৯ বছর পর আবার বাংলাদেশ?

স্পোর্টস ডেস্ক:>>>
বিদেশের মাটিতে পঞ্চম এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তৃতীয়বারের মতো সিরিজ জয়ের হাতছানি বাংলাদেশের সামনে। সেন্ট কিটসের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে জিতলেই সিরিজ নিশ্চিত হয়ে যাবে টাইগারদের। সেই লক্ষ্যেই বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় মাঠে নামছে মাশরাফিরা।
টেস্ট সিরিজের ব্যর্থতার পর গায়ানার প্রথম ওয়ানডে জিতে বাংলাদেশ ফেরে জয়ের পথে। ওখানেই নিশ্চিত হয়ে যেতে পারতো সিরিজ, কিন্তু শেষ ওভারের নাটকীয়তায় অপেক্ষা করতে হচ্ছে সেন্ট কিটসের শেষ ওয়ানডে পর্যন্ত। যে ম্যাচটি রূপ নিয়েছে এখন অলিখিত ফাইনালে। সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচটি সরাসরি দেখা যাবে বিটিভি, গাজী টিভি ও চ্যানেল নাইনে।
বলার অপেক্ষা রাখে না সেন্ট কিটসের ওয়ানডে জিততে কতটা মুখিয়ে আছে বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ দুই দলই। সফরকারীরা যেমন চাইবে গত ম্যাচের প্রতিশোধ পর্ব সেরে ৯ বছর পর আবারও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে ওয়ানডে সিরিজ জয়ের উল্লাস করতে, তেমনি স্বাগতিকদেরও লক্ষ্য থাকবে আগের ম্যাচের জয়ের আত্মবিশ্বাস কাজে লাগিয়ে টেস্ট সিরিজের মতো ওয়ানডেতেও রাজত্ব করা।
ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে মাত্র একবারই সিরিজ জেতার সুখস্মৃতি আছে বাংলাদেশের। হোক না দ্বিতীয় সারির ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল, তাতে কী! রেকর্ড বইয়ের পাতায় জ্বল জ্বল করছে ৩ ম্যাচের সিরিজে হোয়াইটওয়াশ ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ২০০৯ সালের ওই সাফল্যের পর ২০১৪ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়ে হতাশ হয়েই ফিরতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। তবে অতীত ইতিহাস একপাশে ঠেলে ৯ বছর পর আবারও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে সিরিজ জিততে মুখিয়ে আছে মাশরাফিরা।
সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে খানিকটা সুবিধাজনক জায়গাতেই থাকবে ক্যারিবিয়ানরা। গায়ানায় বাংলাদেশ পরিচিত স্লো উইকেট পেলেও সেন্ট কিটসে তা পাল্টে যাবে। তাছাড়া ব্যাটিং সহায়ক উইকেটের সঙ্গে মাঠের আকারও অনেক ছোট। ব্যাটিং সহায়ক পিচে ক্রিস গেইল, এভিন লুইস, শিমরন হেটমায়াররা কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারেন, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাছাড়া শেষ ম্যাচে দুর্দান্ত জয়ের পর ক্যারিবিয়ানরা মানসিকভাবেও অনেকটা এগিয়ে।
বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা কারণ হেটমায়ার। গোটা সিরিজেই বোলারদের কঠিন পরীক্ষা নিয়েছেন তিনি। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ব্যাট হাতে বলতে গেলে একাই লড়ে গেছেন এই তরুণ ব্যাটসম্যান। আজও ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিতে পারেন তিনি। তাই তাকে আটকানোই হবে মাশরাফিদের জন্য সবচেয়ে বড় পরীক্ষা।
২০১২ সালে সর্বশেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। দেশের মাটিতে হওয়া পাঁচ ম্যাচের সিরিজ ৩-২ ব্যবধানে জিতেছিল টাইগাররা। এরপর ২০১৪ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ ৩-০ ব্যবধানে হারতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। এবার ওই সফরের দুঃখ ভুলতে চায় বাংলাদেশ সিরিজ জয় উদযাপন করে।
তবে হেরে গেলে বড় ক্ষতির মুখে পড়বে বাংলাদেশ। তখন মোট ৬ রেটিং পয়েন্ট হারাবে সফরকারীরা। শেষ ম্যাচ জিতলে ১ পয়েন্ট পেয়ে মোট পয়েন্ট হবে ৯২। দ্বিতীয় ম্যাচ হেরে ইতিমধ্যে ৩ পয়েন্ট হারিয়েছে বাংলাদেশ।
সেন্ট কিটসের এই মাঠের পরিসংখ্যান অবশ্য দুই দলের পক্ষেই। এর আগে ওয়ার্নার পার্কে দুইবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলেছিল বাংলাদেশ। প্রথমবার ২০০৯ সালে, সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বে। ওই ম্যাচটি ৩ উইকেটে জিতেছিল বাংলাদেশ। সাকিব-মাহমুদউল্লাহ ছাড়াও ওই একাদশে ছিলেন তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম। ২০১৪ সালে দ্বিতীয়বার ক্যারিবীয়দের মুখোমুখি হয় টাইগাররা। সেবার মুশফিকরা পেয়েছিল ৯১ রানে হারের তিক্ততা।
দ্বিতীয় ওয়ানডেতে জেতা ম্যাচ হাত ফসকে বেরিয়ে যাওয়ায় কিছুটা ক্ষোভ থাকলেও সিরিজ জয়ের সুযোগ এখনও দেখছেন মাশরাফি। বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক বলেছেন, ‘আমাদের হাতে এখনও একটি সুযোগ আছে। আগের ম্যাচের ভুলত্রুটি শুধরে নামতে হবে। আশা করি শেষ ম্যাচে আমরা ঘুরে দাঁড়াব।’
সিরিজ নির্ধারণী গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের একাদশে ব্যাটিংয়ে একটি পরিবর্তন আসতে পারে। টিম ম্যানেজমেন্ট সুযোগ দিতে পারে লিটন দাসকে। সেটা হলে কপাল পুড়তে পারে সাব্বির রহমান কিংবা মোসাদ্দেক হোসেনের। লিটন প্রস্তুতি ম্যাচে ভালো করেছেন, তার আগে টেস্ট সিরিজেও কিছু রান পেয়েছেন।
তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা সিনিয়রদের সঙ্গে তরুণ ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্স মেলাতে না পারা। প্রথম ম্যাচে জয়ের পথে অবদান রাখেন তামিম, সাকিব ও মাশরাফি। শেষ সময়ে মুশফিকের ঝড়ো ইনিংসটাও দারুণ গুরুত্বপূর্ণ। হতাশার দ্বিতীয় ম্যাচেও তামিম, মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ জয়ের পথ তৈরি করলেও সাব্বির-মোসাদ্দেকের ব্যাট সাহায্য না করায় হার নিয়ে ছাড়তে হয় মাঠ। শেষ ম্যাচ তাই তরুণদের নিজেদের প্রমাণের মঞ্চ।
যে মঞ্চে জয় রচনা করে ২০০৯ সালের পর ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে আবারও বাংলাদেশের বিজয় কেতন ওড়াতে প্রস্তুত মাশরাফিরা।
বিনোদন, লাইফস্টাইল, তথ্যপ্রযুক্তি, ভ্রমণ, তারুণ্য, ক্যাম্পাস নিয়ে লিখতে পারেন আপনিও- gsnewsfeature@gmail.com