সরকার চায় খালেদা জিয়ার কারাবাস দীর্ঘায়িত হোক

নিজস্ব সংবাদদাতা:>>>
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বেআইনিভাবে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দেওয়া রায়ের কপি (অনুলিপি) দিতে বিলম্ব করছে সরকার।
আজ শুক্রবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আইনজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে দলের মহাসচিব এ কথা বলেন।
ফখরুল বলেন, আইন অনুসারে ৫ কার্যদিবসের মধ্যে রায়ের কপি দেওয়ার কথা থাকলেও সরকার তা দিতে দেরি করছে। তারা চায় খালেদা জিয়ার কারাবাস দীর্ঘায়িত হোক। তাই সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে রায়ের কপি নিয়ে ধুম্রজাল সৃষ্টি করছে।
বিএনপি নেতা আরো বলেন, ‘সরকারের এ প্রচেষ্টা খালেদা জিয়াকে রাজনীতি ও নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। আমরা চাই আইন তার নিজস্ব গতিতে চলুক। নিয়ম ও আইন অনুসরণ করে যেন রায়ের কপি দেওয়া হয় আমরা তার দাবি জানাই।’
বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে, আইনজীবীদের সঙ্গে দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা খালেদা জিয়ার সাজা ও জামিনের বিষয়ে আলোচনা করেন। এ ছাড়া সমসাময়িক রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আগামী দিনের আন্দোলনের বিষয়ে মতবিনিময় করেন।
বৈঠকে মির্জা ফখরুল ছাড়া বিএনপি পক্ষ থেকে আরো উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
এ ছাড়া আইনজীবীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সানাউল্লাহ মিয়া, সাখাওয়াত হোসেন, মাহবুবুল আলম তালুকদার, ফাহিমা মুন্নি।
এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে গুলশানে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে পেশাজীবীদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপি সিনিয়র নেতারা। বৈঠকে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, খালেদা জিয়ার সাজার বিষয়ে আলোচনা হয়। পেশাজীবী নেতারা বিএনপি চেয়ারপারসনের মুক্তি এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে দলটির সঙ্গে আন্দোলনে সক্রিয় থাকার অভিমত ব্যক্ত করেন।
এর আগে বুধবার সন্ধ্যায় বুধবার সন্ধ্য ৬টা ৫০ মিনিটে ঢাকায় সফররত ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা। মঙ্গলবার বিকেলে গুলশানে খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিদেশি কূটনৈতিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন তারা। সেখানেও দলীয় চেয়ারপারসনের সাজা ও সমসাময়িক রাজনৈতিক বিষয়ে তাদের অবহিত করা হয়।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণা করেন বিশেষ আদালতের বিচারক ডা. মো. আখতারুজ্জামান। রায়ে তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন। এ ছাড়া বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ পাঁচ আসামিকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড এবং দুই কোটি ১০ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) কাজী সলিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমানকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এঁদের মধ্যে তারেক রহমান, কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান পলাতক।
রায়ের পর থেকে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা বলছেন, তারা রায়ের অনুলিপি হাতে পেলে জামিন আবেদন করবেন। এ ছাড়া আজ বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সরকারের নির্দেশে রায়ের সত্যায়িত কপি দেওয়া হচ্ছে না।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
২০১০ সালের ৫ আগস্ট আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের উপপরিচালক হারুন-আর রশিদ। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়।