কোরআন-হাদিসের আলোকে বিস্তারিত জেনে নিন যাকাত সম্পর্কে
অনলাইন ডেস্কঃ>>>
জাকাত আদায় করার অন্যতম লক্ষ ও উদ্দেশ্য হলো, আল্লাহর নির্দেশ পালনের মাধ্যমে তার সন্তুষ্টি লাভ করা। বিশেষত: সম্পদ ও সম্পদের মালিককে জাকাতের মাধ্যমে পবিত্র করা, বরকতময় করা, এবং আখেরাতে জাকাত আদায় না করার সাজা হতে মুক্তি লাভ করা। জাকাত আদায়ের মাধ্যমে জাকাত দাতা বা ধন সম্পদের মালিকের হৃদয় মন পবিত্র হয়ে যায়। বিদূরিত হয় তার কার্পণ্য স্বভাব।
যাকাতের হক্বদার প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘য়ালা বলেন:
“এ সদকা (জাকাত) তো ফকির-মিসকিনদের জন্য, যারা সদকার কাজে নিয়োজিত তাদের জন্য, যাদের মন জয় করা উদ্দেশ্য তাদের জন্য, দাসমুক্তির জন্য, ঋণগ্রস্থদের জন্যে, আল্লাহর পথে এবং মুসাফেরদের জন্যে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে ফরয বিধান এবং আল্লাহ সর্বজ্ঞ প্রজ্ঞাময়। (সূরা তাওবাহ-৬০)
আট শ্রেণির মানুষ যাকাতের উপযুক্ত:
১। ফকির: যাদের সামান্য সম্পদ আছে কিন্তু তা দিয়ে তাদের প্রয়োজন পূরণ হয় না।
২। মিসকিন: যারা নিঃস্ব, নিজের অন্নসংস্থানও করতে পারে না। অভাবের তাড়নায় অন্যের কাছে সাহায্য চাইতে বাধ্য হয়। কর্মক্ষম হওয়া সত্তে¡ও কাজের অভাবে বেকার থাকতে বাধ্য এবং মানবেতর জীবন যাপন করে, তারাও মিসকিনদের মধ্যে গণ্য।
৩। জাকাত ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী: ইসলামী রাষ্ট্রে যাকাত সংগ্রহ, বিতরণ, হিসাব সংরক্ষণ ইত্যাদি কাজ করার জন্য যাদের নিয়োগ দেয়া হবে তাদের বেতন-ভাতা যাকাত তহবিল থেকে দেয়া যাবে।
৪। মুআল্লাফাতুল কুলূব: অমুসলিমদেরকে আকৃষ্ট করার জন্য। এ খাতটি বর্তমানে কারো কারো মতে রহিত হয়ে গেছে।
৫। রিকাব বা মুক্তিপণ ধার্যকৃত দাস: ক্রীতদাস তার মালিকের সাথে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দানের বিনিময়ে মুক্তি লাভের সুযোগ সৃষ্টি করলে, জাকাত ফান্ড থেকে সে অর্থ দিয়ে দাস মুক্ত করা যাবে। অথবা যাকাতের অর্থ দিয়ে দাস ক্রয় করে তাকে মুক্ত করা যাবে।
৬। গারিমিন বা ঋণগ্রস্থদের ঋণ পরিশোধ করা: কেউ বৈধ কোনো কাজে ঋণ করে সে ঋণ শোধ করতে সক্ষম না হলে জাকাতের অর্থ দিয়ে তাকে ঋণমুক্ত করা যাবে। অপ্রত্যাশিত কোন দূর্ঘটনা বা কোন কারণে ব্যবসা নিঃস্ব হয়ে গেলে তাকেও জাকাত দেয়া যাবে।
৭। ফি সাবিলিল্লাহ আল্লাহর পথে যেমন: জিহাদে মুজাহিদীনদের জন্য ব্যয় ও জিহাদের উপকরণ-সামগ্রী ক্রয়ের জন্য জাকাত দেয়া যাবে।
৮। ইবনুস সাবিল বা পথিক: মুসাফির বা প্রবাসি লোক স্বদেশে সম্পদ থাকলেও প্রবাসে যদি রিক্ত হস্ত হয়ে পড়ে, তাহলে তাকেও জাকাত দেয়া যাবে।
যাকাত ফরয হওয়ার শর্তসমূহ:
১। মুসলমান হওয়া। ২। প্রাপ্ত বয়স্ক (বালেগ) হওয়া। ৩। সুস্থ মস্তিস্ক সম্পন্ন হওয়া। ৪। নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া। ৫। ঋণী না হওয়া। ৬। পূর্ণ স্বাধীন হওয়া। ৭। সম্পদ চন্দ্র মাসের হিসেবে এক বছর কাল স্থায়ী হওয়া। ৮। মালিকানা পরিপূর্ণ হওয়া।
যে সব সম্পদের উপর জাকাত ফরয:
১। ৭.৫ তোলা বা ৮৭.৪৫ গ্রাম স্বর্ণ অথবা ৫২.৫ তোলা বা ৬১২.৫৩ গ্রাম রৌপ্য অথবা তার সমপরিমাণ নগদ টাকা বা ব্যবসায়ী সম্পদ ১ বৎসর পর্যন্ত মালিকানায় থাকলে।
২। উট-গরু-ছাগল (উট কমপক্ষে ৫টি হলে, গরু ৩০টি হলে, ছাগল বা ভেড়া ৪০টি হলে জাকাত ফরয হয়)।
৩। উশরী জমিনে উৎপাদিত ফসল ও ফল। যেমন: গম, যব, ছোলা, চাল, ডাল, খেজুর, আঙ্গুর, যায়তুন ইত্যাদি। কম হোক বা বেশি হোক জাকাত দেয়া ওয়াজিব।
৪। ব্যবসায় নিয়োজিত অর্থ সম্পদ।
উল্লেখ্য যে, সম্পদের মূল্যের ২.৫% হিসেবে জাকাত দিতে হবে।
কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ সম্পদের জাকাত
গরু-মহিষের জাকাত: যে ব্যক্তি ৩০টি গরু-মহিষের মালিক হবে তার উপর জাকাত ফরয হবে। এর কম হলে জাকাত ফরজ হবে না। ৩০টি গরু-মহিষের জন্য গরু বা মহিষের এক বছর বয়সী একটি বাচ্চা দিতে হবে। ৪০টি গরু-মহিষ হলে, এমন দুই বছরের একটি বাচ্চা জাকাত দিতে হবে। ৬০টি গরু-মহিষ হলে, এক বছরের দুইটি বাচ্চা জাকাত দিতে হবে। ৬০ এরপর প্রত্যেক ৩০টি গরু-মহিষের জন্য একটি এক বছরের বাচ্চা এবং প্রত্যেক ৪০টি গরু-মহিষের জন্য একটি দুই বছরের বাচ্চা জাকাত দিতে হবে।
ছাগল বা ভেড়ার উপর জাকাত: ভেড়া/ছাগলের সংখ্যা ৪০ থেকে ১২০ পর্যন্ত হলে একটি, ২০০ পর্যন্ত হলে দুইটি, ৩০০ পর্যন্ত হলে তিনটি, ৪০০ পর্যন্ত হলে চারটি ভেড়া/ছাগল জাকাত দিতে হবে।
মাসআলা: ৪০০ এর পরের প্রতি ১০০ পূর্ণ হলে প্রতি শতের জন্য একটি ছাগল বা ভেড়া জাকাত দিতে হবে।



