবসায়ী বিনিয়োগ করে এখন মাথায় হাত দিয়ে আছেন।
ভরা মৌসুমে মাছ না পাওয়ার বিষয়ে লক্ষ্মীপুর জেলা মত্স্য কর্মকর্তা এসএম মহিব উল্যা বলেন, একদিকে ডুবো চরের কারণে নদীর গভীরতা কমে গেছে। অন্যদিকে এখনো পুরোপুরি মৌসুম শুরু হয়নি। অভয়াশ্রমের পর সব ইলিশ সমুদ্রের দিকে চলে গেছে। সে কারণে নদীতে মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। তবে আশা করছি, সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে নদীতে প্রচুর ইলিশ পাওয়া যাবে।