সাতক্ষীরার ৪ আসনের নৌকার প্রার্থীদের পক্ষে ভোট চাইলেন শাহারিয়ার কবির
শেখ আমিনুর হোসেন,সাতক্ষীরা ব্যুরো চীফ :>>>;
মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রাখতে আগামি নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে আবারো জয়ী করতে হবে। তা না হলে ২০০১ সালের পহেলা অক্টোবর পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সংখ্যালঘুদের উপর যে নির্যাতন হয়েছিল এবার তার মাত্রা কয়েকগুণ ছাড়িয়ে যাবে। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি আবারো দেশকে পাকিস্তান বানানোর চেষ্টা করবে।
মঙ্গলবার দুপুরে সাতক্ষীরা মুক্তিযোদ্ধা সংসদে অুনষ্ঠিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে শক্তিকে ভোট দেওয়া সম্পর্কিত এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির সভাপতি শাহারিয়ার কবির এসব কথা বলেন।
ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির সাতক্ষীরা জেলা শাখার আয়োজনে সভাপতি অধ্যক্ষ আশক-ই-এলাহীর সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্যে দেন সাতক্ষীরা -২ আসন থেকে নৌকা প্রতীকের ভোট প্রার্থী সাংসদ মীর মোস্তাক আহমেদ রবি, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মোঃ নজরল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবু আহম্মেদ, মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের সরদার, মুক্তিযোদ্ধা কমাণ্ডার মোশারফ হাসান মশু, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের সাতক্ষীরা জেলা শাখার সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য গোষ্ঠ বিহারী মণ্ডল, বাংলাদেশ মাইনরিটি হিউম্যান রাইটস মিডিয়া ডিফণ্ডার ফোরামের সভাপতি সাংবাদিক রঘুনাথ খাঁ, মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের সরদার, মানবাধিকার কর্মী পূর্ণিমা শীল, অধ্যাপক ইদ্রিস আলী, কলেজ শিক্ষক স.ম তুহিন, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাতক্ষীরা জেলা শাখার সম্পাদক জ্যোৎস্না দত্ত, জেলার মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জ্যোৎস্না আরা, অ্যাড. শাহানাজ পারভিন মিলি প্রমুখ।
প্রধান অতিথি ২০০১ সালে চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৩ সালের ২০জুন কালিগঞ্জের বিশ্বানাথপুর গ্রামের সরকার পরিবারের জমি জবরদখল করার সময় জামায়াত নেতা আব্দুল গফুরর নেতত্ব ওই পরিবারের এক গহবধুকে গণধর্ষণ, মন্দির ভাঙচুর, লুটপাটসহ নির্যাতনের করুন কাহিনী তুল ধরেন।
শাহারিয়ার কবীর বলেন, ২০০১ সালে নির্বাচন পরবর্তী খুলনার সাংবাদিক মানিক সাহা, হুমায়ুন কবীর বালু, হুমায়ুন আজাদসহ ১৬ জন সাংবাদিক ও কলামিষ্টকে হত্যা করেছিল মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি জামায়াত ও শিবির। তারা তো আর আওয়ামী লীগ করতেন না। স্বাধীনতা পরবর্তী ২৪ বছর স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি বাংলাদেশ শাষন ও শোসন করাটা দূঃখের বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা ও জেলখানায় জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করেছিল। হত্যাকারিদের প্রধান ছিলেন মেজর জিয়াউর রহমান। পরবর্তীতে এসব ঘটনায় আত্মস্বীকৃত কয়েকজনের বিচার হলেও আইএসআই এর প্রধান প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ও সিআই এর গুপ্তচরদের শাস্তি হয়নি। ২০০১ সালের নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার ১০ হাজার ঘটনায় ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছিল। এসব ঘটনায় সনাতন ধর্মর অনুসারী ধর্মীয় সংখ্যালঘু হওয়া ও নৌকায় ভোট দেওয়ার কারণে তাদের উপর নির্যাতন করা হয় বলে শ্বেতপত্র উল্লেখ করা হয়। সিরাজগঞ্জে পূর্ণিমাকে যেভাবে নির্যাতন করা হয়েছিল তা সংবাদ সম্মেলন করার সময় শুনতে পেয়ে বিবিসি’র নারী সাংবাদিক শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন। নির্যাতিতদের অনেকেই মামলা করতে পারেনি। আবার মামলা করলেও তুলে নিতে হয়েছে জামায়াত নেতাদের হুমকিতে।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি পরবর্তী সময় রামু, নাসিরনগর ও গোবিন্দগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুদের উপর হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাঠ হয়েছিল। হামলাকারি জামায়াত শিবিরের লোকজন আওয়ামী লীগের ঘাড়ে ভর করে এসব সহিংসতা করেছিল। জামায়াত ইসলামের সংবিধান শুধু মাত্র মুসলমান ছাড়া কোন হিন্দু সম্প্রদায়ের ব্যক্তি সদস্য হতে পারবে না। যেটা বাংলাদেশর সংবিধানর পরিপন্থী, যে কারণে তাদের সংবিধান বাতিল হয়ে নির্বাচন করতে পারছে না। আজ সেই জামায়াত বি,এন,পির ঐক্য ডাঃ কামাল হোসানের নেতৃত্বে দিচ্ছেন। ডাঃ কামাল হোসেন ধর্মনিরপক্ষতা শব্দটি সংবিধানে রেখে সংবিধান রচনা করেছিলেন। ২০০৪ সালের ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলায় আইভি রহমানসহ ২৪ জনকে হত্যা সম্পর্কিত কমিশনের সদস্য হিসেবে ড. কামাল হোসেন বলেছিলেন এ দায় বর্তমান সরকারের। অথচ সেই কামাল হোসেন বিএনপি জামায়াতের সমন্বয়ে গঠিত ঐক্যফ্রটের নেতৃত্ব দিয়ে নিজের ভাবমুর্তি নষ্ট করছেন। ১২ থেকে ৪৮ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোট আছে এমন ৯৬টি কেন্দ্র তারা ভোট পর্যবক্ষন করবেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশে ৫৮টি কেন্দ্র নির্বাচন পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সহিংসতা প্রতিরোধ ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটি বিশেষ কমিটি গঠণ করবে। এজন্য সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। শুধু সরকার নয় এলাকার মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে এজন্য কাজ করতে হবে। ২০০১ সাল ও ২০১৪ সাল নির্বাচন পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার হয়েছিল। আগামিতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না গেলে ওই অত্যাচার কয়েকগুণ বেড়ে যাবে বলে সকলকে সতর্ক করে তিনি বলেন, জামায়াত, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি ও হাইব্রীড আওয়ামী লীগদের আগামী সংসদীয় নির্বাচনে ভোট না দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানান শাহারিয়ার কবির। সহিংসতা প্রতিরোধ পাড়ায় পাড়ায় ও মহল্লায় মহল্লায় প্রতিরোধ কমিটি গড়ে তোলার উপর গুরত্ব দেন তিনি।
সমগ্র অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন সাতক্ষীরা নাগরিক আন্দোলন মঞ্চের আহবায়ক অ্যাড. ফাহিমুল হক কিসলু।



