ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে ৩৩ পদক্ষেপ

স্টাফ রিপোটার:>>>
প্রতি বছরই ঈদযাত্রায় কমবেশি ভন্ডন্টি পোহাতে হয় ঘুমানোর মানুষ পরিবহন সংকট, ভাঙচোড়া রাস্তা, রাস্তা দুর্ঘটনা এবং দীর্ঘ যানজট যেমন ঘটনা চলতে থাকে সড়ক মহাসড়কে। দুর্যোগ-ভোগন্তি কোনওভাবে যাত্রীদের পেছনের ছাড় নেই এ সংঘাতের কারণে ঈদ মাসুমে তোরাজোড়ও দেখা যায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। কিন্তু পরেও পরিস্থিতি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন না হয় অভিযোগকারী যাত্রীদের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রনালয় এই পদক্ষেপে ৩৩ টি পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য এই সময় সড়ক ঈদযাত্রা নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক হয়েছে। এই সিদ্ধান্তগুলি বাস্তবায়নের জন্য সকল ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এই মাসের শুরুতে এসংক্রান্ত একটি নির্দেশনা সম্পর্কিত সংস্থার কাছে পাঠানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আসন্ন ঈদুল আজহা কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত গ্রহণের মধ্যে রাস্তা মেরামত, টার্মিনালগুলি শৃঙ্খলা রক্ষা, দুর্ঘটনার পরে সড়কে যানজট নিয়ন্ত্রণ, সড়ক থেকে অবৈধ বাজার অপসারণ, বিকল্প রাস্তা ব্যবহার বা মহাসড়কের দুর্ঘটনা বন্ধ করা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনা, মহাসড়কে লকচ-ঝক্কড় গাড়ি চালক নিয়ন্ত্রণ এবং মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, যাতায়াত পার্কিং বন্ড করা, নসিমন-করণন, ইজিবাইক, থ্রি-হুইলার বন্ধ, টোল প্লাজার সব বুথ খোলা রাখা, সিএনজি স্টেশন চালু রাখা, যাত্রীদের জন্য বিআরটিসি বিশেষ সার্ভিস চালু, নৌরুট ফেরি সংখ্যা বৃদ্ধি, নির্দিষ্ট সময় বাস, ট্রাক, লরি ও কাভার্ড ভ্যান বন্ধ রাখা, বিভিন্ন দিন গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি বন্ধ এবং খোলা রাখা, বড় বড় দুর্ঘটনা মোকাবেলা হেলিকপ্টার ব্যবহার করা, অজৈব চা ক দিয়ে মহাসড়কে মোটরযান না চালানো, টয়লেটগুলো ব্যবহার উপযোগী রাখা, সড়কের পাশে পশুর হাট না ইজারা দেওয়া, কোরবানি পশু পরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করা, কোরবানি পশুর বর্জ্য সড়কের পাশে না ফেলা, ট্রাকে যাত্রী পরিবহন না করা ও কেন্দ্রীয় কন্ট্রোল রুম চালু করা।
কর্তৃপক্ষ বলছে, ঈদযাত্রায় ভাঙচোড়া সড়কের জন্য ঘনঘন লোকের কষ্ট ভোগ বিষয় মাথায় রেখেই ইইড অন্তত ১০ দিন আগে সহস্রোতাকর রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের কাজ মন্ত্রণালয় রাস্তা বিভাগ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন রাস্তা মেরামত কাজ চলছে।
ঈদের আগে ঘুমন্ত মানুষের ঈদযাত্রায় সড়ক-মহাসড়কে তীব্র যানজট তৈরি হয়। বিশেষ করে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা মানিকগঞ্জ-পটুয়াখালী-আরিচা, ঢাকা সিলেট, ঢাকা-মওয়া মহাসড়ক তীব্র যানজট দেখা দেয়। পাশাপাশি ফেরি ঘাটগুলিতেও যানবাহনের দীর্ঘ লাইন রয়েছে। ফেরি সংখ্যা বাড়ানো বিষয় নিরসন জন্য পুলিশ বিভাগীয় কমিশনার, হাইওয়ে রেঞ্জ ডিআইজি, র্যাব, জেলা প্রশাসক, রাস্তা এবং জনপথ অধিদফতর এবং পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় যুগ্মসচিব ড। মো। কামরুল আহসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঈদকেন্দ্রিক যানজট তৈরির আশঙ্কা থাকার কারণে আমরা সংশ্লিষ্টদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছি। তবে আমি মনে করি এই ই-এ কোন যানজট থাকবে না কারণ ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের ২৩ টি ব্রিজ উদ্বোধন করা হয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ের সংস্কার কাজ চলমান রয়েছে আমরা নির্দেশ দিয়েছি যাতে যানবাহন চলাচলে কোনো সমস্যা হয় না। ‘
ঈদের সময় পরিবহনগুলিতে অতিরিক্ত ভাড়া আদৌ প্রবণতা দেখা দেয়। এই অনিয়ম বন্ধ করার জন্য মহানগরীর তিনটি টার্মিনাল ভিজিলেন্স টিম গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই নির্দেশ পেয়ে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির পক্ষ থেকে মালিক ও শ্রমিকদের সমন্বয় করা হয়েছে চারটি টিম গঠন করা হয়েছে বলে বলা হয়েছে যে বাংলা ত্রিবিউনকে সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ। তিনি বলেন, বিআরটিএ এবং ডিএমপিও আলাদা টিম রয়েছে।
ঈদের যাত্রা কোনও দুর্ঘটনা ঘটতে পারে না তাৎক্ষণিক সৃষ্ট ট্র্যাজেডট দূর করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান কামরুল আহসান। তিনি বলেন, ‘অনভিজ্ঞ ড্রাইভার যাতে যানবাহন না চালানো সম্পর্কে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বড় ধরনের দুর্ঘটনা হেলিকপ্টার ব্যবহার করার জন্য বলা হয়েছে। এ ধরনের কোন পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে বাংলাদেশ বিমান, সেনাবাহিনী, র্যাব ও পুলিশ বাহিনীও দ্রুত ব্যবস্থা নেবে। এ ছাড়া নারীদের ব্যবহারের জন্য নারী ও শিশু ব্যবহার করার সময় সড়ক-মহাসড়কের আশপাশের টয়লেটগুলি ব্যবহার উপযোগী রাখার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ঈদের পূর্বে বিভিন্ন মহল সড়ক-মহাসড়কে অবৈধ স্থাপনা, ভাসমান বাজার ও কোরবানীর পশুর হাট বসায়। পাশাপাশি পাট, পাট, খড় ইত্যাদি বিভিন্ন জিনিসপত্র উচ্চ সড়কের পাশে শুকনো হয়। পাশাপাশি প্রাণী চালিত যানবাহনে চাঁদাবাজি ঘটনাও ঘটে। এই ধরনের কোন পরিস্থিতি দেখা হলে সঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহণ আইন প্রয়োগকারী সংস্থা নির্দেশ দেওয়া হয়।
এদিকে উচ্চ সড়কে যানজট এড়ানোর ছোট পরিবহনের জন্য বিকল্প সড়কও ব্যবহার করতে অনুরোধ করা হয়েছে। শুক্রবার এ সম্পর্কিত একটি গণবিজ্ঞান প্রকাশ করেছে বিআরটিএ। এখান থেকে ঢাকা থেকে উত্তরাঞ্চল যাওয়ার পথে যানজট দেখা হলে বিকল্প রাস্তা যেমন ঢাকা- ডামরাই- কালিয়াকৈর- টাঙ্গাইল; ঢাকা কালামপুর-ক্যালেলিপা-বালিয়া-ওয়ারশি- মির্জাপুর-টাঙ্গাইল এবং ঢাকা আরিচা ঘিওর- দৌলতপুর- নাগরপুর-টাঙ্গাইল রাস্তা ব্যবহার করে বলা হয়েছে। পাশাপাশি সিলেটের যাত্রীদেরও বিকল্প রুট ব্যবহার অনুরোধ করা হয়েছে।
এছাড়াও ঈদের যাত্রীদের বড় একটি অংশ গার্মেন্ট কর্মী। ঈদের ঠিক আগে মুহূর্তে বেশিরভাগ গার্মেন্টস এক সাথে বন্ধ ঘোষণা করা হবে এই মানুষ একসাথে বাড়িতে ফিরতে হয়। ফলে এ বছর কারখানার জন্য আলাদা সময় বন্ধ এবং খোলার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে BGMEE অনুরোধ করা হয়েছে।
যাত্রী সেবায় বিআরটিএর বিশেষ সার্ভিস চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সড়ক দুর্ঘটনা রোধে লক্কর-ঝক্কর কার, নৈশমণ- করণন, ভটভটি, ইজিবাইক, মাহিন্দ্র, থ্রি-হুইলারসহ ঝুঁকিপূর্ণ পরিবহন বন্ধ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ঈদের আগে তিনদিনে হাই সড়ক ট্রাক, কভার্ড ভ্যান, লরি ও এক্সেল লোড বন্ধ রাখা হয়েছে বলে বলা হয়েছে। পাশাপাশি ৪০ কিলোমিটার নীচের গতি সম্পন্ন গাড়ি কোনও জায়গায় মহাসড়কে চলাচল করতে না পরে সে নির্দেশ দেয়। সড়কগুলির টোল আদাতে যাতে যানবাহনের দীর্ঘ সারি না হয় তাই চালকদের আগে আগে নির্ধারিত পরিমাণ টাকা রাখা বলা হয়। এছাড়া ঈদের আগে চারদিন ও পরের চারদিন ২৪ ঘণ্টা সিএনজি স্টেশন চালু রাখা বলে।
এছাড়াও সড়কপথে যাতায়াত নিবিড়্ন করা সড়ক পরিবহন এবং সেতু মন্ত্রনালয় ‘কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ ঘর’ গঠন করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় সড়ক পরিবহন এবং মহাসড়ক বিভাগ, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ এবং সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এটি মনিটরিং করে। আগস্ট ১৮ আগস্ট থেকে ২৬ অগাস্ট পর্যন্ত সড়কপথের যানবাহন চলাচলসহ পুরো ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ ঘর থেকে মনিটরিং করা হবে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রনালয়ের সহকারী সচিব মো। লিয়াকত আলী খানের সাক্ষাত্কারে একটি অফিস আদেশে কমিটির গঠন করা হয়েছে।
জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন এবং সেতু মন্ত্রনালয় যুগ্মসচিব ড। মো। কামরুল আহসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা যাতায়াত নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক করার জন্য অনেকগুলি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। এর মধ্যে ফিটনেসবিহীন গাড়ি যাতে চলাচল করতে না পারে সে জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উপরন্তু আমাদের কড়া কড়ি কারণ পরিবহন এবং চালক সংকট তৈরি হতে পারে। বিষয় আমরা মাথায় রেখে কাজ করছি। ‘
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা বিজিএমইএর সঙ্গে বৈঠক করার জন্য যাতে তারা গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি এক সঙ্গে ছুটি না দেয় না। পৃথক পৃথক সময় ছুটি দিন আমাদের পরিবহন উপর এক চাপ পড়ে না গৃহীত সিদ্ধান্তগুলি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করার জন্য মালিক, শ্রমিকসহ সকলকে ক্যাম্পিংও করা। টোলপ্লাজায়েতে ভাড়্টিটি টাকার জন্য কোন ধরণের সমস্যা সৃষ্টি না হয় সে জন্য পরিবহন চালকরা সমমানের টাকায় আগাইয়া রাখার নির্দেশ দেয়।