বন্যার পানি কমছে, দুর্ভোগ বাড়ছে

জিএস নিউজজিএস নিউজ
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ১২:০৬ পিএম, ০৮ জুলাই ২০১৮

জিএস ডেস্ক:>>>

রংপুরের গঙ্গাচড়া সদর ষাটর্দ আব্দুল হাকিম গত শুক্রবারে খবর পেয়ে তিস্তাতে বন্যার পানিতে তার মেয়েকে তলিয়ে গেছে। তারা খুব কষ্টে আছে গতকাল শনিবার সকালে তিনি মেয়েকে দেখতে পাঁচ কিলোমিটার পথ পাচ হেঁটে আসেন লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের ইচলি (এসকেএসের বাজার) এলাকায়।

সেখান থেকে আরও দুই কিলোমিটার পথ যেতে মেয়ের বাড়ী শংকরদহ গ্রামে কিন্তু পানির টর্ট সেতু ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় সেখানে বসা সান্ত্বনা ছাড়িয়ে তিনি। কথা প্রসঙ্গে আব্দুল হকিম বলেন, ‘শুনুন বন পানিত বিটি (মেয়ে) বাড়ী তল গেইচ। কষ্ট করে দেইকপার আসনু-তাওতো জববার পাওনা এই বুড়ো বয়সে মুই অ্যাল্লা ক্যামন কি জং। ‘

অনুসন্ধান করা হয়েছে, তিস্তা সড়কে সাঁতার কাটা হলেও তা পথ দিয়ে সরাতে শংকরদহ। বিকল্প চিন্তা করলে পার্শ্ববর্তী লালমনিরহাটের কালীগঞ্জে কমপক্ষে আরো পাঁচ কিলোমিটার পথ হাঁটতে হবে। যদিও তিনি অনেক জায়গায় বিচ্ছিন্ন সড়কে জল পার হয়ে যেতে হবে। শুক্রবার বন্যায়ও রংপুরের গঙ্গাচড়া চরাঞ্চলে রাস্তাঘাট ভাঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে গতকাল শনিবারে কোথাও যেতে এখানকার মানুষকে একমাত্র ভরসা করা কলার ভেলা।

রংপুরের তিস্তপাড়া বন্যার পানি কমতে শুরু করলেও চরম দুর্ভোগে পড়ে চরগ্রামের পরিবারগুলি। থকথকে কাঁদাপানিসহ প্রবল শর্টে অরবর্ভ হয়ে গেছেন ফিরতে পারছে না তারা তিস্তা পানি নেমে আসার সাথে সাথে বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন শুরু হ’ল আতঙ্কে লোকজন ঘোড়াবাড়ি অন্যত্র সরানো যায় প্রবল বর্ষণ ও উজান থেকে আসা পাহাড়ী ঢলে নদী বয়ে যাওয়া পাওয়ায় গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে তিস্তাপাড়ে বন্যা দেখা দেয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার উজান থেকে আসা ঢলে তিস্তা পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ঐ দিন রাতে ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা পানি বিপদসীমার (৫২ দশমিক ৬০) ১১ সেন্টিমিটার উপরে প্রবাহিত হয়। এর ভেতরে অঞ্চল রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলা ২৭ টি চরগরম প্রায় সাত হাজার পরিবার জলবন্দি হয়ে পড়ে।

এলাকার মধ্যে নোয়াখালী ইউনিয়নের ফটমারী, চর নাওলী, মনিরবাজার, চর বাগডোহরা ও নওল্লি সাপমারি এলাকায় এক হাজার 500 পরিবার, কলকোন্দ ইউনিয়নের চিল্যাখাল, মটুকপুর, বিবিবিনা ও সাউদপাড়া এলাকায় এক হাজার ৫০০ পরিবার, গঙ্গাচড়া সদর ইউনিয়নের ধামুর ও দোলা গেননা এলাকায় ৫০০ পরিবার, লক্ষ্মীটারী ইউনিয়ন শংকরদহ, পূর্ব ইচলী, জয়রামোঝা ও পশ্চিম ইচিলী এলাকায় দুই হাজার পরিবার, গাজঘন্টা ইউনিয়নের ছালা পাচ, রমাকান্ত, মহিষশুর, কালিচরণ চর ও রাজবল্লভ আঞ্চলিক  পরিবার, মর্নেয়া ইউনিয়ন মোল্লা, নিরপাড়া, চর মরেনায়া, আলাল চর, চর মাভশা, ৫০০ টি পরিবার এবং আলমবিবিদ ইউনিয়নের বংপাড়া, জুমমাপাড়া ও জেলপাড়ায় ৫০০ জন পরিবার জলবন্দি হয়ে পড়ে।

সরেজমিনে গতকাল শনিবার বন্যাকবলিত এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, তিস্তা বাঁধসহ উঁচু স্থানে আশ্রয় নেওয়া পরিবার এখনও তাদের বাড়িতে ফিরতে পারেনি। গতকাল সকাল থেকে পানি কমতে শুরু করলে চরের বাড়িগুলিতে আগারিনা থেকথকে কাঁদাপানি বারাজ করা হয়। রাস্তাঘাটে তলয়ে যাওয়ার কারণে চরকেল যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি এখনও হয়নি পাশের বাড়ীশহ হাটবাজারে ঘুরে বেড়ানোর একমাত্র ভরসা চর লোক

লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের শংকরদহ এলাকার মনসুর আলীর ঘরে হাঁটু পানি বারাজ করছে তিনি বলেন, ‘চুলা ধরার উপায় নেই। না খায়য় আর কতক্ষণ থাকো। ‘

পূর্ব ইচলি গ্রামের জোবদা বেগম ছেলেমেয়েদের সঙ্গে দুদিন ধরে নিরাপদ স্থানে অবস্থান করা। তিনি বলেন, ‘পানিতো কমছে-তায় বাড়িত যামু ক্যামনে! বান ইশিয়ার ঘড়ের ঝাঁটি-বেরা নড়বড়া কাইরাকে আল্লামা ভাল করতি টাকায় পাওও ক্যটে! ‘ হঠাৎ বন (বন্যা) আসায় ঘরের কোমর পানিতে বীরজ করায় পালিত হাঁস-মুরগি ও গরু-ছাগল নিয়ে আরও বিপদজনক বলে জানান তিনি।

হঠাৎ করে বন্যার পানি নেমে গেলেও গঙ্গাচড়ের বিভিন্ন এলাকায় তিস্তা ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করে। গত কয়েকদিনে আলমবিজ্ঞান ইউনিয়নের পাইকান, কলকোন্দ ইউনয়নের বিনিবিনা ও লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের ইচলি ও শংকরদহ এলাকায় ১৩০ পরিবার ঘর নদীগর্ভ বিলীন হয়েছে। গত শুক্রবার রাতে রংপুরের গঙ্গাচড়া ও লালমনিরহাটের কালীগঞ্জের মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী নবনির্মিত দ্বিতীয় তিস্তা সড়ক সেতুর ইচিলি এলাকায় একটি সেতু ভেঙে যায়, তবে গত দুই দিন ধরে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়েছে।

শুক্রবার সকালে নদীভাঙন ইচিলি এলাকায় আকলিমা, ওয়ারেইস আলী, মোজাহের আলী, আব্দুল বারেক, আবদুস সালাম, আনোয়ার হোসেন, আমিনুর রহমান, হযরত আলী, ওলিয়ার রহমানসহ বেশ কয়েকটি পরিবার পাকা বাড়িতে নদী বিলীন হয়ে গেছে। এ সময় পানির টলমল করা চোখে আকলিমা বলেছিলেন, ‘হামার সউগ শ্যাসে গায়ল বাহে। অ্যাল্লা হ্যামাক কাই দ্য জাগা (স্থান) আর কোনটা থামমো আল্লা জানে। ‘ এলাকার অনেকেই ভাঙন আতঙ্কে তাদের ঘরবাড়ি অন্যত্র সরানো যায়। ‘

লক্ষ্মীটারি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল হাদী বলছেন, তিস্তা চড়াইলে প্লাবিত হয়েছে কারণ ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আস ঢাল তার ইউনিয়নে অন্তত দুই হাজার পরিবার জলবন্দি হয়ে পড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পানি কমতে হলেও তাদের দুঃখ বাড়ছে। তিস্তা তীব্র ভাঙনে চোখের সামনে পাকা ঘরবাড়ি নদী বিলীন হচ্ছে চরম দুর্ভোগে পড়া গৃহহীন পরিবারগুলো। ‘

গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ এনামুল কবির বলেন, ‘দ্রুত সংখ্যাগরিষ্ঠ তালিকাভুক্ত জনসাধারণকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’ হঠাৎ আসা বন্যার পানি কমতে শুরু করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দ্বিতীয় তিস্তা সেতু সড়ক একটি সেতু ধসে যাওয়া ঘটনা নিশ্চিত করে তিনি বলেন, যে সড়ক যান চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। সেতুর ভাঙনপ্রেসি আপাতত বালুর বস্তা ঢালাই হচ্ছে

আপনার মতামত লিখুন :