সন্ত্রাসীদের অর্থায়ন ও অস্ত্রের জোগান বন্ধে বৈশ্বিক উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

জিএস নিউজ ডেস্ক:>>>>
কঠোরভাবে জঙ্গিবাদ মোকাবিলা নিশ্চিত করতে সন্ত্রাসীদের অস্ত্র ও অর্থায়নের জোগান বন্ধে বৈশ্বিক উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমরা অবশ্যই সন্ত্রাসীদের হাতে অস্ত্র সরবরাহ ও অর্থের উৎস বন্ধ করতে চাই।’ একইসঙ্গে মুসলিম দেশগুলোর প্রতি মুসলিম উম্মাহর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি বন্ধ ও শান্তির নীতি অবলম্বনের জন্যে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সংলাপে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটি সবার জন্য বিজয়-বিজয় পরিস্থিতি তৈরি করবে।’
রবিবার (২১ মে) সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে কিং আবদুল আজিজ আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আরব-ইসলামিক-আমেরিকান (এআইএ) সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
সৌদি আরবের বাদশা ও প্রধান দুই মসজিদের খাদেম সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সউদ, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং আরব ও অন্যান্য মুসলিম দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরা সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন।
সম্মেলনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সন্ত্রাস ও চরমপন্থা কেবল বিশ্বের শান্তির জন্যই নয়, এটি উন্নয়ন ও মানব সভ্যতার জন্যও হুমকির কারণ। এটি কোনও দেশ, ধর্ম ও জনগণের কাছেই গ্রহণযোগ্য নয়। বাংলাদেশ সব ধরনের চরমপন্থার বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে এবং সবসময়ই যেকোনও ধরনের একক বা সম্মিলিত সন্ত্রাস ও উৎসের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে।’
ইসলামকে সন্ত্রাসী কাজে ব্যবহার না করার আহ্বান জানিয়ে বিশ্ব নেতাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সন্ত্রাসীদের কোনও ধর্ম, বিশ্বাস বা মৌলিক পরিচয় নেই। আর আমরা যেকোনও ধরনের চরমপন্থা ও সহিংসতায় ধর্মকে ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিচার্য মনে করি না।’
বাংলাদেশে সন্ত্রাস দমনে বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জঙ্গিবাদ দমনে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো প্রস্তুত এবং অস্ত্রসহ যথাযথ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। তারা দেশে গজিয়ে ওঠা সন্ত্রাসীদের কার্যকরভাবে মোকাবেলা করছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কার্যকরভাবে দেশে গজিয়ে ওঠা উগ্রবাদীদের মোকাবিলা করছি। বেশ কয়েকটি সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি সরকার এদের বিরুদ্ধে গণসচেতনতা সৃষ্টিতে ব্যাপক প্রচারাভিযান চালাচ্ছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে একটি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে তিনি ব্যক্তিগতভাবে সমাজের সব শ্রেণি, বিশেষ করে জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক, ছাত্র ও দেশব্যাপী বিভিন্ন মসজিদের ইমামদের সঙ্গে সভা ও মতবিনিময় করেছেন।’
ইরাক ও সিরিয়ার মতো যুদ্ধাবিধ্বস্ত দেশগুলো সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর অভিযান ও সদস্য সংগ্রহের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর যুক্তরাষ্ট্রের মার্শাল পরিকল্পনা অনুসরণ করে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলোর জন্য একটি পুনর্গঠন ও উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণের আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা আশঙ্কা করে বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী শরণার্থী সংকটের কারণে সন্ত্রাস ও সহিংসতা বেড়ে যেতে পারে। কারণ শরণার্থী সংকট সন্ত্রাস ও সহিংসতার একটি সম্ভাবনাময় উৎসে পরিণত হতে পারে। সমুদ্র সৈকতে পড়ে থাকা তিন বছরের শিশু আয়লানের লাশের ছবি অথবা আলেপ্পোতে ওমরানের রক্তাক্ত মরদেহ প্রতিটি মানুষের হৃদয়কে নাড়া দিয়েছে। একজন মা হিসেবে আমাকেও এ ছবি কঠিনভাবে নাড়া দিয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘শরণার্থীদের বেদনা আমি বুঝি। কারণ আমিও শরণার্থী ছিলাম।’ এ প্রসঙ্গে তিনি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় তার পরিবারের বন্দিত্ব এবং ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ পরিবারের অধিকাংশ সদস্যের হত্যাকাণ্ডের পর প্রবাস জীবনের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘১৯৮১ সাল পর্যন্ত ছয় বছর আমি ও আমার ছোট বোন বিদেশে শরণার্থী ছিলাম। তাই শরণার্থীদের বেদনার বাস্তবতা আমি বুঝতে পারি।’ এসময় ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বানও জানান প্রধানমন্ত্রী।
আরব-ইসলামিক-আমেরিকান শীর্ষ সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য সৌদি বাদশা সালমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা। পাশাপাশি রিয়াদে ইসলামিক কাউন্টার টেররিজম সেন্টার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়ার জন্য বাদশা সালমানকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হতে পেরে সন্তুষ্ট।’