ফেনীতে ক্রেতার চাহিদায় সাজিয়ে তুলেছে মার্কেটগুলো

সাহিদা সাম্য লীনাসাহিদা সাম্য লীনা, কবি ও সাংবাদিক
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ১০:৪৭ এএম, ৩১ মে ২০১৯

ঈদের আর মাত্র এক সাপ্তাহ; ক্রেতাদের আগমনে মুখরিত ঈদ বাজার৷ এরি মধ্যে জমে উঠেছে ফেনীর সব শপিং মল ও মার্কেট৷ ঈদের কেনাকাটার প্রধান অনুষঙ্গ কাপড় চোপড়৷ ক্রেতাদের চাহিদা মাথায় রেখে বরাবরের মতো শপিং-মল গুলো নিত্য নতুন পোশাকে দোকানকে সাজিয়ে বসেছে৷ বিক্রেতারা জানায় এবার রমজানের শুরু থেকেই ক্রেতাদের কেনাকাটার আগ্রহ দেখা গেছে৷ শহীদ বিপনী বিতানে রাজকন্যা শোরুমে ক্যাটালগ ঝুলানো আনকমন জামাগুলো বিক্রি শেষ৷ যেগুলো আছে পুরাতন ডিজাইনের ও ক্রেতার পছন্দ ক্রমে তাই বিক্রি করছেন৷ হক টাওয়ারে মায়াবী কালেকশানেরও একি অবস্থা৷ তবে দাম হাঁকছেন অনেক একি মালিক দ্বারা পরিচালিত দুইটি মার্কেটের শোরুমে ৷ ক্রেতারা জৌলুস দেখে বেছে বেছে জামা ,শাড়ি ক্রয় করছেন ওখান হতে ৷ জিএমহাট থেকে আসা কোহিনুর বেগম জানালেন এখানে কাপড় চোপড় সুন্দর ৷ ভালো লাগে, পছন্দ হয় তাই কিনি৷ দাম বেশী হলেও ঈদ, কি করবো বলেন!
ঢাকার নিউমার্কেটের ফুটপাতে বেচা আজ থেকে ৮/৯ মাসের ওয়ান পিস জামাগুলো হক টাওয়ার, শহীদ বিপনী বিতান, এসি মার্কেট, জহিরিয়া টাওয়ারে এনে কাঁচের শোপিস ও হ্যাংন্কারে ঝুলিয়ে সাজিয়ে রেখে বিক্রি করছে৷ দাম রাখা হচ্ছে ৭০০-৮০০-৮৫০-৭৫০-৯৫০-১০০০-১৭৫০- ৷ ক্রেতা বুঝে ৷ দোকান ভেদে, মার্কেট ভেদে দাম একেকটা একেক রকম৷ ঢাকার নিউমার্কেটে এই ওয়ান পিস জামাগুলো যেখানে ৪০০-৫০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হয় ৷
মায়াবী কালেকশন পূর্বের চেহারায় ফিরে এসেছে৷ গত বছর মোবাইল কোর্ট অধিক দামে বিক্রয় ও ভারতীয় চোরাই মাল বিক্রির অপরাধে লক্ষাধিক টাকা জরিমানা সহ মালিককে জেল পর্যন্ত দেয়৷ ঈদ বাজার সামনে রেখে এবারো তারা গলাকাটা দাম রাখছেন ক্রেতাদের অভিযোগ৷ ১২০০/১৪০০ টাকার জামার দাম হাঁকায় ১৮০০/১৯০০/২০০০৷ আবার ১৬০০/১৮০০ এর জামা নিচ্ছে ২৭০০/২৮০০৷
এসি মার্কেট অনেকটা সহনশীলতায় থাকলেও ওয়ান পিস জামাগুলো এনে দোকান ভর্তি ৷ দামও চড়া, ১২০০ টাকার ওয়ান পিস কিনে সেলোয়ার বা প্লাজো মিলাতে হচ্ছে ৬০০/৭০০/৮০০টাকার ৷ এর পরে আছে ওড়না ৷ হঠাৎ করে সব ওয়ান পিস করার কারণ জানতে চাইলে বলে সুবিধা বিক্রয়ে ঝামেলা কম৷
ঢাকা থেকে এনে এখানে নিজেদের প্রাইজ ব্রান্ড ট্যাগ আটকিয়ে বলে একদাম করেছে সব দোকানে৷ ফলে ক্রেতারা দামাদামি করতে পারছেনা৷ কিছু ক্রেতা কিনতে এসে দাম দেখে ব্যাগে আনা বাজেট নিয়ে ভাবেন৷ বসে থাকেন দোকানে কিছু সময় পছন্দের জিনিস নিয়ে সামনে৷
কিছু দোকানে বলে ঢাকা থেকে আনার খরচ আছে৷
আর কিছু ক্রেতারাও মরিয়া৷ ক্যাটালগ দেখে আল্পুত৷ যেমন দাম বলুক, পছন্দ হলেই ২/৩টা নিচ্ছে ৷বেশীর ভাগ পরিবারের টাকার উৎস বিদেশ হতে৷ প্রবাসীদের কষ্টের টাকা পরিবারের সুখে যাচ্ছে, যে জামাটি আদৌ তার প্রয়োজন আছে কি নেই ভাবছেনা৷ কেউ এসে বলছে ওমুক সিরিয়ালের ওমুক নায়িকার পড়নে ওটা দেখেছে তাই নিচ্ছে ৷

এক তরুণী রিতা জানায় আমার সিরিয়াল আর নাটকে দেখা জামা কিনতে বেশ ভাল লাগে, আমার ভাই ঢাকা চাকরী করে,ওখান থেকেও ভাইয়া কিনছে, পছন্দ না হওয়ায় আবারো কিনছি, দেখা গেল ভাইটি বোনের আব্দার পূরণে ঘর্মাক্ত,ক্লান্ত৷ আপনি পরি মনির পরনে যে পোশাক দেখেছেন, সে তো নায়িকা৷এ জামা আপনার কী খুব দরকার? প্রশ্ন শুনেই মুখটা মুচকি হেসে আলতো চোখ টা ভ্রসহ উঠিয়ে আরেক পাশে চলে যায়৷ শাড়ির ক্ষেত্রেও একি অবস্থা ! যা তাদের নিত্য ব্যবহার্যে পড়তে পারবেনা তাও নিচ্ছে যে দাম হোক৷ বাড়ি কোথায়, ছাগলনাইয়ায়, কারো বারাহিপুর, কারো সিন্দুরপুর, নোয়াপুর, আপতাব বিবির হাট ,মোটবী নানান গ্রাম থেকে আগত নিবাসীরা৷
যে জামাটি হক টাওয়ারে বিক্রয় হচ্ছে ২৩০০ ,একি জামা এসি মার্কেটে নিচ্ছে ১৮০০ থেকে ১৯৫০ ! ছোটদের জামা,শার্ট, গেন্জী,পান্জাবীও দাম মার্কেট ও দোকান ভেদে বিভিন্ন ৷ জানতে চাইলে বলে, প্রতি দোকানদারের দাবি তাদের দোকানেই বেস্ট কালেকশন তাই এমন হবেই৷ হক টাওয়ারে আমব্রেলা নামক অত্যাধুনিক এসি শোরুমেরও পোশাক আশাকের দাম অত্যন্ত চড়া৷ গ্রাম থেকে আগত নিরিহরা চটকদার দোকানের এসির ঠান্ডায় ও সজ্জায় হতবিহ্বল৷ বুজতে পারেনা দোকানিদের মূল উদ্দেশ্য ও কোন পোশাকের কি দাম হতে পারে৷ জহিরিয়া টাওয়ারেও পোশাকের দাম অন্যান্য সময়ের চাইতে অনেক বেশী জানালেন এক শিক্ষক পরিবার৷
জুতার দামেও পরিবর্তন ৷ ৫০০ টাকার জুতা ১০০০, ৯৫০,৮৫০, ১৩০০,১৫০০ ৷ নরমালি জুতা ও শিশুদের জুতায়ও দোকানিরা একদামে ডাবল করে বিক্রয় করছেন৷
ফেনী ভিতরের বাজার নামে খ্যাত মার্কেটে চিরচেনা ভীড় ৷ কাঁচা বাজার হতে শুরু করে নিত্য ব্যবহার্য আইটেম , প্রসাধনী,জুতা, বিছানার চাদর কিনতে ক্রেতাদের ছুটোছুটি৷ নিন্মবিত্তদের এই মার্কেটে সবচেয়ে সহজে কেনার স্থান হলেও বর্তমান দামে তারাও দিশেহারা ৷ ছোট শিশু কোলে ঘর্মাক্ত বাবা রাস্তার পাশেই আলম মার্কেট থেকে ঝুলানো ফ্রকটা নেড়ে চেড়ে দেখছেন৷ সাধ্যের মধ্যে থাকলেই কিনছেন তারা৷ প্রশ্ন করে জানা গেল আর একটু সহজ হতো যদি দোকানিরা তাহলে আমাদের মতো মানুষদের সুবিধা হতো৷ ব্যবসায়ীরা জানালো, কী করবো আমাদেরও ব্যবসা করতে হবে, নইলে চলতে পারবনা, দোকান ভাড়া,বিল, কর্মচারীর বেতন আছে৷
জিএসনিউজ/এমএইচএম/এসএল

আপনার মতামত লিখুন :