তিন দিবসকে ঘিরে ফুল বিক্রির টার্গেট ২০০ কোটি টাকা

জিএস নিউজ ডেস্কজিএস নিউজ ডেস্ক
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ১২:৫৯ পিএম, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

পহেলা ফাল্গুন। ঋতুরাজ বসন্তবরণে তরুণ-তরুণীসহ নানা বয়সের মানুষ আনন্দে মেতে উঠবে। বাসন্তী রঙের শাড়ির সঙ্গে তরুণীরা সাজবে বাহারি রঙের ফুল দিয়ে। পরদিনই ১৪ ফেব্রুয়ারি।

ভালোবাসার বার্তা নিয়ে হাজির হবে ভ্যালেন্টাইন’স ডে বা বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। শুধু ফাগুন হাওয়ায় ভালোবাসায়ই নয়, আসছে ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। প্রতিবছর এ তিন দিবসে ফুল অন্যতম অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে বাঙালির জীবনে।

এ সময় ফুলের চাহিদা সারা বছরের চেয়ে বেশি থাকে। আর এ দিবসগুলো ঘিরে রমরমা হয়ে ওঠে ফুলের বাণিজ্য। এ সময় ফুলের ব্যবসার সবচেয়ে বড় সুযোগ বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা। মাঠপর্যায়ে চাষী থেকে শুরু করে পাইকারি ও খুচরা ফুলের বাজার এখন পুরোদমে প্রস্তুত।

বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আবদুর রহিম বলেন, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় দেশে ফুলের উৎপাদন ভালো হয়েছে। এ কারণে বসন্তবরণ, ভালোবাসা দিবস ও একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে কৃষক, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে দেশে মোট ২০০ কোটি টাকা বা তারও বেশি ফুল বাণিজ্য হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, এর মধ্যে মাঠপর্যায়ে যশোরের গদখালি ও সাভারের সাদুল্লাহপুর ইউনিয়নসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে এ দিবসগুলোকে কেন্দ্র করে প্রায় ৬০-৭০ কোটি টাকার ফুল বাণিজ্য হবে। বাকিটা রাজধানীর শাহাবাগ ফুলের বাজারসহ দেশের অন্যান্য স্থান পূরণ করবে।

কয়েক বছর আগেও দেশে ফুলের বাজারে হাতেগোনা কয়েক ধরনের ফুল পাওয়া যেত। বর্তমানে দেশে বাণিজ্যিকভাবে চাষ বেশি হওয়ায় এবং আমদানি করায় বাহারি রঙের ফুল পাওয়া যাচ্ছে।

এর মধ্যে জারবেরা, গ্লাডিওলাস, অর্কিড, কসমস, ডালিয়া, টিউলিপ, কালো গোলাপ, ঝুমকা লতা, গাজানিয়া, পামেরিয়া, চন্দ্রমল্লিকা অন্যতম। দামও হাতের নাগালে। কিন্তু এই বিশেষ দিনগুলোয় ফুলের চাহিদা বেশি থাকায় অতি মুনাফার লোভে বেশি দামে ফুল বিক্রি করেন বিক্রেতারা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, প্রতিনিয়ত দেশে ফুল উৎপাদন বাড়ছে। ২০১২-১৩ অর্থবছরে দেশে ২ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে ফুল উৎপাদন হয় ২৬৪ কোটি ৫ লাখ ৮৭ হাজার ২৪০টি। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এই পরিমাণ বেড়ে হয় ২৭৩ কোটি ৩৪ লাখ ৮ হাজার ৩৩১টি ফুল

২০১৪-১৫ অর্থবছরে উৎপাদন হয় ২৯৪ কোটি ১৪ হাজার ৭৭৬টি। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ২৯৮ কোটি ৩৪ লাখ ২০ হাজার ৭৬৮টি। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩০৬ কোটি ৯৫ লাখ ৫৫ হাজার ৮৩৩টি। আর ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২ হাজার ২৮০ হেক্টর জমিতে ফুল উৎপাদন হয় ৩২০ কোটি ৯০ লাখ ৭৪ হাজার ৬৬টি।

সাভারের সাদুল্লাহপুর ইউনিয়নের (গোলাপ গ্রাম) ফুলচাষী নাসির বলেন, বিশেষ করে এ তিন দিবসে ফুল বেশি বিক্রি হয়। ঢাকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকারি ও খুচরা ফুল ব্যবসায়ীরা সরাসরি বাগান থেকে ফুল নিয়ে যান।

যশোরের গদখালি ইউনিয়নের ফুলচাষী আনজু সরকার বলেন, ফেব্রুয়ারিতে ফুল বেশি বিক্রি হয়। এতে একটু লাভ বেশি হয়, যা বছরের অন্য সময় হয় না। আর এ সময় ফুলচাষীদের মনে আনন্দ থাকে।

যে দামে মাঠ থেকে আমরা ফুল বিক্রি করি, তা খুচরা বাজারে দুই থেকে তিনগুণ বেশিতে ক্রেতাদের কিনতে হয়। এতে লাভ যা করার খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতারা করে।

এদিকে সারা দেশের খুচরা বিক্রেতারা রাজধানীর শাহবাগ, ফার্মগেট ও আগারগাঁওয়ে অবস্থিত ফুলের পাইকারি মার্কেট থেকে ফুল কিনে থাকেন। রাজধানীর এসব বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অন্য দিনের চেয়ে শুক্রবার ও শনিবার বিক্রি অনেক বেশি হয়। প্রতিদিন শুধু রাজধানীর পাইকারি বাজারে প্রায় ৫০ লাখ টাকার ফুল কেনাবেচা হয়।

আর বিশেষ দিবস যেমন পহেলা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবসে ২০ থেকে ৩০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়। এছাড়া রাজধানীর শাহবাগে সবচেয়ে বড় ফুলের বাজার। এখানে ফুলের দোকান ১২০টি এবং খুচরা বিক্রেতা আছে শতাধিক। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এবারের ভালোবাসা দিবসে রাজধানী ঢাকায় যে কয়েক কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে তার সিংহভাগই হবে শাহবাগে।

সোমবার সরেজমিন শাহবাগের পাইকারি ও খুচরা ফুলের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন ধরনের ফুল দোকানে তুলেছেন। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানের স্থায়ী ও ভাসমান ফুল ব্যবসায়ীরা ভিড় করছেন শাহবাগের ফুলের দোকানে। ব্যবসায়ী ছাড়াও সাধারণ মানুষ ফুল কিনতে চলে এসেছেন। এর মধ্যে তরুণ-তরুণীদের উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি।

বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ও শাহবাগের অনন্যা পুষ্প বিতানের মালিক লোকমান হোসেন বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে রাজধানীর শাহবাগসহ অন্যান্য বাজারে ট্রাকভর্তি ফুল আসতে শুরু করেছে।

এরই মধ্যে তিন দিবসকে ঘিরে ফুল বেচাকেনাও জমে উঠেছে। এ বছর খুচরা ও মৌসুমি বিক্রেতারা আগেভাগে ফুল কিনতে এসেছেন। যার কারণে কিছুদিন আগে থেকে ফুলের ব্যবসা ভালো যাচ্ছে।

শাহবাগের ফুল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাইকারি বাজারে মান ভেদে একটি গোলাপ ৫ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। জারবেরা ১৫-২০ টাকা, গাডিওলাস ১০-১৮ টাকা ও রজনীগন্ধা ৬-৮ টাকা দরে বেচাকেনা হচ্ছে। এছাড়া ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে এক হাজার গাঁদাফুল।

তবে খুচরা বাজারে একই ফুল বিক্রি হচ্ছে প্রায় দ্বিগুণ দামে। খুচরা ফুল ব্যবসায়ীরা জানান, একটি গোলাপ ২৫ থেকে ৪০ টাকা, আর একটু বড় সাইজের গোলাপ ৫০-৮০ টাকা, জারবেরা ৩০ থেকে ৫০ টাকা, গাডিওলাস ২০ থেকে ৩৫ টাকা ও রজনীগন্ধা প্রতি স্টিক ১০-১৫ টাকা দরে বেচাকেনা হচ্ছে।

আর গাঁদা ফুলের মালা বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৮০ টাকা দরে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের ফুল দিয়ে সাজানো তোড়া বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে দুই হাজার টাকায়, যা অন্য সময়ের চেয়ে দাম একটু বেশি।

সেখানে মৌসুমি ফুল ব্যবসায়ী জামিল বলেন, ১৩ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে আগে থেকেই ফুল সংগ্রহের প্রস্তুতি নিয়েছি। কারণ ওইদিন ফুলের দাম আকাশছোঁয়া থাকে। বাজার ঘুরে দেখছি, দামে পছন্দ হলে ৩০-৪০ হাজার টাকার ফুল কিনব।

একই স্থানে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ডলি আক্তার বলেন, বসন্তবরণ ও ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে ফুল কিনতে এসেছি। সেদিন ফুলের দাম তুলনামূলকভাবে বেশি থাকে, যে কারণে আগে থেকেই ফুল সংরক্ষণ করছি। এবার ফুলের দাম একটু বেশি বলে মনে হচ্ছে।

আপনার মতামত লিখুন :