কেন্দ্রে শক্ত অবস্থানের পরিকল্পনা বিএনপির।কারচুপি হলে ফল প্রত্যাখ্যান, লাগাতার কর্মসূচি

MD Aminul IslamMD Aminul Islam
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ০১:২০ পিএম, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ>>>

নানা জল্পনা-কল্পনা ও দলীয় নেতাদের চাপ থাকলেও শেষ পর্যন্ত নির্বাচন বর্জন করছে না বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। ভোট গ্রহণ ও গণনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কেন্দ্রে ঐক্যবদ্ধভাবে ‘শক্ত অবস্থান’ ধরে রাখার পরিকল্পনা নিয়েছে তারা। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে কোনোভাবেই এবার ‘ফাঁকা মাঠে’ গোল করতে না দেওয়ার প্রতিজ্ঞা নিয়ে মাঠ আঁকড়ে রয়েছে ঐক্যফ্রন্ট।

২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনের মতো আর ‘ভুল’ না করে এবার সর্বশক্তি প্রয়োগ করবে বিএনপি। এ লক্ষ্য নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব থেকে একাদশ সংসদ নির্বাচনে জোটের প্রার্থী ও নেতাকর্মীদের এমন কঠোর বার্তা দেওয়া হচ্ছে। প্রায় এক যুগ ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি এবারের নির্বাচনকে ‘অস্তিত্ব রক্ষা’র লড়াই হিসেবে  নিয়েছে। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট হলে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় যাবে বলে আশা করছেন দলটির নেতারা। তবে ভোট কারচুপি ও কেন্দ্র দখলের ঘটনা ঘটলে ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে টানা কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করার পরিকল্পনাও রয়েছে দলীয় হাইকমান্ডের।

এদিকে, বিএনপির প্রার্থী ও নেতাদের একাংশ নির্বাচনে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তৈরি হয়নি অভিযোগ তুলে ভোট বর্জনের পক্ষে অবস্থান করছেন। তারা বলছেন, সরকারি দলের প্রার্থীরা একতরফাভাবে নির্বাচনী প্রচার চালিয়েছেন এবং নির্বাচনও হবে একচেটিয়া। এ ‘প্রতিকূল পরিবেশে’ নির্বাচনে থাকা মানে সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহায়তা করার শামিল।

অবশ্য বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল শুক্রবার সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচন বর্জন সমস্যার সমাধান নয়। সুষ্ঠু নির্বাচন আদায় করতেই হবে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনের অংশ হিসেবেই তারা দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। সংলাপে প্রধানমন্ত্রী অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যাপারে বারবার তার ওপর আস্থা রাখার অনুরোধ করেন। তবে ভোটের মাঠে সেই আশ্বাসের কোনো প্রতিফলন দেখছেন না। নির্বাচনে প্রার্থীসহ দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর হামলা-মামলা ও গ্রেফতার হয়েছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তৈরি করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে নির্বাচন কমিশন। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মতো আচরণ করছে। তারা আশা করেন, দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হলে তারা বিপুলসংখ্যক আসন নিয়ে বিজয়ী হবেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনের পরিবেশ দেখে দল ও জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবেন তারা।

সূত্র জানায়, ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের অনেকেই নির্বাচনী প্রচারে বাধার সম্মুখীন হওয়ায় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। গত কয়েকদিন ধরে দলের নীতিনির্ধারক নেতা ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির নেতাদের কাছে নির্বাচনী মাঠ থেকে প্রার্থীরা টেলিফোনে দলীয় সিদ্ধান্ত জানতে চান। প্রার্থীদের অনেকেই শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে থাকবেন কি-না- এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট নির্দেশনা চেয়েছিলেন।

তবে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের নীতিনির্ধারক ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির নেতারা শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে শক্ত অবস্থান নিতে প্রার্থীদের নির্দেশনা দিয়েছেন। সকাল থেকে দলের নেতাকর্মী ও ভোটারদের ব্যাপক হারে কেন্দ্রে উপস্থিতি নিশ্চিত করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রেখে ভোট গ্রহণ ও গণনা শেষ করে ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধভাবে কেন্দ্রে অবস্থানের নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। আবার কোথাও ভোটকেন্দ্র দখল ও নেতাকর্মীরা হামলার শিকার হলে সর্বশক্তি প্রয়োগ করে তা প্রতিহত করার আহ্বান জানিয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। কোথাও কারচুপি প্রতিহত করতে গিয়ে ক্ষমতাসীন দল ও প্রশাসনের সঙ্গে শক্তিতে পেরে না উঠলে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

বিএনপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির অন্যতম সদস্য ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু  বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কোনো সম্ভাবনা নেই। বিএনপির আশঙ্কাই সত্য হলো। দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল। এবারের নির্বাচনে প্রার্থীসহ দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর হামলা-মামলা দেখে তা আবারও সত্য বলেই প্রমাণিত হয়েছে।

বিএনপির একাধিক নেতা জানান, দলীয় সরকারের অধীনে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের সংস্কৃতি এখনও গড়ে ওঠেনি। তাই নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনে তারা অংশ নেননি। বিএনপির এই সিদ্ধান্ত দেশে-বিদেশে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে। খোদ দলের নেতাকর্মীরাও হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তকে ভুল বলে আঙুল তোলেন।

নেতারা আরও জানান, এ পরিস্থিতিতে দেশি-বিদেশি শুভাকাঙ্ক্ষীদের চাপে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ঐক্যফ্রন্টের সাত দফা দাবির একটিও পূরণ না হলেও নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন তারা। তবে নির্বাচনী মাঠের বর্তমান পরিস্থিতি দেখে সবাই বুঝতে পারছেন- কেন বিএনপি দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছিল। নির্বাচনে একতরফা প্রচারের পরও ভোটের মাঠে টিকে থেকে তারা দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়- তা প্রমাণ করতে চান। এ পরিস্থিতিতে ভোটে বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলেও মনে করেন নির্বাচন বর্জনের পক্ষের নেতারা।

আপনার মতামত লিখুন :