বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রতি খোলা চিঠি

MD Aminul IslamMD Aminul Islam
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ০৯:৪০ এএম, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮

আমিনুল ইসলাম রিয়াজঃ>>>>

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রিয় ভাই ও বোনেরা, বিজয়ের মাসের শুভেচ্ছা নিবেন।

খুব খুশী হতাম যদি আজকে আপনাদের প্রতি এই বার্তাটি শুধু শুভেচ্ছা আর কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ভেতর সীমাবদ্ধ রাখতে পারতাম, কিন্তু পরিস্থিতি বিবেচনায় দেশের অভিবাবক হিসেবে আপনাদের উদ্দেশ্যে কিছু অপ্রিয় সত্য উচ্চারনের মাধ্যমেই শুরু করতে হচ্ছে।

আপনারা ইতিমধ্যেই অবগত আছেন যে দেশের পরিস্থিতি আজ কোথায় গিয়ে দাড়িয়েছে। দেশের প্রত্যকটি আসনে বিরোধী দলের প্রার্থীরা সরকারী দলের ক্যাডার বাহীনির হাতে আক্রান্ত হচ্ছে।

নিরপেক্ষ কর্তৃপক্ষের বদলে দলীয় শাষনের প্রতি নতজানু একটি নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন করতে যাচ্ছে বলে সারা দেশের মানুষ আজ বিক্ষুদ্ধ। তারই ফলাফল হিসেবে দেখেছি শুধুমাত্র নির্বাচনের তফসিল ঘোষনার পর থেকে নির্বাচন কেন্দ্রিক সহিংসতায় পাঁচ শতাধিক বাংলাদেশীকে আহত হতে হয়েছে। ৪০ জনের ও বেশী প্রার্থীর উপর হত্যার উদ্দেশ্য নিয়ে হামলা করা হয়েছে । প্রতিটি হামলার সাথে সরকারী দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ এবং সাধারণ জনগনের ট্যাক্সের টাকায় বেতনভুক্ত পুলিশ বাহীনি সরাসরি জড়িত।

 

জাতিসংঘ ইতিমধ্যেই নির্বাচনে লেভেল প্লেইং ফিল্ড নেই উল্ল্যেখ করে সরকারকে হুশিয়ার করে দিয়েছে, আজ যদি আপনারা সেই নির্বাচনে লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরিতে সহায়তা না করেন তাহলে বিশ্বের সামনে আপনাদের চির উন্নত মম শির’টি কিভাবে উঁচু রাখবেন? জাতিসংঘ যদি পরিস্থিতি বিবেচনায় শান্তিরক্ষা মিশন থেকে বাংলাদেশের চৌকষ সেনাবাহিনীকে সরিয়ে দেয় তাহলে যেই আত্মসন্মান ও আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বেন সেটা কিভাবে মেনে নিবেন?

 

আমরা জানি দেশপ্রেমিক বাংলাদেশ আর্মি একদলীয় সরকারের নিরাপত্তা দেবার জন্য শপথ গ্রহন করেনি বরং বাংলাদেশে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই আপনারা তরুন বয়সে মৃত্যু’র মুখোমুখি দাড়িয়ে নিজেদের প্রস্তুত করেছেন, আজ বাংলাদেশ ছাড়িয়ে আফ্রিকা মহাদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় যখন আপনাদের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বজুড়ে সেই আপনারা কিভাবে মাতৃভূমে একটি সাংবিধানিক স্বৈরাচারী সরকার প্রতিষ্ঠায় সহায়তা দিবেন তা আমি ভাবতেও পারি না!

 

প্রিয় বাংলাদেশ আর্মি, আমরা জানি বাংলাদেশ আর্মি বিশ্বের বিরল সেই সামরিক বাহিনী যাদের জন্ম হয়েছে গণমানুষের ক্ষমতায়ন ও গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে সংঘটিত মুক্তিযুদ্ধের সময়, যুদ্ধের ময়দানে, জন্মলগ্ন থেকেই আপনারা এদেশের সাধারন মানুষের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাই বাংলাদেশে আপনারা অত্যন্ত সন্মানিত। আজ জাতি যখন গণতান্ত্রিক ভোটাধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আগামী ৩০ তারিখ ভোট দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে ঠিক তখনি সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় বিরোধী দলের উপর হামলা মামলা দিয়ে জনগনকে তাদের ভোটের অধিকার থেকে বিরত রাখতে নানা রকম কলাকৈৗশল অবলম্বন করে যাচ্ছে। দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে জনগন আপনাদেরকে শেষ আশ্রয়স্থল মনে করে । জনগন বিশ্বাস করে আপনারা আপনাদের নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে জনগনের পাশে দাঁড়াবেন এবং সকল দলের জন্য নির্বাচনে লেভেল প্লিড নিশ্চিত করবেন।

প্রিয় বাংলাদেশ সেনাবাহীনি , আমরা বিশ্বাস করি বাংলাদেশ সেনাবাহীনি অতিতের মতো বাংলাদেশের মানুষের পাশে দাঁড়াবে। আমরা বিশ্বাস করি বাংলাদেশ সেনাবাহীনি আগামী ৩০শে ডিসেম্বর ভোটারদের ভোট দেওয়ার অধিকার নিশ্চিত করবে এবং ভোট কেন্দ্র দখলবাজদের সকল অপচেষ্টা রুখে দিয়ে জনগনের সাংবিধানিক অধিকারকে প্রতিষ্ঠা করবে ।

অন্যথায় এই সরকারের আমলের শুরুতেই বাংলাদেশ আর্মির ৫৭জন অফিসারকে হারিয়ে পুরো জাতি’র বুকে যেই ব্যাথাটি লেগেছিল, আজকে যদি সেই সরকারের অন্যায় আবদার রক্ষায় জাতি’র মুখোমুখি হয়ে আপনারা যদি নির্বাচনে সকলদলের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করতে না পারেন তাহলে সেই ব্যাথাটি দ্বিগুন হবে। আর আপনাদের প্র্রত্যক্ষ উপস্থিতির পরও যদি একজন নাগরিক তার ভোটের অধিকার থেকে বঞ্ছিত হয় তাহলে মুক্তিকামী এই জাতি দারুনভাবে অপমানিত হবে, আপনাদের প্রতি সাধারন মানুষের আস্থা, বিশ্বাস ও সন্মানের জায়গাটি টলে যাবে। প্রতিবেশী রাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাকে জড়িয়ে যেসব অপমানজনক গুজব শোনা যায় সেগুলোকে মানুষ বিশ্বাস করা আরম্ভ করবে।

বাংলাদেশ আর্মিকে আমরা কোনদিন কোন রাজনৈতিক দলের অন্যায় আবদার পূরণকারী রূপে দেখিনি, বরং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্মলগ্ন থেকে বরাবর দেখেছি জনগণের পাশে দাড়িয়ে জনগণকে বাঁচাতে। গণতন্ত্র ও অধিকার আদায়ের লক্ষ্যপুরনে সাহায্য করতে।
স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ সংকটের এই মূহুর্তে আপনাদের উদ্দেশ্যে বলছি, দয়া করে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ঘৃণিত এই সরকারের অন্যায়ভাবে ক্ষমতা দখলের ইচ্ছাপুরণে সাহায্যকারী রূপে আবির্ভুত হবেন না, দেশের বহুরুপী শত্রু ও প্রকৃত মালিক জনগণের মাঝে ফারাক অনুধাবন করে বিবেক ও বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে অবস্থান গ্রহন করবেন, দেশের সর্বশেষ প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইনসাফ, গণতন্ত্র ও শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠায় জনগণের পাশেই থাকবেন এই অনুরোধ জানিয়ে শেষ করছি।
ভাল থাকবেন, সুখী ও সুস্থ্য থাকবেন
আপনাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক।

আপনার মতামত লিখুন :