লাইফ সাপোর্টে রেখেই অস্ত্রোপচার হলো নুসরাতের

MD Aminul IslamMD Aminul Islam
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ০৭:০৮ পিএম, ০৯ এপ্রিল ২০১৯

ফেনীর সোনাগাজীতে পরীক্ষাকেন্দ্রে দুর্বৃত্তদের দেয়া আগুনে দগ্ধ মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহানের অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়েছে। এখন তিনি শ্বাস প্রশ্বাস নিতে পারছেন বলে জানিয়েছে মেডিকেল বোর্ড।

মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) বেলা ১১ থেকে দেড় ঘণ্টা ধরে এই অস্ত্রোপচার  চলে। ডা. নাসির বলেন, গতকালই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, কিন্তু শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় অস্ত্রোপচার করতে পারিনি। সকালে সিংগাপুরের চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদেরও একই পরামর্শ ছিল। শরীরের কোনো অংশ পুড়ে গেলে চামড়া শক্ত হয়ে যায়। হাত পায়ে হলে এটি নড়ানো যায় না। বুকে হলে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। এই মেয়েটির যেন শ্বাস নিতে সুবিধা হয়, সেই জন্য অস্ত্রোপচার করা হলো।

তিনি বলেন, এখনো ওর অবস্থা আশঙ্কাজনক। মেয়েটির চিকিৎসার ব্যাপারে আমরা সিংগাপুরের হাসপাতালের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। তাদের সঙ্গে পরামর্শ করেই এখন তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

এর আগে সকালে সিংগাপুরের চিকিৎসকদের সঙ্গে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের চিকিৎসকদের ভিডিও কনফারেন্সে কথা হয়।  ভিডিও কনফারেন্স শেষে বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন  সাংবাদিকদের জানান, আগুনে ঝলছে যাওয়া মাদরাসা শিক্ষার্থীকে চিকিৎসার জন্য সিংগাপুরে নেওয়া যাচ্ছে না। মূলত শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করেই তাকে সেখানে পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না।

গত শনিবার সকাল ৯টার দিকে আলিম পর্যায়ের আরবি প্রথম পত্র পরীক্ষা দিতে সোনাগাজীর ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে যান ওই ছাত্রী। এরপর কৌশলে তাকে পাশের ভবনের ছাদে ডেকে নেওয়া হয়। সেখানে ৪/৫ জন বোরকা পরিহিত ব্যক্তি ওই ছাত্রীর শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে তার শরীরের ৮০ শতাংশ পুড়ে যায়।

পরে ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করে তার স্বজনরা প্রথমে সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে ফেনী সদর হাসপাতালে পাঠান। সেখান থেকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়।

রোববার তার চিকিৎসায় ৯ সদস্যের বোর্ড গঠন করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরীক্ষা কেন্দ্রে ছাত্রীর ওপর এমন নির্মমতায় উদ্বেগ প্রকাশ করে সার্বিক চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়ার কথা বলেছেন। পাশাপাশি জড়িতদের গ্রেফতারেরও নির্দেশ দিয়েছেন।

সোমবার নুসরাত জাহান রাফি ‘ডাইং ডিক্লারেশন’ (মৃত্যুশয্যায় দেওয়া বক্তব্য) দেন। নুসরাত তার বক্তব্যে বলেছেন, ওড়না দিয়ে হাত বেঁধে তার শরীরে আগুন দেওয়া হয়। আগুনে ওড়না পুড়ে গেলে তার হাত মুক্ত হয়। বোরকা, নেকাব ও হাতমোজা পরা যে চার নারী তার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেন, তাদের একজনের নাম সম্পা বলে জানান নুসরাত।

এর আগে গত ২৭ মার্চ ওই ছাত্রীকে নিজ কক্ষে নিয়ে শ্লীলতাহানির অভিযোগে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলাকে আটক করে পুলিশ। ওই ঘটনার পর থেকে তিনি কারাগারে। এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন।

ওই ছাত্রীর স্বজনরা বলেন, ‌২৭ মার্চ মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এস এম সিরাজ উদ দৌলা নুসরাতকে নিজের কক্ষে ডেকে নিয়ে শ্নীলতাহানি করেন। ওই ঘটনায় থানায় মামলা করেন তার মা। ওই মামলায় অধ্যক্ষ কারাগারে রয়েছেন। মামলা তুলে নিতে অধ্যক্ষের লোকজন হুমকি দিয়ে আসছিল বারবার।

তারা জানান, আলিম পরীক্ষা চললেও আতঙ্কে স্বজনরা পরীক্ষা কেন্দ্রের কক্ষ পর্যন্ত পৌঁছে দিতেন। মামলা তুলে না নেওয়াতেই ক্ষিপ্ত হয়ে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয় নুসরাতকে।

ছাত্রীর বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান সমকালকে বলেন, তার বোনের শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া পূর্বপরিকল্পিত। অন্যান্য দিন তিনি বোনকে কেন্দ্রের কক্ষ পর্যন্ত পৌঁছে দিলেও শনিবার তাকে কেন্দ্রেই ঢুকতে দেওয়া হয়নি। মাদ্রাসার নিরাপত্তাকর্মী মোস্তাফা বাধা দেন তাকে। এর আগে সকালে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক আফসার উদ্দীন ফোনে মামলা তুলে নিতে হুমকি দেন।

তিনি বলেন, এ ছাড়া নিয়মিত হুমকি তো ছিলই। এসব হুমকিতেও মামলা তুলে নিতে রাজি না হওয়ায় পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী তার বোনকে হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে।

জিএসনিউজ/এমএইচএম/এমএআই

আপনার মতামত লিখুন :