জেনে নিন থানা পুলিশ মামলা না নিলে আপনার করনীয় ?

GS News 24GS News 24
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ১০:৫৭ এএম, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

স্টাফ রিপোর্টারঃ>>>>

ফৌজদারি মামলার কার্যক্রম শুরু হয় থানায় এজাহার দায়েরের মধ্য দিয়ে। অপরাধ সংঘঠনের পর বিচার প্রার্থীর প্রথম কাজ হলো থানায় গিয়ে মামলা দায়ের করা। আমলযোগ্য অপরাধ সংঘঠিত হওয়ার পর কোন নাগরিক থানায় মামলা করতে চাইলে নিয়ম অনুযায়ী পুলিশ মামলা রেকর্ড করতে অস্বীকার করতে পারেন না। পিআরবি এর ২৪৪(ক) নিয়ম অনুযায়ী, মিথ্যা বা সত্য হউক, মারাত্ত্বক বা নগণ্য , পেনাল কোড বা যেকোন বিশেষ আইন বা স্থানীয় আইন সম্পর্কিত হউক না কেন, পুলিশের নিকট প্রদত্ত প্রত্যেকটি আমলযোগ্য অপরাধ সম্পর্কিত এজাহার পাওয়ার পর ফৌজদারী কার্যবিধির ১৫৪ ধারার বিধান অনুসারে থানার অফিসার ইনচার্জ মামলা নিতে বাধ্য থাকেন। এরপর মামলা তদন্তের মাধ্যমে শুরু হয় মুল বিচার কাজ। কিন্তু আইনগত বিধি নিষেধের কারণে অনেক সময় পুলিশ মামলা নিতে অনাগ্রহ দেখাতে পারে। মামলা হিসেবে রেকর্ড করার কথা আইনে বলা হলেও সব মামলার তদন্ত হবে এমন কোন কথা নেই। কারণ ফৌজদারি কার্যবিধির ১৫৭ (১) (গ) ধারায় বলা হয়েছে যে, অফিসার ইনচার্জ এর নিকট যদি এটা প্রতীয়মান হয় যে, মামলাটির কোন ভিত্তি নেই, তাহলে তিনি মামলাটি আমলে নিবেন না। আবার পেনাল কোডের ২১১ ধারায় মিথ্যা মামলা দায়েরের পাল্টা ব্যবস্থা রাখার কারনে থানায় মামলা রেকর্ড করার সুবিধাটিকে cheque and balance করা হয়েছে। সেই সুযোগটি থানা পুলিশ গ্রহন করেন।পুলিশ মামলা নিতে না চাই আপনি ন্যায় বিচার হতে বঞ্চিত হয়েছেন এমন ভাবার কোন কারন নেই। কোন কারনে যদি থানায় পুলিশ মামলা না নিতে চায় সে ক্ষেত্রে সংক্ষুদ্ধ নাগরিক হিসাবে আপনার করনীয় বিষয়গুলি তুলে ধরা হলো।

পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ করুনঃ
থানায় কখনো মামলা নিতে না চাইলে বিচলিত হয়ে নিজেকে অসহায় ভাবার মত কোনো কারণ নেই। থানায় মামলা না নেয়ার বিষয়টি প্রমাণ করার জন্য থানায় কমপক্ষে দুইজন ব্যক্তি সাথে করে নিয়ে যান এবং থানায় প্রবেশ ও প্রস্থানের সময় উল্লেখ সহ কর্তব্যরত সেন্টি ও ডিউটি অফিসারের নাম ভালভাবে জানতে হবে এবং ১৮৬১ সালের পুলিশ আইনের ৪২ ধারা অনুসরণ করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সিটিজেন চার্টার অনুযায়ী যে কেউই এ রকম পরিস্থিতিতে সরাসরি সার্কেল এএসপি কিংবা পুলিশ সুপারের নিকট গিয়ে মামলা করার জন্য আইনের আশ্রয় প্রার্থনা করতে পারবেন। কোনো কারণে থানা পুলিশ যদি কখনো মামলা নিতে না চায়, তাহলে সরাসরি সংশ্লিষ্ট সার্কেল এএসপি কিংবা পুলিশ সুপারের সাথে সরাসরি দেখা করে লিখিত দরখাস্তের মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধের বিচার চেয়ে মামলা দায়ের করার জন্য অভিযোগ দায়ের করা যায়। পুলিশের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ সংঘটিত অপরাধ গুরুতর আমল-যোগ্য হলেও আপনার অভিযোগের প্রেক্ষিতে থানায় অফিসার ইনচার্জকে মামলার নেয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করতে পারেন

ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগ করুনঃ
কোনো কারণে পুলিশ যদি থানায় মামলা নিতে না চায়, তাহলে সেই নাগরিক একজন আইনজীবির পরামর্শক্রমে সরাসরি সংশ্লিষ্ট বিচারিক হাকিমের আদালতে নালিশি অভিযোগ দায়েরের মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধের বিচার চেয়ে মামলা দায়ের করতে পারবেন। এ প্রক্রিয়ায় মামলা করলে আদালত অভিযোগটি আমলে নিলে ম্যাজিস্ট্রেট পুলিশকে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিবেন অথবা আমলযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে অভিযোগটি এজাহার হিসেবে নিতে থানাকে নির্দেশ দিবেন।

মনে রাখা জরুরি যে, থানায় এজাহার রুজুর মাধ্যমে কিংবা ম্যাজিস্ট্রেট পুলিশকে অভিযোগটি এজাহার হিসেবে নেওয়ার আদেশ দিলে রাষ্ট্র তখন মামলার পক্ষ হয়ে পরবর্তী সময়ে মামলা পরিচালনা করবে। কিন্তু নালিশি মামলার ক্ষেত্রে কেউ অভিযোগ করে পরবর্তী শুনানির দিন যদি সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির না হয় বা ঘটনা তদন্ত শেষে যদি অভিযোগের সত্যতা প্রমাণ না হয়, তবে ম্যাজিস্ট্রেট মামলাটি খারিজ করে দিতে পারেন। অভিযোগকারী চাইলে এ ধরনের খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে দায়রা জজ আদালতে বা হাইকোর্ট বিভাগে ৬০ দিনের মধ্যে রিভিশন আবেদন করতে পারেন।

হাইকোর্টে অভিযোগ করুনঃ
থানা পুলিশ মামলা নিতে না চাইলে হাইকোর্টে রিট দায়ের করে প্রতিকার চাওয়া যেতে পারে। রিট আবেদনে ভিকটিম বা তার পরিবার থানায় মামলা দায়েরের অনুমতি প্রদান ও আসামিদের গ্রেফতারের আদেশ প্রার্থনা ও করতে পারেন। হাইকোর্ট বিভাগ রায় প্রদান করলে পুলিশ রায় মানতে বাধ্য।

বিধিবদ্ধ সংস্থায় অভিযোগ করা
থানা পুলিশ মামলা নিতে না চাইলে পুলিশ ছাড়াও প্রতিকার চাওয়ার অন্য মাধ্যম হলো জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। দরখাস্ত আকারে ঘটনার পূর্ণ বিবরণসহ লিখিত অভিযোগ জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নিকট দায়ের করতে হবে আপনাকে। ধর্ষন ব্যতীত অন্যান্য নারী নির্যাতন সংক্রান্তে বিষয়ে পুলিশ মামলা নিতে না চাইলে প্রতিকার পাওয়ার জন্য পুলিশের ওমান ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের অভিযোগ দায়ের করতে পারবেন। বিশেষ করে নারী নির্যাতন ও মানবিক বিষয়গুলো বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার কাছেও এ ধরনের অভিযোগ দেওয়া যায়। এরা এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে পারেন।

জনসচেতনায় কথা গুলো বলেছেন- মোঃ সাব্বির রহমান, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত), বাঞ্ছারামপুর মডেল থানা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।

আপনার মতামত লিখুন :