নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার নির্দেশের কথা স্বীকার করলেন সিরাজ

ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার নির্দেশনা দেওয়ার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা।
আজ রোববার বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম জাকির হোসেনের আদালতে ১৬৪ ধারায় সিরাজের জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়।
মামলার তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন- পিবিআইয়ের প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার বলেন, দ্বিতীয় দফায় রিমান্ডে নেওয়ার পর সিরাজ উদ দৌলা নিজের অপরাধের কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হন। তাই রবিবার তাকে আদালতে হাজির করা হলে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। সেখানে তিনি পুরো পরিকল্পনা, কাকে কীভাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তার বর্ণনা করেছেন। নিজের অপরাধের কথাও তিনি স্বীকার করে নিয়েছেন। ডিআইজি আরো বলেন, নুসরাত হত্যা মামলায় জড়িত ১৬ জনকে সুনির্দিষ্টভাবে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। আগামী মাসের মধ্যে চার্জশিট আদালতে দাখিল করা হবে।
আলোচিত এ মামলায় আদালতে নুসরাত হত্যার দায় স্বীকার করে এ পর্যন্ত নয়জন আসামি জবানবন্দি দিয়েছেন। এরা হচ্ছেন মামলার অন্যতম আসামি নুর উদ্দিন, শাহাদত হোসেন শামীম, আবদুর রহিম শরিফ, হাফেজ আবদুল কাদের, উম্মে সুলতানা পপি, কামরুন নাহার মনি, জাবেদ হোসেন ও জোবায়ের আহমেদ।
পিবিআই চট্টগ্রামের বিশেষ পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেন জানান, দুপুরে ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসেনের আদালতে অধ্যক্ষ সিরাজকে হাজির করা হয়। রাত ৮ টা ৫০ মিনিটে তাঁর জবানবন্দি রেকর্ড শেষ হয়। জবানবন্দিতে তিনি নুসরাতকে যৌন হয়রানির ঘটনায় দায়েরকৃত মামলা তুলে নিতে পরিবারকে হুমকি দিয়ে কাজ না হলে পুড়িয়ে হত্যা করে তা আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিতে কারাগারে দেখা করতে যাওয়া নুর উদ্দিন ও শাহাদাত হোসেন শামীমকে নির্দেশ দেন বলে স্বীকার করেছেন। সিরাজ উদ দৌলা এ হত্যার বিষয়ে আরো চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য দিয়েছে। কিন্তু মামলার তদন্তের স্বার্থে তা এখন বলা যাচ্ছে না।
এর আগে চলতি বছরের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়ের দায়ে ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলাকে আটক করে পুলিশ। পরে ৬ এপ্রিল ওই মাদ্রাসা কেন্দ্রের সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে অধ্যক্ষের সহযোগিরা তার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। টানা ৫ দিন হাসপাতালে থাকার পর মারা যায় নুসরাত জাহান রাফি।
এ ঘটনায় তার বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলাসহ ৮ জনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার এজহারভূক্ত ৮ আসামীসহ এখন পর্যন্ত ২১জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ও পিবিআই।
জিএসনিউজ/এমএইচএম/এমএআই